Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুহাম্মদ রায়হান হাসান

১০ বছর আগে লিখেছেন

একটি সাধারণ বা অসাধারণ প্রেমের গল্প................

ইমুর আকাশ
“                                                                                                                           ২0এপ্রিল,১৯৯৩  
ইমু,
আমি সব ঠিক করে রেখেছি। চিটাগাং এ একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে আমি চাকরী পেয়েছি। মাসে তিন হাজার করে দেবে ওরা। একটু কম হয়ে গেল। সমস্যা হবে, আমি জানি। কিন্তু আগে একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে নেই। তার পর সব ব্যাবস্থা করব। তোমাকেতো বলাই হয়নি। গত মাসে একবার হুট করে চিটাগাং গিয়ে ছিলাম,তোমার মনে আছে। সেবার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। গতকালই ওরাঅ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠাল। সেবার আসার সময় বাসাও ঠিক করে এসেছি। একরুমের বাসা, রান্নাঘর আর বাথরুম আলাদা। সাথে একটা বারান্দাও আছে। এই বারান্দাটার জন্যেই নিলাম। ওখানে বসে দূরের পাহাড় দেখা যায়। সন্ধ্যাবেলায় ক্লান্ত হয়ে যখন বাসায় ফিরব, তখন এখানে বসে দুজনের সমস্ত ক্লান্তি দূর করা যাবে, কি বল? যদিও ভাড়া একটু বেশি, তারপরেও বারান্দাটার মায়া ছাড়তে পারলাম না। আমার রুমমেট হালিমকে চিনত? যার মাথার টাক নিয়ে তুমি খুভ হাসাহাসি করলে। ওই সব ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। ওদের বাড়ি আবার চিটাগাং। যাই হোক,এবার আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো।
তুমি ২৩ তারিখ সকাল ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে চলে এসো। আমি স্টেশনের মুখেই থাকব। টিকিট আমি অগ্রিম কেটে রেখেছি। তোমার সাথে বেশী কিছু আনা লাগবে না, পারলে এক কাপড়েই চলে এসো। আমরা এখান থেকে সোজা চিটাগাং যাব,সেখানে তোমার জামা কাপড় কিনে চলে যাব কক্সবাজার। আজাদের বাড়ি আছে ওখানে। ওদের ওখানেই ৩টা দিন থাকব। আমাদের বিয়েও ওখানেই হবে। মধু চন্দ্রিমাও ওখানেই হবে। হালিম,আজাদ,শুধির,রুমা ওরাও থাকবে। আমরা আবার ২৯ তারিকেই চিটাগাং ফিরে আসব। বাসাটা এখনও গোজগাজ করা হয়নি,আমি আবার ১ তারিখেই জয়েন করব।
আর বাসায় কিছু না কিছু বলে এসো। তোমার বাবা হার্টের রুগি। সে ব্যাপারটাও খেয়াল রেখো।
আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। ২৩ তারিখ,ঠিক সকাল ১০টায়,কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন।”
হাসানের এই চিঠিটা এই নিয়ে কয়বার পড়ল, ইমু বলতে পারবে না। আগে গুনে রাখত,এখন সেটা করে না। গত ২০বছর ধরেই ইমু রোজ এই চিঠিটা পড়ছে। সন্ধ্যার উত্তর আকাশে যখন শুকতারা ওঠে, ইমু তখন ছাদে চলে আসে। শুকতারাটাকে একনজর দেখেই ইমু হাসানের চিঠিটা পড়া শুরু করে। পুরু চিঠি পড়া শেষ করে আবার অনেক সময় নিয়ে শুকতারাটা দেখে।
