Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কাছের মানুষ

১০ বছর আগে লিখেছেন

আপনাকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে (ভৌতিক গল্প)

এই জগতে সূর্যের কোন অস্তিত্ব নেই আছে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার আর সুনসান নীরবতা । শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলায় অনাদরে পরে থাকা ষ্টেশনটার যাত্রী ছাওনির নিচে একটা টুল রাখা আছে । টুলটার দুই দ্বারে দুইটা সোডিয়াম লাইট জ্বলছে । কিছুক্ষণ আগেই আকাশ ঝেঁকে বৃষ্টি নেমেছিল । হিম শীতল বাতাসে কেমন জানি একটা মিষ্টি গন্ধ মিশে আছে ! হেলেন টুলটাতে একা বসে আছে । অজানার উদ্দেশ্যে হারিয়ে যাবার অপেক্ষা , এটা যে কতটা ভয়ানক তা এই মূহুত্যে ওর থেকে ভাল কেইবা বলতে পারবে । কতই বা বয়স ওর , বড়জোর উনিশ বা বিশ ! সব কিছুই কেমন জানি তাড়াতাড়ি ঘটে গেল ! হেলেনের প্রচণ্ড ভয়ে কান্না পাচ্ছে । “ঘটনাটা কিভাবে ঘটল?” পিছন থেকে কেউ একজন প্রশ্ন করল । হেলেন চমকে পিছনে তাকাল, তার চোখে মুখে রাজ্যের ভয়। শরীর দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেল ।

“কে ?”

“আমি এলেক্স , আপনার মতই একজন ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি । বললেন না ঘটনাটা কিভাবে ঘটল! এখানে সাধারণত কম বয়সীরা তেমন আসে না! ” বলল লোকটি ।

“গাড়ি এক্সিডেন্ট । তারপর আর কিছু মনে নেই । আপনি এলেন কিভাবে ?”

“বাদ দেনতো । ভাল লাগছে না বলতে ! তারপর বিয়ে থা করেছেন? ”

লোকটির প্রশ্ন শুনে হেলেনে যেন ধাক্কা খেল ! এই রকম পরিস্থিতিতে কেউ কি বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করতে পারে ! লোকটার কমন সেন্স বলতে কিছুই নেই ! রাগে চুপ করে রইল হেলেন ।

“আমার প্রশ্ন শুনে কি মাইন্ড করলেন ! আসলে ভয় বা চিন্তা করেই বা কি হবে বলেন ! কপালে যা আছে তাই হবে , ট্রেন আসলে চলে যাব , যা হবার পরে দেখা যাবে ! কি বলেন?”

“আপনি মনে হয় খুব ফুর্তিতে আছেন ! কোন কথা বলবেন না আমার সাথে । ” কিছুটা রেগে বলল হেলেন ।

“আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন ? টেইক এই ইসিলি! আমরা কিই বা করতে পারি এখানে ! আমাদের কোন কিছুতেই হাত নেই । ”

হেলেন এবার চোখ গরম করে তাকাল এলেক্সের দিকে । এলেক্স কিছু বলতে গিয়েও ভয়ে কিছু বলল না !

***

এলেক্স একটা মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করত । জীবনে কি সুন্দর একটা স্বপনই না ছিল তার । সব কিছুই কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেল । বাবা নেই, মার চেহারাটা আর দেখা হবে না তার, ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন জানি ধক করে উঠল । মার সাথে বিয়ের কনে দেখতে যাবার কথা ছিল আজ । তাই অফিস শেষে তাড়াতাড়ি বের হয়েছিল । বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যায় সর্বনাশা কারটা রাস্তা মনে করে ওর ওপর দিয়ে উঠিয়ে দিল । তারপর সব শেষ । আচ্ছা ওর মা এখন কি করছে ? নিশ্চয়ই এতক্ষণ ব্যাপারটা তার কানে পৌঁছে গেছে । এলেক্স একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল ।

“ আচ্ছা আমাদের এখন কি হবে ? ” বলল হেলেন ।

“জানি না ! ভয় লাগছে ?”

“হুম ! জানেন আমি বাবা-মার একমাত্র মেয়ে । যখন যা চাইতাম তাই তারা দিতেন । আমার জন্য তারা অনেক করেছেন । তাদের জন্য অনেক কষ্ট হচ্ছে , কেমন জানি ভয় লাগছে আমার । এই জগতটা এত নীরব কেন? আমাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে ! ” বলেই হেলেন কেধে উঠল ।

মেয়েটার জন্য এলেক্সের কেন জানি গভীর মায়া অনুভূত হল । পরম মমতায় মেয়েটার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে চেয়েও কি মনে করে যেন দিল না । এভাবেই কথা বলতে বলতে ওরা দুজন –দুজনের অনেক কথা শেয়ার করল । ট্রেনের অপেক্ষায় চলে গেল অনেক রাত । আস্তে আস্তে ওদের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল । হঠাত দূর থেকে ট্রেনের শব্দ শুনতে পেল ওরা , নিশ্চয়ই ওদের নিতে আসছে ট্রেনটা, আচ্ছা ট্রেনটা ওদের নিয়ে কোথায় যাবে ? ওদের কি পালানো উচিৎ । না এখান থেকে পালানোর কোন উপায় নেই ! তাদের যে যেতেই হবে ! নিয়তি কাউকেই পরোয়া করে না । সে তার আপন গতিতে বয়ে চলে গন্তব্যের দিকে ।

