Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কাছের মানুষ

১০ বছর আগে লিখেছেন

মোরশেদের পেন্সিল (রসরচনা)

ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক, আজ মোরশেদের মনে বসন্ত ! মোরশেদ মোড়ের দোকানের টুলটাতে চিত হয়ে শুয়ে মিষ্টি মধুর গান গাইতেছিল সকালে ! মোরশেদ আইলসা কিছিমের লোক, কোন কাজ করতে বললেই চোখে মুখে চরম বিরক্তি নিয়ে বলে “খালি আমারেই চোখে দেখছ ! আর কাউরেই চোখে পরে না !” তবে সুন্দরী ললনারা যদি মোরশেদের কাছে কোন হেল্প চায়, তখন সে আগ বারিয়ে বলে “ম্যা হুনা !” 

এই যেমন আজ সকালে পাড়ায় নতুন একটা মেয়ে এসেছিল । মেয়েটার সাথে ভ্যান ভর্তি জিনিষ পত্র , একা নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল। দোকানে এসে বলল “ভাইয়া কেউ কি আমাকে হেল্প করবেন, এই জিনিষ পত্র সহ আমার বাসায় পৌঁছে দিতে ?” আমরা কয়েকজন বন্ধু সাহায্য করবার জন্য এগিয়ে যেতে চাইলে আমাদের আটকিয়ে দিয়ে দরদি মোরশেদ বলে উঠল “হে নালায়েকের দল ! আমি বেচে থাকতে তোদের সাহায্যের দরকার নাই। আসুন আপু আমি একাই আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।  ” মোরশেদ সব মেয়েকেই প্রথমে আপু বলে সম্মধন করে, ওর উদ্দেশ্য হল “আপু হয়ে ঢুকবে প্রেমিক হয়ে বেরোবে”! 

মেয়েটার জিনিষ পত্র ঘারে নিয়ে মোরশেদ রওনা দেবার সময় চুপিচুপি বলল “এমন প্রেমের ফাঁদ ফেলব , দেখবি মেয়েটা আমার প্রেমে হাবু ডুবু খাবে ! মোরশেদের ফেদ থেকে বাচনা মুশকিলই নেহি নামুমকিন হে ! ” 

***

মোরশেদ সেই সকালে গেছে মেয়েটাকে পৌঁছে দিতে কিন্তু এখনও কোন খবর নাই! অনেকক্ষণ ধরে ওর জন্য অপেক্ষা করছি , কোন বিপদ হয়-নিতো ? 

“দোস্ত আমি শেষ , আমারে ধর ! অন্তর পুইরা আমার তামা তামা !” কিছুটা উদাস হয়ে পিছন থেকে বলে উঠল মোরশেদ । 

পিছনে তাকিয়ে মোরশেদকে দেখে আমি চমকে উঠলাম । আমি বললাম “কি ব্যাপার দোস্ত, কি হইছে ? সকালে তোরে তরতাজা দেখলাম । মেয়ে-টাকি তোর ফাঁদে পা দিছে ?” 

“মেয়েটা বিবাহিত শুনেই আমি আহত হইসি! শুধু তাই না তিন বাচ্চার মা , হালায় আমারে দিয়া ঘরের সব কাজ করাইয়া শেষে ওর হাসবেন্ডের সাথে বড় ভাই বলে পরিচয় করায়া দিছে ! আমি নাকি ওর ধর্মের ভাই” বলেই মোরশেদ ঢুকরে কেধে উঠল। 

