Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

কামরুল আলম

১০ বছর আগে লিখেছেন

ধারাবাহিক উপন্যাস: বৈজ্ঞানিক ভালোবাসা-১

(নক্ষত্রে এটাই আমার প্রথম পোস্ট। প্রথম পোস্ট-ই উপন্যাস কেন? কারণ হিসেবে বলা যায় আরো দু’টি ব্লগে এই ধারাবাহিকটি এখন নিয়মিত পোস্টাচ্ছি। ইতোমধ্যে ২৩টি পর্ব শেষ হয়েছে। তাই নক্ষত্রেও ধারাবাহিকটির ধারবাহিকতা বজায় রাখতেই এ প্রয়াস।)

নিজ অফিসের চেয়ারে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে ইউসুফ আদনান। ভাবখানা ঠিক যেন ‘আয়েশ করে পায়েশ’ খাওয়ার মতো! দৃশ্যটি দেখলে যে কারো মনে হবে এমন সুখী মানুষ পৃথিবীতে বোধ হয় আর দ্বিতীয়টি নেই। স্যূট টাই পরে প্রতিদিন এমনভাবে অফিসে আসা যাওয়া করে যেন বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে যাওয়া আসা করছে। আদনানের এভাবে অফিসে বসে থাকা নিয়ে সেদিন তার এক ছড়াকার বন্ধু চট করে একখানা ছড়া বানিয়ে দিল। ‘কাজহীন বেচারা/ কেউ নাই সে ছাড়া!/ ….বসে থেকে অফিসে/ পান করে কফি সে!!’ ছন্দ আর অন্তমিলের দারুণ সমন্বয়!

এই পৃথিবীতে সোনার চামচ মুখে নিয়ে অনেকেই জন্মায় তবে মোটেও সেরকম জন্ম ছিল না ইউসুফ আদনানের। গ্রামের সামান্য এক স্কুল মাষ্টারের ঘরে জন্ম তার। বাবা আরমান আলীর পুরো জীবনটাই কেটেছে মানুষ গড়ার পেছনে। ধন-সম্পদের কথা কোনদিন চিন্তা করেননি তিনি। তবে সন্তানদের মানুষ করার ব্যাপারে তাঁর ছিল এক অন্যরকম সচেতনতা। নিজে স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে তাঁর মনে এই ধারণা জন্মেছিল যে, লেখা- পড়া করার জন্য স্কুল কলেজে পড়ার আসলে কোন প্রয়োজন নেই। কারণ স্কুলে আসা-যাওয়া করে কারো তেমন একটা কিছু শেখা হয় না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই প্রাইভেট পড়ে পরীক্ষা পাস করে। তিনি যেহেতু নিজেই ভাল শিক্ষক, তাই তাঁর সন্তানদের স্কুলে দেবেন না, সিদ্ধান্ত নিলেন মাস্টার আরমান আলী। তাঁর প্রথম সন্তান সাব্বির সোলায়মান একদম ক্লাস টেন পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা করল। কেবল নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিল এস.এস.সি’র। আরমান আলী তখন নিজেই একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাই এ ব্যতিক্রম নিয়মে পরীক্ষায় অংশ নিতে কোন সমস্যা হয়নি সোলায়মানের। নির্বাচনী পরীক্ষাটাই ছিল সোলায়মানের শিক্ষা জীবনের প্রথম একাডেমিক অংশ গ্রহন! আর কী আশ্চর্য সেই পরীক্ষায় সোলায়মান প্রথম স্থান অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল। পরবর্তীতে এস.এস.সি-তে প্রথম বিভাগে কেবল পাসই করেনি বরং পুরো সেন্টারে সর্বাধিক নম্বর লাভ করেছিল সে। আরমান আলীকে আর পায় কে! তাঁর বৈজ্ঞানিক ফর্মুলাটি কাজে লেগেছে। তিনি গর্ব করে সকলের কাছে এই খবরটি ছড়িয়ে দিলেন। সারা জীবন যে ছেলে স্কুলে তো দূরে থাক, স্কুলের বারান্দায় পা রাখেনি, সেই কিনা পুরো এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র হয়ে গেল। আরমান আলীর ছেলে বলে কথা। বাবার মান রেখেছে ছেলেটি।

