Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সনাতন পাঠক

১০ বছর আগে লিখেছেন

শ্রদ্ধা ও শোকে আচ্ছন্ন সবাই

    মহানায়িকার মহাপ্রয়াণে শোকাচ্ছন্ন গোটা ভারত। সবচেয়ে বেশি শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতের চলচ্চিত্র অঙ্গনে। বলিউড থেকে টালিউডে বয়ে যাচ্ছে শোকবার্তার স্রোত। প্রায় সবাই টুইটারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শোক জানিয়েছেন।

শোক জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও।

মনমোহন সিং
অসাধারণ অভিনয় দিয়ে লাখো লাখো ভারতীয়র হূদয়ে চিরদিনের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন সুচিত্রা। তিন দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কী বৈচিত্র্যময় অভিনয়ই না তিনি করেছেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র, বিশেষ করে বাংলা ছবিতে তাঁর অবদান অনন্য।দিলীপকুমার
সুচিত্রা সেন গ্রেট আর্টিস্ট। সৌন্দর্যের সঙ্গে বুদ্ধিটাও কীভাবে মিশে যায়—তা সুচিত্রার মধ্যে প্রথম দেখি। ওর ব্যক্তিত্বটাও ভীষণ আকর্ষণ করেছিল। এ রকম আর্টিস্টকে আমার শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছা করে।

অমিতাভ বচ্চন
সুচিত্রা সেন—সৌন্দর্য, প্রতিভা আর বৈরাগ্য। অবিশ্বাস্য অভিনয়দক্ষতা দিয়ে তিনি বাংলা ছবিকে অলংকৃত করেছেন, হিন্দি ছবিও।

সুপ্রিয়া দেবী
আসলে রমাদির সঙ্গে উত্তমকুমার সম্পূর্ণ একটা রোমান্টিক জুটি। উত্তমকুমারের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি তো সুচিত্রা সেনকেই মানিয়েছিল। সুচিত্রা-উত্তম জুটি এতই রোমান্টিক, ও রকম জুটি আর হয়ওনি। আমার তো চিরকালের ফেভারিট রমাদি। শুধু অভিনেত্রী বা সুন্দরী বলে নয়, মানুষ রমাদি, মানুষ সুচিত্রা সেন আমার খুবই প্রিয়।

মাধবী মুখোপাধ্যায়
ভেবেছিলাম উনি এবারও ভালো হয়ে ফিরবেন। সুচিত্রা সেন নেই সেটা ভাবতে পারছি না।

রঞ্জিত মল্লিক
মনে পড়ছে পুরোনো দিনের নানা স্মৃতি। সেই দেবী চৌধুরাণী ছবির কথা। তাঁর মৃত্যুর খবরটা শোনার পর থেকে খুব কষ্ট হচ্ছে।

মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়
ওনার ভুবন ভোলানো হাসির কথা আজও ভুলতে পারছি না। এত জনপ্রিয় শিল্পী আমি আর দেখিনি।

মিঠুন চক্রবর্তী
আমার কাছে তিনি ছিলেন চলচ্চিত্রজগতের ১ নম্বর তারকা। আমি তাঁর অভিনীত হারানো সুর ১৪ বার আর সপ্তপদী দেখেছি ১১ বার। অপূর্ব অভিনয়। অভিনয়ে তাঁর ছিল এক আলাদা ধরনের ম্যাজিক।

গৌতম ঘোষ
বাঙালি অত্যন্ত প্রিয় একজন নারীকে হারালাম। সুচিত্রা যদি ফিরে আসতেন তাহলে তাঁকে নিয়ে ছবি তৈরির খুব ইচ্ছা ছিল। সে সুযোগ আর হয়নি, কারণ উনি স্বেচ্ছা-অবসর নিলেন। সুচিত্রা সেনের সময়টাতে বাঙালি মধ্যবিত্তের মধ্যে একধরনের রোমান্টিকতার ব্যাপার ছিল। তা এখন পাল্টে গেছে। তখন সুচিত্রা সেন, উত্তমকুমার, ছবির গল্প, গান—সব মিলে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। টেলিভিশন ছিল না। সবাই হলগুলোতে যেতেন। ছবিগুলো খুব উপভোগ করতেন। সুচিত্রা সেন তাঁর স্মৃতিটুকু থাক ছবির মতোই বেঁচে থাকবে সবার হূদয়ে।

অপর্ণা সেন
এত বড় মাপের নায়িকার আর জন্ম হয়নি। উত্তর ফাল্গুনী ছবির শুটিং দেখেছিলাম আমি। তখনই বুঝেছিলাম কত বড় মাপের শিল্পী তিনি।

শ্রীদেবী
সুচিত্রা ছিলেন অসামান্য অভিনয়শিল্পী, স্বর্গীয় সৌন্দর্য, কিংবদন্তি, আইকন। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে যাবেন।

