১.
মোঃপুরের বাঁশবাড়ি রোড হয়ে রিকশায় যাওয়ার সময় দেখলাম বেশ হইচই। জটলাও। আমি অতি উৎসুক জীব। চালককে বললাম, মামা থামাও ত। ঘটনাটা বুঝি। যা বুঝলাম তার সারসংক্ষেপঃ
কতিপর মহানুভব যুবক ( সম্ভবত ৪/৫ জন) শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করবে। শীতার্তরা হাজির, সবকিছু প্রস্তুত, বিতরণ শুরু হবে। ক্যমেরাম্যানও প্রস্তুত মহানুভবতা ক্যামেরাবন্দী করবেন। এমন সময় কে প্রথম দানকার্যের ফটোতে হাসি দেবেন এই নিয়ে দুই মহানুভবের মধ্যে কাজিয়া এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিও হয়! ( বুঝলাম না এদের চাঁদির নিচে কি ৩ পাউন্ড মগজ না জৈব সার? একসাথে দুইজনে দন্ত বিকশিতকরলেই তো হত। তাছাড়া যুগলবন্দিও বড় রোম্যান্টিক শব্দ!)
আমি এসব ঘটনার ঘনঘটা দেখি নাই। কিন্তু একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে যাচাই করে এই ঘটনা উদ্ধার করেছি। কেবল দেখেছি দুই কাচামাচু যুবাপুরুষ। দুইজনের ব্লেজারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামের ব্যাজ।
যা সবচেয়ে মজারঃ হাতাহাতির ফাঁকে পর্যায়ে শীতার্তদের দুইজন ৩ টি কম্বল নিয়ে চম্পট দিয়েছেন!
রিক্সায় বসে বললাম, মামা কী বুঝলেন?
বলল, ‘মামা, ভাল কাম করতে শৌর্য( জি, পাঠক আপনি ঠিক ধরেছেন, একজন সাধারণ রিক্সাচালকের এরকম একটি শব্দ বলার সম্ভবনা কম , আসলে বলেছিল, কাছাকাছি উচ্চারনের আরেকটি শব্দ, সেটি উল্লেখ করছি না) বেশি থাকলেই খালি হয় না, লাগে ধৈর্য্য’
‘মামা আপনারে তো নোবেল দেয়া উচিত। বাড়ি কই?’
‘রংপুর’
পল্লীবন্ধুর এলাকার লোক। রসবোধ ভাল না হয়ে যাবে কই?
২.
জাতীয় জাদুঘরের সামনে দিয়ে যাবার সময় দেখি দুই লোকের মধ্যে ছোটখাট কাজিয়া চলছে। একজনের ( এই মুরুব্বি শৌখিন লোক, পোশাকই বলে দিচ্ছে) হাতে একটা বানর। তিনি বানরের ওজন মাপতে চান মেশিনে। মেশিনওয়ালা রাজি না। বানরওয়ালার যুক্তি মেশিনে যেহেতু লেখা নাই যে শুধু মানুষের ওজন মাপা হয়,তাই তার বানরের ওজন মাপতে হবে।
মেশিনওয়ালাঃ আমার মেশিনে বান্দরের ওজন মাপি না।
বানরওয়ালাঃ মাপবা না ক্যান, মাপতি হবে(কথার টোন, খুলনা কিংবা বলা যায়, দক্ষিন-পশ্চিম বাংলার লোকের মত)
মেশিনওয়ালাঃ ওই বান্দরে মেশিনে খাড়াইলে আমার মেশিন ভাঙবো।
বানরওয়ালাঃ মেশিন ভাঙবে না, ও ভদ্র বান্দর, মানুষের চাইতে ভাল(!!) দুই পায়ে দাঁড়ায়ে ওজন নেবে কলাম ত। ভাঙলি পরে তোমার মেশিনের দাম আমি দেব।
