Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কাছের মানুষ

৯ বছর আগে লিখেছেন

লীলা খেলা

বাড়ির পাশের চাচাতো ভাইয়ের টং দোকানে বসে ধুমছে আড্ডা দেই তখন । সাধারণত হালকা বা ছোটখাটো কোন বিষয়ে আড্ডা দেওয়ার মত নাদান আমরা না, আমাদের আড্ডা বিষয় বস্তু খুবই উঁচুমানের এই যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙ্গে গেল, আমেরিকার আগ্রাসীনিতী অবসান কবে অথবা চীন বা ভারতের সুপার পাওয়ার হবার অন্তরায় কি কি । দোলনা থেকে কবরে এক পা দেওয়া বিভিন্ন বয়সী আড্ডা প্রিয়রা আড্ডা দিচ্ছি, আমাদের আড্ডার মধ্যমণি মধ্যবয়সী চাচাত ভাই , জ্ঞানী মানুষের মত তার মাথার মাঝখানটা ফকফকা সুবিশাল একটা টাক, কিছুক্ষণ পর-পর মাথার চারপাশ থেকে চুল টেনে তা ঢাকার চেষ্টা করেন । টাকের উপর আমার একটা ছোটখাটো গবেষণা আছে , সেটা এখানে শেয়ার করছি । সাধারণত দুই ধরনের টাক হয় আমাদের সমাজে, কারো কারো টাক দেখতে তেলতেলে , খুবই পিচ্ছিল, এই ধরনের টাক ওয়ালারা খুবই জ্ঞানী হয়। এদের সাধারণত মধ্যরাতে টকশোতে দেখা যায় । আরেক ধরনের টাক আছে দেখতে খসখসা ,মনে হয় বাটাল দিয়ে খুটিয়েছে । এই কিসিমের টাক সাধারণত চিন্তা ভাবনায় এবং অভাব অনটনে হয় । এরা সাধারণত আমজনতা, জ্ঞনের পরিধি আট-দশটা সাধারণ মানুষের মত । আমার চাচাতো ভাইয়ের টাকটা অদ্ভুত কারনে তেলতেলে এবং পিচ্ছিল । তিনি আমেরিকার আগ্রাসীনিতীর ঘোর বিরোধী, পারেতো ঝাঁঝালো ভাষায় আমেরিকাকে ভস্মীভূত করেন ।

সময়টা ছিল ২০০৫ এর মাঝামাঝি । চৈত্রের খরায় মাঠ ঘাট ফেটে চৈচির । ঐ দিকে আমরাও টং দোকানে বসে টক-শো করছি, ‘ দেশে এত প্রাকৃতিক সম্পদ থাকার পরও কেন দেশ আগাচ্ছে না ’ এই হল আমাদের টক-শো-এর বিষয় বস্তু । আণ্ডা বাচ্চা সবাই যার যার বক্তব্য পেশ করছে , চৈত্রের উওপ্ততা আমাদের টকশোতে ও ছড়িয়ে পরেছে ! হঠাত লক্ষ্য করলাম দোকানের পিছনের দিকে গোট-খোল গাছটা ভেঙ্গে পরে আছে । বেশ কয়েকদিন আগে ঝর বৃষ্টি হয়েছিল , হয়ত তখন ভেঙ্গেছিল গাছটা । অদ্ভুত কারনে গাছের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পানি ঝরছে , দুই একজন দারিয়ে দারিয়ে এটা অবলোকন করছে।

আরও কয়েকদিন কেটে গেল । চৈত্রের খরায় গাছ-পালা অঙ্গার অথচ গাছ দিয়ে এখনও পানি ঝরছে , এটা হতে পারে না। কথায় আছে ‘আ-কথা বাতাসের আগে ছড়ায়’ তবে গাছ দিয়ে পানি ঝরায় খবরটি বাতাসের আগে না বরং ঝরের আগে ছড়িয়ে পরল চারদিকে । এটা সাধারণ কোন গাছ নয় অসাধারণ গাছ । দলে দলে মানুষ দেখতে আসতে শুরু করল , সবারই এক প্রশ্ন – ‘এর রহস্যের কি?’ আমিও মজা পেয়ে গেলাম, গাছের পাশের দারিয়ে থাকতাম উৎসুক জনতার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অশেষ নেকি হাসিলের জন্য । এই ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত দার্শনিকের মত উত্তর দিতে হয়, আমি গাছের পাশে দারিয়ে থেকে দার্শনিকের মত উপরের দিকে নির্দেশ করে বলতাম “সবই লীলা খেলা” !

লীলা খেলা যাতে বন্ধ নয়া হয়ে যায় সেজন্য আমি সুযোগ বুঝে গাছে উঠে পানি ঢেলে আসতাম লোক চক্ষুর অন্তরালে । আমার চাচাত ভাই বলত দেখ ‘মানুষ কত বোকা’, আমি বলতাম ‘দেখি ব্যাপারটা কত দূর যায়, কিছু বইলেন না !’ এবার আর মানুষ শুধু দেখতে এসেই সন্তুষ্ট না, লোটা, খালি বোতল এবং মানত নিয়ে আসা শুরু করল । দূর দূরান্ত থেকে বোরকা পরে আসা শুরু করল । আমি যদি লাল কাপর মাথা বেধে গাছের পাশে বসে থাকতাম তবে নিশ্চিত সবাই আমাকে গাছ বাবা বানিয়ে দিত ।

এটা আমাদের দেশের একটা চিত্র, মানুষের এই কুসংস্কার বা অন্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই দেশে আনাচে কানাচে ভণ্ড বাবারা তাদের লীলা খেলা শুরু করেছে । আর মানুষও সচেতনেতার অভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে , গত বছর গভীর রাতে একজন ফোন দিয়ে বলল ‘আমি জ্বীনের বাদশা।’ আমিতো মহা খুশী, আমার মত মানুষের কাছে স্বয়ং জ্বীনের বাদশার ফোন! তবে এটা ছেঁচড়া বাদশা, টাকা চায় । আমি বললাম ‘হে জ্বীনের বাদশা, আপনি সালতানাতের শাহেনশা , টাকা পয়সার অভাব নাই, উল্টো আপনি আমাকে টাকা পয়সা দিয়ে লাল বানিয়ে দেন !’ জ্বীনের বাদশার আমার কথা পছন্দ হল না, তিনি আমার লাইনটা কেটে দিলেন । যাইহোক এখনও অনেক মানুষ আছেন, জ্বীনের বাদশার ফোন পেয়ে টাকা পাঠিয়ে দেন, দরকার সচেতনতার ।  সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে কুসংস্কার কমবে এতে যেমন আমরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হব তেমনি দেশ এইয়ে যাবে ।  
Likes Comments
০ Share