নক্ষত্র ব্লগে সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতার ১ম পর্বের পুরস্কার বিতরনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সেই উপস্থিতি আর নক্ষত্র ব্লগ নিয়ে আমার অনুভুতির কথা এই পোস্টে বলব। অত্যধিক ব্যস্ততার কারনে পোস্ট দিতে দেরি হয়ে গেল। একই বিষয়ে ফেরদৌসা রুহি ও সুমন আহমেদ পোস্ট দিয়েছেন। যে বিষয়গুলো তাদের পোস্টে এসেছে তা এখানে বলব না, যদিও আমারো অনেকক্ষেত্রে তাদের মত অনুভুতি হয়েছে। আগ্রহীরা ফেরদৌসা রুহি এবং সুমন আহমেদের পোস্ট ঘুরে আসতে পারেন।
অবতরণিকাঃ
পান্থপথ যাচ্ছি বাসে। উদ্দেশ্য পুরস্কার গ্রহণ। বাসে বসে আছি । দেখি একজন বেশ বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে কাঁপছেন, কোন সিট পাননি বসার। আমি উঠে তাকে বসতে দিলাম। (এটা ভাল কাজ বা আমার মূল্যবোধ ঘটিত ব্যপার না, ছোট বেলার অভ্যাস।) আমার সিটের পেছনেই খিলখিল হাসির দুইজন আপু ছিলেন। একজন বললেন, ভাল মানুষ সাজল। অপরজন সাজতে যাবে কেন? একটা ভাল কাজ করল। তোর আমারও উচিত ছিল।
তারপর দুইজন যুক্তি পালটা যুক্তি দিচ্ছেন খুবই উত্তেজিত হয়ে, আমি ঘুরে তাদের তর্কযুদ্ধ দেখছি এটাও তারা খেয়াল করছেন না। একপর্যায়ে (যার ধারনা আমি ভাল সাজার চেষ্টা করেছি) বললেন, আসলে দেখ উনার পাছায় ফোড়াটোরা আছে মনে হয়! এইপর্যায়ে খিলখিল হাসির দুই আপু তো বটেই, বাসের যাদের কর্ণকুহরে এই অমৃতবাক্য প্রবেশ করেছে সবাই খিলখিল হাসি দিল। আমি নিজেও দিলাম!
[এইপর্যায়ে নিজের দেশবিষয়ক হতাশা আমাকে গ্রাস করে। নিজেকে অত্যন্ত বেকুব মনে হয়। কি করা উচিত?
পারস্যের পুরনো গল্প মনে আছে, পিতা পুত্র তাদের গাধা সহ কোথাও যাচ্ছে। পিতা গাধার পিঠে ছেলে যাচ্ছে হেটে। লোকের মন্তব্যঃ এতটুকু মাছুম বাচ্চা হেটে যায় আর এই বুড়া গাধার পিঠে চড়ে যায়!
লোকের মন্তব্য শুনে পুত্র গাধার পিঠে আর পিতা হেটে যাচ্ছেন। লোকের মন্তব্যঃ বুড়া বাপ যাচ্ছে হেটে আর ছেলেটা গাধার পিঠে আরামে যাচ্ছে! কি কুলাঙ্গার ছেলে!
তারা বিরক্ত হয়ে দুজনেই গাধার পিঠে উঠে বসে। তখন লোকের মন্তব্যঃ কি জালেম! রোগা একটা অবলা জীব! সেটার পিঠে দুজন উঠে বসে আছে!
পিতা পুত্র খুবই ফাপড়ে পড়ে গেছে। কি করা যায়? শেষে ভেবে তারা দুজনেই হেটে যাচ্ছে। গাধাও হেটে যাচ্ছে! এবার লোকের মন্তব্যঃ দুইটাই সাক্ষাত গাধা। এমন একটা গাধা থাকতেও কষ্ট করে হেটে যাচ্ছে!]
এই হল আমাদের দেশের অবস্থা!
বাকী কথাঃ
আমার কাজিনকে নিয়ে নক্ষত্র ব্লগ যে ভবনে সেখানে পৌছাই। পৌছে খোজাখুজির পরে, পাশা ভাই ও সুমন আহমেদের সহায়তায় নক্ষত্র অফিসে গিয়ে বসি। সেখানে সুমন আহমেদ সবার আগে পৌছে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। সময়ানুবর্তিতার জন্য সুমন আহমেদকে অভিনন্দন। ২য় স্থান কে এম রাকিবে্র। অভিনন্দন কে এম রাকিব!! তৃতীয় স্থান ফেরদৌসা রুহি। তাকেও অভিনন্দন।
কার্যালয়ে আগত সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল লেগেছে। সবাই আন্তরিক। নীল সাধু খুব স্বতঃস্ফুর্ত। তার রসবোধও ভাল। অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ তিনিই সঞ্চালনা করেছেন। কবি আলমগীর সরকার লিটন,এস এম পাশা রব্বানী চৌধুরী, নীল ভাবী, শহীদুল ইসলাম প্রামানিক ভাইয়ের ছেলে, আরুফুর ভাইসহ অনেকের সাথেই দেখা হল। তাদের সাথে কথা বলে ভাল লেগেছে। ভাল লেগেছে আকিফকে। মনে হয়েছে আকিফ চুপচাপ ছেলে(নাকি বয়জেষ্ঠদের ভেতরে এসে এই অবস্থা?) কথা বলেইনি প্রায়। তবে বিজি কাস্টমার যাকে বলে সে তাই। সারাক্ষণ হাত নাড়ছে, পা নাড়ছে, গালে হাত দিয়ে হঠাত এক ঝলক কি ভেবে নিচ্ছে। এই অল্প সময়ে কাউকে খেয়াল করা সম্ভব না, আকিফকেই খেয়াল করলাম। ভাল লেগেছে। আমি নিজে কম কথা বলা বান্দা। কিন্তু শুনতে ভাল লেগেছে অন্যদের কথা। ওখানে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, উপস্থিত ব্লগারদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে ছোট! এমনিতে নতুন ব্লগার। লেখার জন্য পুরস্কার আগে পেলেও ব্লগে লেখালেখি করে এই প্রথম পুরস্কার পেয়ে বেশ উত্তেজিত বলা যায়।
পুরস্কার বিজয়ীরা অনুভুতি ব্যক্ত করলেন, হাসি হাসি মুখে ক্যামেরায় মুখ প্রদর্শন করলেন। পুরস্কার হিসেবে ঢাউস সাইজের অভিধান দারুন, সাথে সনদপত্র। পুরস্কার হিসেবে পুস্তক চয়ন যথার্থ হয়েছে। ভাল লেগেছে সবার আন্তরিক ব্যবহার।
নক্ষত্র নতুন ব্লগ কিন্তু খুব অল্প সময়ে অনলাইনে বেশ আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। আমি একটি প্রিয় ব্লগ থেকে এখানে এসে ব্লগিং করছি ইদানিং। সৃজনশীলতার এরকম একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ। অবতরনিকায় যে সত্যি ঘটনাটির কথা বললাম সেটাই এদেশের বাস্তবতা। এখানে ভাল কোন কাজেই উতসাহ পাওয়া মুশকিল। নক্ষত্র কিন্তু সেই উতসাহ দেয়ার কাজটিই করছে। তাদের কাজের জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
আমি নক্ষত্রের উত্তরোত্তর অগ্রগতি কামনা করি। বিজয়ী, আয়োজকসহ সকল ব্লগারের জন্য শুভকামনা রইল।
Comments (31)
দাদা
বেশ হয়েছে কবিতা
শুভ কামনা----
ধন্যবাদ