ঘটনার গন্ধ পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায়। আমাকে দেখে বানরওয়ালা বলল, তুমি মীমাংসা কর। যার কথা যৌক্তিক তার কথা হবে।
নিজেকে মনে হল নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বললাম, আগে বুঝতে হবে, আপনারা কে কোন দল, আওয়ামী না বিএনপি? যদি দুইজন দুইদল হন তাহলে আমি মীমাংসায় নাই।
মেশিনওয়ালাঃ ভাই এর মধ্যে এত প্যাচ আনতেছেন ক্যান? আমার মেশিন আমি বান্দরের ওজন মাপতে দিমু না শ্যাষ কথা।
ফাজলামি বাদ দিয়ে যখন সিরিয়াসলি সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছি, তখন একটা ফ্রেন্ড এসে হাজির। বলল, অমিতের(বন্ধু) জন্মদিন। ট্রিট আছে। জানতে পারলাম আয়োজন আইস্ক্রিম, তাও নাকি বড় বাজেটের। বানরের ওজন মাপা দেখা, আইস্ক্রিম খাওয়া দুইটাতেই আমার প্রবল লোভ। শেষ পর্যন্ত আইস্ক্রিম জয়যুক্ত হয়েছে আইস্ক্রিম জয়যুক্ত হয়েছে!কেননা আইস্ক্রিমে আমার আসক্তি বেশি। আইস্ক্রিম খেলেই আমার সোয়ামি ভিভকান্যান্ডকে (স্বামী বিবেকানন্দ এর ইংরেজি উচ্চারণ) মনে পড়ে যায়,
“জিভে প্রেম করে যেইজন
সেইজন চাখিছে আইস্ক্রিম”
কবিতাপ্রিয় মানুষ হিসেবে আধুনিক কবিতায়ও আইস্ক্রিম খুজে পেয়েছি। বিখ্যাত কবি ওয়ালেস স্টিভেনস এর কথাটা শুনুনঃ
Let the lamp affix its beam
The only emperor is the emperor of ice-cream!
তখন বলা হয় নাই। এখন এখানে বলিঃ বানরের ওজন অবশ্যই মাপতে দেয়া উচিত!
৩.
এভারেস্টে ওঠা সন্ধ্যায় ফার্মগেট থেকে বাসে ওঠার থেকে অনেক সহজ। বাজি ধরে বলতে পারি, আনা হোক মূসা ইব্রাহিমকে বলা হোক আধঘন্টার মধ্যে যে কোন বাসে উঠতে হবে, পারবে না। আর আমি কোন প্রতিভাধর বস্তু যে পারব? মিনিট দশেক চেষ্টা করে দেখলাম সম্ভাবনা ক্ষীন।
ভীড়ের মধ্যে এক বড় ভাই এসে বলল।।‘ভাইয়া কোথায় যাবা?”
“কল্যাণপুর”
“বড় ভাই হিসেবে একটা উপদেশ দেই। যতক্ষনে বাসে উঠবা, ততক্ষনে তিনবার বাসায় যাইতে পারবা। হাইটা চলে যাও”
(জিজ্ঞেস করে জানলামঃ বড় ভাই নিজে যাবেন শ্যামলী, কল্যানপুরের আগে। নিজে হেটে যাচ্ছেন না কেন কে জানে। নাকি একজন প্রতিযোগী কমালেন??)
আর কিছক্ষন চেষ্টা করেও পারলাম না।বেশি ঝুকিতেও গেলাম না, বলা ত যায় না গাড়ির নিচে পড়ে হয়ে গেলাম মেধাবি ছাত্র!!অথচ এর মধ্যেই দেখলামঃ ভারী এবং রাশভারী দুই একজন নারী ঠিকই বাসে উঠে যাচ্ছে!
উপদেশ খুব উপাদেয় জিনিশ হলেও এতে বদহজম হয়। জীবনে উপদেশ নামক উমদা চিজ আমার জীবনেও হজম হয় নাই। সেদিন কিন্তু হজম করে ফেললাম। ভাবলাম ভাই ত ঠিকই বলেছেন। তাছাড়াঃ
খোদা যেমন জিভ দিয়াছেন চাটতে(যা ই চাটি না কেন!!)