মাধুরী দীক্ষিত
সুচিত্রা সেনের আত্মা শান্তি পাক। ভারতীয় চলচ্চিত্র তাঁর শূন্যতা অবশ্যই অনুভব করবে।

প্রসেনজিৎ
সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
সুচিত্রা সেনের প্রতিভা, অভিনয়, ব্যক্তিত্ব মেপে নির্ণয় করা যাবে না।

  জী ব নে র টু কি টা কি

তাঁর অভিনীত সর্বপ্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছায়াছবি সুকুমার দাশগুপ্ত পরিচালিত সাত নম্বর কয়েদি। ছবিটি ১৯৫৩ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল। রমা সেন এ ছবিতেই সুচিত্রা সেন নামে আবির্ভূত হন। রুপালি পর্দায় দুই অক্ষরের নাম হালকা লাগবে বলে পরিচালক নামটি বদলে দিতে বলেন। সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতীশ রায় রমার নতুন নামকরণ করেন। তখন থেকেই তিনি সুচিত্রা সেন।

 ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল সুচিত্রা সেন বাংলাদেশের পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন তিনি রমা দাশগুপ্ত নামেই পরিচিত ছিলেন। ডাকনাম ছিল কৃষ্ণা।
 রমা ছিলেন বাবা-মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। অশোক, উমা, রমা, হেমা, লীনা, রুনা ও গৌতম—এই ছিল করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দেবীর সাত সন্তান।
 ১৯৪৭ সালে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়েছিল বালিগঞ্জ প্রেসের স্বত্বাধিকারী আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সঙ্গে। রমা দাশগুপ্ত বিয়ের পর হলেন রমা সেন।
 এর আগে পিনাকী মুখোপাধ্যায়ের সংকেত ছবিতে অভিনয় করার জন্য তিনি স্ক্রিন টেস্ট দিয়েছিলেন এবং পিনাকীর তা পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু তখনো রমা সেন শ্বশুর শিল্পপতি আদিনাথ সেনের কাছ থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার অনুমতি পাননি। এরপর অনুমতি পেয়ে শেষ কোথায় নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন, কিন্তু ছবিটি মাঝপথে থেমে যায়।
 বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সুচিত্রা-উত্তম সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটি। ক্যারিয়ারের মাঝপথে উত্তমকুমারের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় বারবার ছবির শুটিংয়ে সময়মতো হাজির হচ্ছিলেন না উত্তম। তখন সুচিত্রা প্রযোজকদের বলেছিলেন, সিনেমার পোস্টারে উত্তমের আগে যেন তাঁর নাম থাকে। অর্থাৎ উত্তম-সুচিত্রা নয়, পোস্টারে থাকবে সুচিত্রা-উত্তম!
 জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতেই হঠাৎ করে সুচিত্রা সেন ১৯৭৮ সালে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে সরে যান। এরপর আর কখনোই তিনি জনসমক্ষে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। তবে শেষ জনসমক্ষে এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর।
স্বামী দিবানাথ ও কন্যা মুনমুনের সঙ্গে, ১৯৫৫
 সুচিত্রা অভিনীত শেষ হিন্দি ছবি গুলজার পরিচালিত আঁধি (১৯৭৪)। ১৯৭৮ সালে মঙ্গল চক্রবর্তী পরিচালিত প্রণয় পাশা সুচিত্রা অভিনীত শেষ বাংলা ছবি।
 সুচিত্রা সেন একমাত্র শিল্পী, যিনি দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লিতে যেতে হবে বলে এই পুরস্কার নিতে সম্মত হননি।
 প্রথম ভারতীয় নারী অভিনেত্রী হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সাত পাকে বাঁধা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।
 ১৯৭২ সালে পান পদ্মশ্রী পুরস্কার।
সুচিত্রা সেন
 সত্যজিৎ রায় সুচিত্রা সেনকে নিয়ে দেবী চৌধুরানী ছবিটি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। সত্যজিৎ চেয়েছিলেন, এই ছবিতে কাজ করার সময় অন্য কোনো ছবির শিডিউল যেন না রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু সুচিত্রা জানিয়ে দেন, পেশাদার শিল্পী হিসেবে তিনি তা করতে পারেন না। তাতে অন্য প্রযোজক-পরিচালকেরা মুশকিলে পড়ে যাবেন। এরপর সত্যজিৎ রায় আর দেবী চৌধুরানী ছবিটি নির্মাণ করেননি। তবে দীনেন গুপ্তের পরিচালনায় ১৯৭৪ সালে রঞ্জিত মল্লিকের বিপরীতে সুচিত্রা দেবী চৌধুরানী ছবিটি করেছিলেন।
 বলিউডে দেবদাস ছবিতে দিলীপকুমারের বিপরীতে সুচিত্রাই ছিলেন প্রথম পার্বতী। ছবিটি ১৯৫৫ সালে মুক্তি পায়। ১৯৭৪ সালে সঞ্জীবকুমারের সঙ্গে আঁধি ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেন। এ ছাড়া ১৯৬৭ সালে হিন্দি মমতা ছবিটির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে মনোনয়ন পান। মোট সাতটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন।
 ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গ বিভূষণ’ পান ২০১২ সালে।
 স্বামী দিবানাথ সেন মারা যান ২৮ নভেম্বর ১৯৬৯। কন্যা মুনমুন সেন ও নাতনি রাইমা সেন ও রিয়া সেনকে নিয়েই ছিল সুচিত্রার সংসার।

