Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আল মামুন সানি

৯ বছর আগে লিখেছেন

প্রিয় শহর!

ঢাকার প্রতিটি মোড়ের সিগন্যালে দশ মিনিট করে বসে থাকাটা এখন গা সওয়া হয়ে গ্যাছে। ভালই লাগে যখন দেখি হরেক রঙের শত শত প্রাইভেট কার আমাকে গার্ড অব অনার দিচ্ছে,নিরবে থমকে থেকে মাঝে মাঝে প্যা প্যু শব্দে মুখরিত করে ফেলে গোটা শহর। এই শব্দ গুলো সামনের প্রহরীদের জানান দেয় যে এখনি ছুটতে হবে আবার নতুন দশ মিনিটের অপেক্ষায়।
  জানালার পাশের সিটটা আমার বেশ পছন্দের,বড় রাস্তার পাশের ছোট্ট গলিটা একদম স্পষ্ট দেখা যায় এখান থেকে। অলিগলিতে লেগুনা আর রিক্সার খুচরো বাজারের পাইকারি সব গল্প বিনা টিকেটে উপভোগও করা যায়, রোজ এমন হাজারো ছোটবড় গল্পের সাক্ষী হয়ে থাকে কলম খাতা বিহীন আমার এই প্রিয় সিটটা।
  এইতো সেদিন ঢাকায় সান্ধ্যকালীন এক ভোজনের দাওয়াত পেয়ে খুব দ্রুত বাসে উঠে পরলাম, সিট নাই নাই করে কোনমতে একটা সিট পেলাম তাও আবার জানালার পাশের সিটটাই। পাশের ভদ্রলোক নিজ থেকে আমাকে বসার অনুরোধ করলেন,আমি আবার অনুরোধ একদমই ফেলতে পারি নাহ! কি আর করার চট করে বসেই বাতাসের উপাদান গুলোর সঙ্গে আলিঙ্গনটা সেরে নিলাম, আমার অনেক আগে থেকেই এমনটি মনে হয় যে বাতাসের তিব্রতা বোধহয় শুধু অপেক্ষায় থাকে কখন আমি জানালার ধারে বসবো আর ৬৫কিমি/বেগে ছুটে যাবো! মায়ের হাতের হাত পাখার বাতাসের মধ্যে যে একটা মিষ্টি ভালোবাসা অনুভব করা যায়, ঠিক ততটা না হলেও এই জানালার বাতাসটা চেষ্টা করে আমার অন্তরাত্মাকে ঐ প্রশান্তিটুকু দেয়ার জন্য। আর এই সমস্ত বাহানা বা যথাযুক্ত কারণই, আমাকে জানালা সংলগ্ন সিটটাকে আপন ভাবতে বাধ্য করেছে ।  সে যাই হোক, বাসটা ঢাকায় ঢোকার সাথে সাথেই আশপাশ থেকে সব কাক উধাও হয়ে গেলো, পরে অবশ্য জানতে পারি ওরা সব বটের ছায়াতলে জাল বুনতে গিয়েছিলো! ঢাকার সমস্ত কাক গুলোকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলো যে যুবক সে এক হাতি পালক কবি, তার নাকি ২৬ টা হাতি আছে তবে এই শহরের কেউ কখনো হাতি গুলোকে দেখেনি। তার কাজ শুধু বটের আশ্রয়ে থাকা আর কবিতা লেখা, খুব মজার বিষয় হচ্ছে সে প্রতিদিন এক কবিতাই লিখে—
                           “বটের ছায়ার আশ্রয়তলে,                              রাস্তার দু ধারের রিক্সার ঢং দেখছি!                              আর কবিতার জাল বুনছি_                              জালে ধরা দিল রঙিন জামার মেয়েটি!”  
  বাস থেকেই এইসব তথ্য উপাত্ত পেলাম আরকি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে হাতিপালক কবিটা ঐ কবিতার আরো কিছু লাইন খুঁজে বেড়ায় রোজ, পায়না বিধায় মেয়েটি পর্যন্তই আটকে আছে! আমার ধারনা ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি কেননা শহুরে কবিদের মতি গতি তারা ছাড়া অন্যদের নাকি বোঝা দায়। বড় আশা করে এই শহর নিয়ে চিন্তাগুলোকে জাগিয়েছিলাম, কিছু বদলায়নি, দশ মিনিটের সিগন্যালেই সব থেমে আছে! এখানকার বাতাসের সীসা আর উড়ন্ত ধুলা খুব ভালো লাগে আমার, ধীরে ধীরে শহরের গুরুত্বটা অক্সিজেনের সমপর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে। এটা আমার জন্য ভালো নাকি মন্দ তা জানিনা তবে আমি শেষমেশ ভোজনটা সম্পন্ন করে একটা ছোট্ট অঙ্ক কষে ফেললাম--- “আমি বুঝি তোমাকে,     চলক তুমি   গানিতিক ফাংশন;   তাই সূত্র ধরে চলি।”  

আমি অপেক্ষায় আছি আবার নতুন দশ মিনিট দেখবো বলে, সকালটা হলেই ছুটবো দিনের প্রথম বাসটি ধরার জন্য-- অতঃপর আমি, আমার প্রিয় সিট                                 এবং                         আমার প্রিয় শহর ।।
Likes Comments
০ Share

Comments (4)

  • - রব্বানী চৌধুরী

    ভালো লাগার শব্দ মালায় লেখা কবিতা খুব ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা জানবেন, ভালো থাকবেন।  

    • - কল্পদেহী সুমন

      emoticons