আনন্দে আত্মহারা হয়ে আরমান আলী তাঁর দ্বিতীয় সন্তান সানজিদা বেগমকেও স্কুলে এডমিশন নিতে দিলেন না। সানজিদার বয়স যখন ছয় পেরিয়ে যাচ্ছে তখন আরমান আলীর স্ত্রী হাফসা বেগম একদিন বলেই বসলেন, মেয়েটাকে তো স্কুল- মাদ্রাসা কোথাও ভ ির্ত করানো দরকার।
‘কেন, স্কুলে না গিয়ে কি আমার সোলায়মান ভাল রেজাল্ট করেনি?’ স্ত্রীর প্রতি আরমান আলী পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।
‘সে করেছে বটে, তবে মেয়ে বলে কথা। সানজিদা তো আর সোলায়মানের মতো শহরে গিয়ে কলেজে পড়ার সুযোগ পাবে না। এমন বাড়তি মেয়ে বয়স পনেরো-ষোল হবার আগেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয় কি না কে জানে?’ হাফসা বেগমের কণ্ঠে হতাশার সুর।
‘শোন, এসব আজে-বাজে চিন্তা মাথা থেকে দূর কর। আমার মেয়ে সানজিদা বাড়িতে পড়ালেখা করেই মেট্রিক দেবে ঠিক সোলায়মানের মতো। আর এসব বিয়ে-টিয়ে আজকাল আঠারো বয়সের আগে কারো হয় না। আইনে বাধা আছে।’
‘এমন আইন আগে কেন করল না সরকার। তাহলে তো আমাকে বাবা মাত্র তেরো বছর বয়সে আপনার ঘরে পাঠাতে পারতো না।’ আবারো হতাশার সুরে বললেন হাফসা বেগম।
আরমান আলীর মুখটা কিন্তু বেশ উজ্জল হয়ে উঠল স্ত্রীর কথা শুনে। মুচকি হেসে বললেন, ‘তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য হতাম না আগে এমন আইন কার্যকর থাকলে!’ স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল হাফসা বেগমের মুখ।
‘তোমার মনে পড়ে সেই দিনগুলোর কথা?’ স্ত্রীকে কাছে টেনে আদুরে গলায় জানতে চাইলেন আরমান আলী।
‘কোন দিনগুলো?’ নিজেকে যথাসম্ভব আগলে রেখে বললেন হাফসা বেগম।
‘ওই যে, যখন আমি তোমাকে প্রাইভেট পড়াতে যেতাম তোমাদের বাড়িতে।’
‘যাহ!’
‘জানো তুমি যখন ক্লাস ফাইভের পরীক্ষা শেষ করলে তার কিছুদিন পর একটি লোকাল বাসে তোমার বাবার সাথে আমার দেখা হয়। তিনি আমাকে দেখেই বললেন, ‘‘জানেন মাস্টার সাহেব আমার মেয়েকে তো ঘরছাড়া করেই দিলাম।’’ তোমার বাবার মুখে এমন কথা শুনে আমার বুকটা ধক্ করে উঠেছিল। ভাবছিলাম বুঝি তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। জানতে চাইলাম, কার সাথে ঘরছাড়া করলেন হাফসাকে। তখনই তোমার বাবা হেসে বললেন, ‘‘আরে না, হাফসা নয়, পান্নার বিয়ে দিলাম। আমার বড় মেয়ে।’’ সেদিনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে আর কারো ঘরে যেতে দেব না।’ রসিয়ে রসিয়ে বলছিলেন আরমান আলী আর লজ্জায় লাল হচ্ছিল হাফসা বেগমের মুখ। এভাবেই সুখের সংসারে বেড়ে উঠতে লাগলো সানজিদা বেগম। আরমান আলীর একমাত্র মেয়ে। স্কুলে না দিলেও বাড়িতে পড়াশোনার দায়িত্বটা নিলেন স্বয়ং অত্র অঞ্চলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আরমান আলী। মাস্টারির পাশাপাশি দাবা খেলার প্রতি ছিল যার এক অন্যরকম নেশা। স্কুল ছুটির পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সহকর্মীদের সাথে দাবা খেলায় মগ্ন থাকাটাই একসময় তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়। এলাকায় মোটামুটি এ খবরটি রটে যেতে বেশিদিন সময় লাগেনি যে, আরমান আলী স্যারকে দাবা খেলায় গেইম দেওয়া সহজ কথা নয়। সেই সাথে সখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো আরমান আলীর অসাধারণ কাব্য প্রতিভার। একাধারে শিক্ষাগুরু, দাবাড়ু আবার কবি। ধন সম্পদের দিক দিয়ে সাধারণ হলেও অন্যান্য দিক দিয়ে আরমান আলী ছিলেন সত্যি অসাধারণ। অংক, ইংরেজি আর বিজ্ঞানসহ স্কুলের এমন কোন সাবজেক্ট নেই যেখানে আরমান আলী ওস্তাদ নন। এমনকি আরবীতেও তার সাথে পেরে উঠতেন না বিভিন্ন মাদ্রাসার আরবী শিক্ষকেরা! এমন প্রতিভাবান এক মহান ব্যক্তির সন্তানেরা স্কুলে পড়ে না, এ খবরটি রীতিমতো অবাক করে দিত যে কাউকে! যদিও তাঁর বড় ছেলে সাব্বির সোলায়মান কোনদিন স্কুলে না গিয়েও ইতোমধ্যে এস.এস.সি-তে সেরা ফলাফল অর্জনের পর শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এইচ.এস.সিতেও প্রথম বিভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আরমান আলীর তৃতীয় সন্তান মানে দ্বিতীয় ছেলে সিদ্দিক আহসানকেও একই নিয়মে স্কুলে পাঠানো হলো না।