তেমন ঠ্যাং দিয়াছেন হাটতে।
অলস বলে যে দুর্নাম আছে তাও কাটানো যাবে। চন্দ্রিমা উদ্যানের(বিএনপি আমলে বলতে হবে জিয়া উদ্যান) পাশ দিয়ে মৃদুমন্দ হাওয়া খেতে খেতে আর কপোত-কপোতী দেখতে দেখতে বাসায় চলে গেলাম! খারাপ কী? আবুল হোসেন এর নাম নিয়ে দিলাম হাটা।
কিছু দূর আসার পর বুঝলাম মজা নাই। ক্লান্তি লাগে। এম্নিতেও সারাদিন বেশ পরিশ্রম হয়ে গেছে।রিক্সা দেখে
বললাম “মামা, কল্যাণপুর কত?”
“একশ”
হরতালে বেতাল ভাড়া চায় বলে প্রচলিত।সেই হরতালেও ৪০-৫০ এর বেশি চায় না!
আমার বগলের নিচ দিয়ে ফুড়ুত করে যেন কফিল জ্বীন উড়ে গেল!!জোরে হাটা দিলাম। এক হাটায় নিজের বাসার কলিং বেলে হাত।
[প্রতিটি ঘটনাই সত্যি। তবে ভাষা ব্যবহারে কিছুটা অতিরঞ্জন আছে। লেখার ভেতরের কিছু অংশ পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে, কিছু অংশ হয়নি।]
Comments (27)
শুদ্ধের ভিতরের শুদ্ধতা কেউ খুঁজে দেখে নাই, দেখেছে কেবল তার পাগলামি। যা মানুষের বাহ্যিক রূপ। কিন্তু শুদ্ধের ভিতরের রূপ ছিল কেবলি শুদ্ধ। নিঃস্বার্থ এক ভালো মানুষ। যারা তাকে চিনেছে বা বুঝেছে তারা তার কাছ থেকে পেয়েছে। যারা চিনে নাই বা বুঝে নাই, তারা তাকে হারিয়ে হায় হায় করেছে। মানুষকে যারা মনুষ্যত্ব দিয়ে বিচার না করে, ধর্ম গোষ্ঠী বর্ণ বা ধন দিয়ে বিচার করে, তারা আসলে মানুষ না। তারাই অমানুষ। বস্ত্র পরিধান করেও তার বিবস্ত্র থাকে। তাই তো তাদের সামনে শুদ্ধ উলঙ্গ হতে দ্বিধা করে নাই। কিন্তু যারা মানুষ ছিল, তাদের সামনে সে ঠিকই নিজের লজ্জাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করতো। শুদ্ধ মানুষকে গালি দিত না, কিন্তু অমানুষকে গালি দিতে ছাড়ত না। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দিয়েছেন গল্পটার মধ্য দিয়ে আযাহা। গল্পটা একটানা পড়ে আমি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছি। অনেকদিন এই ধরণের গল্প পড়া হয় নাই। ধন্যবাদ আপনাকে। এতদিন আপনার শুধু কবিতাই পড়ে এসেছি। প্রিয় চিঠি আয়োজন উপলক্ষ্যে আপনার চিঠিও পড়েছি। কিন্তু আপনার কোন গল্প এই প্রথম মনে হয় পড়লাম। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। আশা করছি আপনার আরও অনেক গল্প পাবো। কারণ গল্প লেখার হাতও আপনার অসাধারণ। গল্পটা আলো ব্লগে পড়েছিলাম। সেখানকার মন্তব্যটা কপিপেস্ট করলাম আযাহা, কিছু মনে করবেন না। অনুভূতিটা একই বলেই একই মন্তব্য এখানেও করলাম।
দাদা, আপনাকে সালাম এবং অনেক আন্তরিকতা.....অনেক দিন অনলাইনে আসতে পারি নি, আপনার পুর্নাগমনে আমি মুগ্ধ.....ভাল থাকবনে। আমি তেমন একটা অন্যদের লেখায় যেতে পারি না বলে আমার লেখায়ও মন্তব্য থাকে না......তবু মাঝের মধ্যে লেখা দিতে মন চাই এবং লজ্জাও কম নয়....