 

ঘ ড়ি র  কাঁ টা য়  শে ষ যা ত্রা


শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০১৪
সকাল ৮-২৫: শেষনিঃশ্ব্বাস ত্যাগ করেন সুচিত্রা সেন।
৮-৩০: সংবাদমাধ্যমে প্রথম প্রচারিত হয় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মৃত্যুসংবাদ। কলকাতাবাসী এই সংবাদ শুনে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। সুচিত্রাভক্তরা ছুটতে থাকে হাসপাতালের দিকে।
৮-৩৫: মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত চিকিৎসকেরা। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখনই মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করতে চান না তাঁরা।
৯-০০: সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গোপনে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বের করার চেষ্টা করা হয়।
৯-৩৫: হাসপাতালে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১০-১৫: মুখ্যমন্ত্রী সুচিত্রা সেনের মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করে বলেন, পতন হলো এক মহিরুহের।
১১-৩৫: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা: মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর বালিগঞ্জের বাসভবনে।
১২-০০: কফিনবন্দী করা হয় মহানায়িকার দেহ।
১২-৩০: বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র হাসপাতালে বলেন, মানুষের মনে সুচিত্রা সেন চিরদিন জেগে থাকবেন।
১২-৪৩: হাসপাতাল থেকে শববাহী কালো কাচে থাকা গাড়ি মহানায়িকার বাড়ির পথে রওনা হয়। বাইরে থেকে কিছুই দেখা যায় না। গাড়িটি ঢেকে রাখা হয় ফুল দিয়ে।
১২-৫০: শববাহী গাড়ি পৌঁছায় মহানায়িকার বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে। এখানে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের তরফে জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা।
১২-৫৫: বালিগঞ্জ বাড়ি থেকে শববাহী গাড়ি রওনা হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানের দিকে। শববাহী শকটের পেছনে কন্যা মুনমুন সেন, নাতনি রাইমা ও রিয়া সেনের গাড়ি। তার পেছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার গাড়ি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন সেন এবং রাইমা ও রিয়া সেনের পরনে ছিল সাদা শাড়ি।
১-১০: কেওড়াতলা শ্মশানে পৌঁছায় মরদেহ। রাখা হয় চিত্তরঞ্জন দাশের সমাধির পেছনে নবনির্মিত একটি মঞ্চে।
১-১৭: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনমুন সেন, চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র শেষ শ্রদ্ধা জানান মহানায়িকাকে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন মুনমুন সেন।
১-২০: রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গানস্যালুট দেওয়া হয় মহানায়িকাকে। বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর।
১-৩০: কফিনের ওপর অংশ খোলা হয়। এখানেই পালন করা হয় ধর্মীয় আচার-রীতি।
১-৩৮: কফিন থেকে শবদেহ বের করা হয়। সমস্ত দেহ ঢাকা।
১-৪৬: মহানায়িকাকে মুখাগ্নি করেন তাঁর একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন। শুরু হয় মহানায়িকার শেষকৃত্য। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে উপস্থিত ছিলেন টালিগঞ্জের কলাকুশলীরা। ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যরা, কলকাতার মেয়রসহ কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। ছিলেন বিশ্বজিৎ, প্রসেনজিৎ, হরনাথ চক্রবর্তী, দেব প্রমুখ তারকাও।
৫-৩৯: শেষ হলো শেষকৃত্য। কাঁদতে কাঁদতে শ্মশানঘাট থেকে বেরিয়ে এলেন মুনমুন সেন। মহানায়িকার মহাপ্রস্থান।

Likes Comments
০ Share

Comments (2)

  • - নীল সাধু

    অবাক হলেও বিস্মিত হলাম না। এটা বাংলাদেশ কারণ এটাই।


    শুভেচ্ছা শাহ আজিজ ভাই।
    আমাদের দেশ সকল কিছুতেই সংরক্ষণে বেশ দুর্বল।
    রয়েছে সচেতনতার অভাব। মানুষের স্বার্থ। লোভ ক্ষমতার অপব্যাবহার এর পেছনের কিছু কারণ। 

    • - শাহআজিজ

      পুণ্ড্র আর সমতট এর নিচে লুকিয়ে আছে বহু কীর্তি সেই বৌদ্ধ আমলের । নরসিংদি আর বিক্রমপুর নিয়ে আর কোন আওয়াজ শুনিনা । দুর্ভাগা দেশ ও জনগন দেখেও শেখে না । ধন্যবাদ আপনাকে ।