টুনটুন শব্দ হল, এলেক্স পকেটে হাত দিয়ে একটা মুঠোফোন আবিষ্কার করল । আশ্চর্য তার পকেটে মুঠোফোন আসল কিভাবে ? একটা মেসেজ পরেই উত্তেজনায় ঘামছে এলেক্স!

“কি হয়েছে ?” বলল হেলেন ।

“এবরিথিং ইজ ফেয়ার হিয়ার ”

“মানে ? ”

“মেসেজটা পড়ে দেখ ! তুমি যদি মনে কর তোমার এই জগতে আসাটা ভুল বসত হয়েছে বা এখনই আসাটা ফেয়ার হয়নি তাহলে আপিল করতে পার । ” 

“একটু বুঝিয়ে বলবে? ” কৌতূহলী হয়ে বলল হেলেন ।

“প্যারালাল জগত বলে একটা কথা আছে । তোমার আমার মত অবিকল মানুষ প্যারালাল জগতে বাস করে । এমনও হতে পারে ভুলবশত আমাদের এখানে আনা হয়েছে । হয়তবা অন্য জগতের হেলেনকে আর এলেক্সকে আনতে গিয়ে তোমাকে আর আমাকে এখানে আনা হয়েছে !”

হেলেনের চোখ দুটি খুশীতে চক চক করে উঠল । যেন অথই সাগরে এক টুকরো কাঠ পেল আকরে ধরার জন্য ।

“ভুলবশত আমাদের নিয়ে আসা হলে ফিরত দিয়ে দিবে সেই ক্ষেত্রে আমরা এখানকার সমস্ত ঘটনাই ভুলে যাব।”

হেলেনের কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে গেল ! আচ্ছা সে যদি আগের জগতে ফিরে যায় তাহলে কি এলেক্সেও ভুলে যাবে ! এই প্রথম একটা মানুষকে তার ভাল লেগেছে অথচ নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিণতি , জীবনে ফিরে গেলে তাকে দেখলেও আর মনে করতে পারবে না। এলেস্কের মত প্রাণবন্ত মানুষ জীবনে দ্বিতীয়টি দেখে নি হেলেন ! আচ্ছা হেলেনের মত এলেক্সও কি হেলেনকে একই ভাবে ফিল করছে ! কে জানে !!

***

কফি-সপে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ধাক্কা খেল দুজন ছেলে-মেয়ে । ছেলেটি উঠে মেয়েটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কেন জানি যেতে পারল না ! মেয়েটিকে কেমন জানি চেনা চেনা মনে হল তার ! মনে হচ্ছে জর্ম জম্মান্তরের পরিচিত তারা ! “হাই, আমি এলেক্স । আপনাকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে , মনে হচ্ছে আমরা আগে থেকেই পরিচিত !” বলল ছেলেটি ।

“আমি হেলেন !” বিস্ময়ে চেয়ে আছে হেলেন। ওর কাছে ছেলেটিকে কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে । বুকের ভিতরটা কেমন জানি টিক টিক করছে !

কবি সাহিত্যিকেরা প্রায় তাদের লেখায় লেখেন এমন মেয়ে বা ছেলেকেই বিয়ে কর যাকে দেখলেই মনে হয় অনেক দিনের চেনা ! মনে এর জন্যই হয়ত এতদিন অপেক্ষা করছিলে ! আমাদের জীবনে কোন না কোন পর্যায়ে এমন কেউ না কেউ আসে যাকে দেখলে মনে হয় জর্ম জম্মান্তরের পরিচিত আমরা । কে জানে এর মাঝেও হয়ত লুকিয়ে আছে এমনই কোন আত্মিক বন্ধন বা অজানা কোন কাহিনী।

বিঃদ্র – ষ্টেশনে সেই রাতে হেলেন এবং এলেক্স দুজনই আপিল করেছিল ! মানুষই এক মাত্র প্রাণী যে কিনা সমস্ত আশা শেষ হবার পরও আশা করতে পারে । তারা সৌভাগ্যক্রমে বা দূভাগ্যক্রমে যেভাবেই হোক, সেই যাত্রায় ট্রেনে উঠার হাত থেকে বেচে গিয়েছিল ! (সমাপ্ত)

  //

Likes Comments
০ Share

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    দাদা

    আজ কাল যি কবিতা লেখছেন

    অসাধারণ --অভিনন্দন 

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ

    - চারু মান্নান

    বাহ দারুন কবি,,,,,,চৈত্র শুভেচ্ছা,,,,,,

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ কবি