Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কামরুল আলম

১০ বছর আগে লিখেছেন

বৈজ্ঞানিক ভালোবাসা-২

(প্রথম পর্ব)- বৈজ্ঞানিক ভালোবাসা 
‘চাকুরী তো তারাই করে যারা চাকর, আর আমার পক্ষে চাকর হওয়া সম্ভব না। তার চেয়ে বরং বাদাম বিক্রেতা হয়ে ঘুরে বেড়াবো।’ মুখে হাসি টেনে ইউসুফ আদনান এমন কথা বললেওে এটাই যে তার মনের কথা সেটা মানতে চাইলেন না বড় ভাই প্রফেসর ড. সাব্বির সোলায়মান।

‘তোমার কথার কোন যুক্তি নাই। বাদাম বিক্রেতা হলে তোমার অসুবিধা নাও হতে পারে কিন্তু আমার অসুবিধা আছে।’ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন ড. সোলায়মান। বসার ঘরে সোফায় মুখোমুখি বসা দুই ভাই। ইউসুফ আদনান তখন সবে মাত্র মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে। ড. সোলায়মান ইন্ডিয়ায় একটি সেমিনারে যোগ দিতে আমেরিকা হতে যাওয়ার পথে দেশে অবস্থান করছেন।

‘আমি আর এক সপ্তাহ আছি, এর মধ্যে তোমার ডিসিশন জানাবে। তবে ব্যবসা করতে চাইলে আমি কিন্তু কোন সাপোর্ট করতে পারবো না বলে রাখলাম।’ ড. সোলায়মানের কণ্ঠে আদেশের সুর। এসময় ঘরে এসে প্রবেশ করলেন মিসেস জাহানারা সোলায়মান। ইউসুফ আদনানের শ্রদ্ধেয়া ভাবী।
‘কেন ছোট ভাইটাকে এমন বকাবকি করছো? সে ব্যবসা করতে চাইলে করুক না, সমস্যা কি?’ বললেন ইউসুফের ভাবী। ইউসুফ জানে এসব কথার কোন গুরুত্ব নেই। তার বড় ভাই যেটা বলেছেন তাতেই অনঢ় থাকবেন তিনি। আর সেটাই তার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু তার পক্ষে সেটা মানা সম্ভব না। কারণ ছোট খাটো ব্যবসায় যে ইতোমধ্যে তার হাতে খড়ি হয়ে গেছে। অন্যের অধীনে চাকরী করার যে কি ঝামেলা হতে পারে তা অনুভব করে সে নিজের অধীনস্থ কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে। তবুও বড় ভাইয়ের কথার পিঠে আর কোন কথা বলতে সাহস পায় না ইউসুফ। কারণ তিনিই তো তার অভিবাবক। পিতা আরমান আলীর মৃত্যুর পূর্ব থেকেই তার এবং পরিবারের অন্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন ড. সোলায়মান। ছাত্র জীবনে সাব্বির সোলায়মানের বেশ নাম ডাক ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম মেধাবী ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতিতেও জড়িত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। একটি ছাত্র সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি পদে থাকা অবস্থাতেই মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরবজনক রেকর্ড অর্জন করতে পেরেছিলেন এই সাব্বির সোলায়মান। সংগঠন তখন তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব দিতে চাইলেও নিজের পরিবারের কথা এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবেই দল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। কিছু দিনের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে জয়েন করে বাড়িতে খবর পাঠালেন। চিঠি লিখলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পিতা আরমান আলীর কাছে। চিঠির সারমর্ম হলো এই যে, আমি জানি আপনি এ খবরে সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছেন। তবে আমি আনন্দিত হবো তখনই যখন আপনারা সবাই আমার বাসায় চলে আসবেন স্থায়ীভাবে।

এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে দূরত্ব তৈরি করে কোন অবস্থাতেই শহরে যেতে চাইলেন না আরমান আলী। ইউসুফ তখনও পারিবারিক নিয়মের কারণেই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে ক্লাস এইটের গন্ডি অতিক্রম করছে। নতুন বছরে ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশন করার কথা। সিদ্দিক আহসান মাত্র ইন্টারমিডিয়েট দিয়েছে স্থানীয় কলেজ থেকে। মাস্টার আরমান আলী যে কারণে তাঁর সন্তানদের স্কুলে না পাঠিয়ে নিজের বাড়িতে বিকল্প স্কুল তৈরি করেছিলেন তার সাফল্য কেবল বড় ছেলে সাব্বির সোলায়মানের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। অন্যরা তাকে হতাশ করেছিল। একমাত্র মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনি কেবল এই বাড়িতে পড়ালেখা করার কারণেই। বিয়েটাও দিয়ে দিলেন বয়স আঠারোতে পড়তেই। দ্বিতীয় ছেলে সিদ্দিক আহসান যথা নিয়মে বাড়িতে পড়ালেখা করেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। রেজাল্ট তেমন ভাল হয়নি। আর ইউসুফ তো অনেকটাই ভবঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলো গ্রাম থেকে গ্রামে। এসব নিয়ে তেমন একটা মাথাও ঘামাতেন না আরমান আলী। বড় ছেলের কাছ থেকে চিঠি আসার পর ইউসুফের সাথে কথা বললেন আরমান আলী।
‘তোমার পড়ালেখার যা অবস্থা তাতে কি মনে হয় আগামী বছর ক্লাস নাইনে এডমিশন নিতে পারবে?’ এমনভাবে প্রশ্নটি করলেন আরমান আলী যেন তিনি জানেনই সে পারবে না।
‘আমি পারবো।’ মাথা নিচু করে হাতের নখ কুটত কুটতে জবাব দিল ইউসুফ আদনান। বাবাকে অসম্ভব রকমের শ্রদ্ধা তারা ভাই-বোন সকলেই করতো। পিতা এবং শিক্ষক, একের ভেতর দুই। ইউসুফ অবশ্য নিজেও জানতো পড়াশোনা নিয়মিত না করার কারণে সে ক্লাস নাইনের ছেলেদের সাথে ব্যালেন্স করতে পারবে না। বাবা ঠিকই বলছেন। তবুও পারবো বলার কারণ হলো লোকে জেনে গেছে সে এখন ক্লাস এইটে পড়ে। আর পরের বছর যদি ক্লাস নাইন বলা না যায় তাহলে তার জীবনের মহাভারত অশুদ্ধ হবার কি আর কিছু বাকী থাকবে? অন্যদিকে ইউসুফের মুখে এমন দৃঢ়তাপূর্ণ জবাব দেখে আরমান আলী অনেকটাই দু:শ্চিন্তামুক্ত হয়ে গেলেন। ভাবলেন ‘দেখতে হবে না ছেলেটা কার?’ অবশেষে নতুন বছর চলে এল। ইউসুফ আদনানও স্কুলে গেল। কিন্তু ইউসুফের নতুন জীবনে ছন্দ পতন ঘটালেন বড় ভাই সাব্বির সোলায়মান। চিঠি দিয়ে কাজ না হওয়াতে তিনি সরাসরি বাড়িতে এলেন ঈদের ছুটিতে। দাবী একটাই, সবাইকে শহরে যেতে হবে। তার সাথে একমত হলেন মা হাফসা বেগম। ইউসুফের মনেও প্রচুর আগ্রহ শহরে যাওয়ার জন্য। মুখে তেমন কিছু না বললেও সোলায়মান ঠিকই বুঝতে পারলেন ছোট ভাইটির মনের অবস্থা। শেষ পর্যন্ত পিতাকে রাজী করাতে না পেরে ইউসুফকে নিয়েই চলে গেলেন তিনি শহরে। বনানীতে নতুন বাসায় উঠলেন। ইউসুফ আদনান তো একেবারে মুগ্ধ। (চলবে)

Likes Comments
০ Share