***** 

আমি আর মোরশেদ একই ক্লাসে পড়ি । একদিন সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি মোরশেদ একটা ক্লাসের জানালা দিয়ে উঁকিযুকি মারছে ! মোরশেদের কোন ক্লাসে বেশী উঁকিযুকি মারার মানেই হচ্ছে ওর কোন মেয়ের জন্য উতলা হয়ে যাওয়া! আমি পিছন থেকে বললাম “কি ব্যাপার, কি দেখছ এরকম করে?” থতমত খেয়ে মোরশেদ বলল “কিছু না, এইতো আমাদের স্কুলে নতুন একটা মেয়ে এসেছে, নাম কারিনা কাপুর । কারিনারে দেখলেই বুকের ভিতর চিন-চিনাইয়া ব্যথা করে !” কিছুটা লাজুক ভঙ্গিতে বলল মোরশেদ ! মোরশেদ আজ মাঞ্জা মেরে এসেছে, হাতে একটা পেনসিল, আরেক হাতে ড্রয়িং এর খাতা । মোরশেদ কিছুদিন যাবত নিয়মিত ড্রয়িং করে নিয়ে আসে ক্লাসে, এতদিন বুঝতে পারি নাই কোন বনে কোন বাঘ ! কারিনা কাপুরও এই ক্লাসটা আমাদের সাথে করে তাই মোরশেদ আজকাল এত বেশী মনযোগী ! 

পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বলল ভাইয়া আপনার ড্রয়িংটা-তো অনেক সুন্দর হয়েছে ! শেখানো যাবে ? মেয়েটা দেখতে টেপা, বাট্টু কিসিমের তার উপর বোটকা গোল আলুর মত অনেকটা ! মোরশেদ সুন্দরী মেয়েদের প্রতি যতটা দাতা হাতেম তাই সাজে , অসুন্দর মেয়েদের প্রতি ততটাই নির্দয় ! মোরশেদ মেয়েটাকে শেখাতে হবে ভেবে পেন্সিলটা আমার বুক পকেটে যত্ন করে গুজে দিয়ে বলল “এই ড্রয়িং আমি করি নাই, ও করছে ! যাহ দোস্ত ড্রয়িংটা একটু শিখাইয়া দিয়ে আয়,তোর ড্রয়িং এর হাত ভাল!!” বলেই হে হে করে অট্ট হাসি দিল মোরশেদ ! 

মেয়েটা হেসে বলল “আমার জন্য না, পিছনে কারিনা কাপুরকে দেখিয়ে বলল ওকে শেখাতে হবে ।” আমি পারিতো খুশীতে মোরশেদকে ঠাসায়া একটা চুমা লাগাইয়া দেই, মুচকি হেসে মোরশেদের করা ড্রয়িংটা নিজের হাতে নিয়ে বললাম “সারারাত জেগে অনেক কষ্ট করে ড্রয়িং করেছি । চল শিখিয়ে দিয়ে আসি !” মোরশেদ কইতেও পারে না আবার সইতেও পারে না , দুখী দুখী ভাবে আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ! 

*** 

আরেক দিন রাতে এক বিয়ে বাড়ীর গায়ে হলুদে গিয়েছি, যথারীতি মোরশেদ সাথে ! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সাধারণত মেয়েরা হলুদ কাপর পরে, চেহারায় এক দের মণ পাউডারের আস্তর মেরে সাজুগুজু করে আসে ! টাংকি মারার জন্য আমরাও প্রস্তুত ! পাশের এলাকার সুমির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পকেটে থাকা পেন্সিলটা ছুড়ে মারি ওর মাথায় ! কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন, পেন্সিলটা গিয়ে লাগে সুমির খাতার-নাক বড় বোনের গালে ! এ এক এলাহি কান্ড, পেন্সিলটা হাতে নিয়ে ওর বড় বোন আমাদের দিকে আসছিল ! “এই পেন্সিলটা কার ?” বলল সুমির বোন । 

আমি ভয়ে চুপসে গেছি, যে খাতার-নাক লারকি, আমি পেন্সিল মারছি জানলে আমাকে তামা তামা করে ছাড়বে ! মোরশেদ পেন্সিল ছুড়ে মারার কাহিনীটা বুঝে নাই, ও ভাবল এর আগে একদিন পেন্সিলটা আমার বুক পকেটে গেঁথে দিয়ে কারিনা কাপুরের সাথে ডেটিংটা মিস হয়েছে ! এবার আর সেই ভুল করবে না, মোরশেদ ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে বলল “এই পেন্সিল আমার, আমি ভাল ড্রয়িং পারি ”! কথাটা বলতে দেরি মোরশেদের উপর ঝাপিয়ে পরে রামদোলাই করতে দেরি নাই ! (শেষ)  
Likes ১০ Comments
০ Share