সিদ্দিক আহসানের বয়স যখন পাঁচ, বড়বোন সানজিদার বয়স তখন দশ। ঠিক এ রকম সময়ে পৃথিবীর বুকে আগমন ঘটে ইউসুফ আদনানের। রূপে গুণে অনন্য। সম্ভবত তাঁর অসাধারণ রূপের কারণেই ‘ইউসুফ’ নামটি নির্বাচিত হয়েছিল। ইউসুফের জন্মের পর ‘মাস্টারের ঘরে চাঁদ এসেছে’ এমন কথা দশগ্রামে রটে গিয়েছিল। অনেকেই দল বেঁধে দেখতে যেত চাঁদের মতো ফুটফুটে সেই ছেলেটিকে। কে জানতো বড় হওয়ার পর এই ছেলেটি পারিবারিক ধ্যান ধারনার বাইরে চলে যাবে। মাস্টারের ছেলে তো মাস্টার হওয়ারই কথা। কিন্তু সে কেন ‘বিজনেস ম্যাগনেট’ হতে চাইবে। তাঁর বড় ভাই সাব্বির সোলায়মান যখন ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করে আমেরিকার একটি ইউনিভার্সটির প্রফেসর, মেজো ভাই যখন মধ্যপ্রাচ্যের বহুল আলোচিত কম্পউটার ইঞ্জিনিয়ার, তাঁর একমাত্র বোন সানজিদা বেগম নিজে কোন পেশায় না গেলেও দুলাভাই যেখানে একটি কলেজিয়েট স্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষক, তাঁর মামারা এবং মামাতো ভাই বোনেরাও যখন শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেদের নিয়োজিত রাখছে ঠিক সেই সময় অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেই ব্যবসা করার ঘোষণা দিল ইউসুফ আদনান। ব্যবসায় কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, বড় অংকের কোন পুঁজি প্রাপ্তিরও সম্ভাবনা নেই তবুও বিজনেস ম্যান হতে চায় ইউসুফ আদনান!

Likes Comments
০ Share

Comments (5)

  • - আজিম হোসেন আকাশ

    শুভ কামনা। ভাল থাকুন।

    • - দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

      আজিম ভাই আপনিও ভালো থাকুন এই আমাদের কামনা। 

    - জোকার ৫৩

    আপনার ইচ্ছাটাকে শ্রদ্ধা জানাই ৷ কয়জন দু'পেয়ে বাঙালীর সেই বোধটুকু আছে ৷ জীবন বাস্তবতায় এত বেশী নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত যে মানুষ কিংবা পশুর দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায় ? আপনার তবুতো ইচ্ছা ছিল সেটাই জাগ্রত হোক সবার মাঝে সেটাই কাম্য ৷ প্রথমে শুদ্ধ অনুভূতি পরে যথাযথ কর্ম ৷

    • - দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

      প্রথমে শুদ্ধ অনুভূতি পরে যথাযথ কর্ম ৷ জোকার ভাই একবার সঠিক বলেছেন। আমি আপনার সাথে সহমত। 

    - আলমগীর সরকার লিটন

    রথি দা

    খুবি সত্যকথা বলেছৈন লেখেনো ভাল

    অভিনন্দন আর শুভ কামনা-----

    • - দেওয়ান কামরুল হাসান রথি

      লিটন ভাই আপনাকেও অসংখ্য অভিনন্দন ও ভালোবাসা রইলো।