এই শুকতারা দেখাটাও ইমু হাসানের কাছেই শিখেছে। হাসান যখন শহীদুল্লাহ হলে থাকত, তখন প্রায়ই ইমুকে নিয়ে গিয়ে হলের ছাদে বসে শুকতারা দেখত, আর বলত,“ইমু, এই শুকতারাটা না দেখতে অভিকল তোমার মত, যখন তোমাকে দেখতে পাইনা, প্রচন্ড মন খারাপ হয়, তখন এই শুকতারাটাকেই দেখি। সেদিন আমার আর মন খারাপ হয় না।”। বলেই হাসা শুরু করত। পাগলই ছিল হাসান। তবে ছাত্র ভাল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থের ছাত্র। খুভ হাশি খুশি আর চটপটে। ও যখন হাসত, তখন যেন ওর হাসিতে মুক্তা ঝরত। এই মুক্তা ঝরা হাসিটাই মুঘ্ধ্ হয়ে দেখত। কিন্তু এই হাসিটার মাঝেই একটা বিরাট শুন্যতা আছে সেটা একমাত্র ইমুই জানে। জন্মপরিচয় নেই হাসানের। ও জানেনা ওর বাবা-মা কে? সলিমুল্ল্যাহ এতিমখানায় বড় হয়েছে হাসান। সেখান থেকে পড়াশোনা করে এ পর্যন্ত এসেছে। কিন্তু কখনও কেও ওর মুখে কোন কষ্টের ছায়া দেখেনি। এতিমখানার ছেলেগুলাকে নিয়ে ওর অনেক স্বপ্ন। ওদের জন্যই ও এত প্ররিশ্রম করছে।
ইমুর সাথে হাসানের দেখাটাও কিছুটা নাটকিও। পাবলিক লাইব্রেরীতে একই বই নিতে গিয়ে দুজনেই ঝগড়া বাধিয়ে ফেলে। ইমু অবাক হয়ে সেদিন দেখছিল,একটা বইয়ের জন্য কেও এভাবে ঝগড়া করতে পারে? সেই ঝগড়াযে এভাবে ভালবাসা হয়ে যাবে সেটা কে জানত? হাসান মোটেই ইমুকে সময় দিতে পারত না। হুঠহাঠ একটা চিঠি নিয়ে আসত আর ইমুকে দিয়ে চলে যেত। আর মাঝে মাঝে ইমুকে নিয়ে হলের ছাদে বসে দুজনে মিলে শুকতারা দেখত। সেই মধুর স্মৃতিগুলো কিছুতেই ভুলতে পারে না। একবারতো শুকতারা দেখতে গিয়ে হোস্টেল সুপারের হাতে ধরা খেয়েছিল। আজাদ না থাকলে সেদিন ভালই কেলেংকারি হত। রাজনীতি করত ছেলেটা, সুপারকে দূরে নিয়ে গিয়ে কি বোঝাল কে জানে, ও ফিরে এসে হাসানকে বলল,“এরপর থেকে ওকে নিয়ে আসলে আমাকে বলে এনো।”। এই ঘটনা মনে পড়লে আজও ইমুর হাসি আসে। কিন্তু এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে করতে আর ভাল লাগছিল না ইমুর,ওই জোর দিতে থাকে হাসানকে। হাসানও বুঝতে পারে বিয়ে করা দরকার। পারিবারিক ভাবে কিছুই করতে পারে না হাসান। কারন ওরতো কোন পরিবারই নাই। ব্যাপারটা ইমুকে জানাতে ইমু জানাল ও কাজী অফিছে গিয়ে বিয়ে করবে। হাসান যদিও রাজী ছিলনা। কিন্তু এ ছাড়া ওর কোন উপায় ছিল না। সব কিছুই ঠিকঠাক করে ফেলেছে হাসান। শুধু ২৩ তারিখে ইমুর আসার অপেক্ষা।
২১তারিখেই ইমুর বিয়ে হয়ে যায় শামীম সাহেবের সাথে। লন্ডন প্রবাসী। বাবা চোখের পানি ফেলে দিয়ে বলল,ইমু শুধু কবুলটাই বলতে পেরেছে। আর কিছু না। ২২ তারিখ রাতেই ইমুরা লন্ডনে চলে যায়। ২৩ তারিখ সকালে কি হল সেটা কেও জানেনা।
সেদিনের পর থেকে একটা পাগলকে স্টেশনের বাহিরে ঠিক সকাল ১০টা দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায়। কে এই পাগল কেউই তার পরিচয় জানেনা। হয়তবা জানে শুধু ইমুর আকাশটা,যেটাতে সন্ধাররাতে উকি দেয় শুকতারাটা। কে জানে কি বুঝে পাগলটা শুকতারাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মিটিমিটি হাসে। কে জানে এই হাসিটার অর্থকি?
ইমু কি জানে???????????????????

Likes ১২ Comments
০ Share