মুক্তিযুদ্ধ ৷ এটি একটি দেশকে শুধু যে ভৌগলিক স্বাধীনতাই এনে দেয় তা নয় ৷ বরং মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতা, বাস নিরাপত্তা সহ অন্যান্য সকল স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে বিষয়টি তারই নাম মুক্তিযুদ্ধ ৷ মুক্তিযুদ্ধ মানুষকে অন্যের অন্যায় অধিনস্থতা থেকে মুক্তি দেয় ৷ মুক্তিযুদ্ধ এনে দেয় মানুষকে এক অনাবিল স্বাধীনতা ৷ নিজেদের পরিবেশে নিজেদের মত করে চলাফেরার মত অনুকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ৷ এক কথায় একজন মুক্ত স্বাধীন সভ্য মানুষ মাত্রই যে ধরণের অধিকার এক্সপেক্ট করে, কিন্তু কোন অন্যায় শক্তি যদি সম্পূর্ণ অন্যায্য ভাবে তার সে অধিকারগুলো খর্ব করে চলে তাহলে একমাত্র মুক্তিযুদ্ধই পারে তার সেই অধিকারগুলো ফিরিয়ে আনতে ৷
ধর্ম পালন, সামাজিক কৃষ্টি কালচার, দেশীয় আচার-অনুষ্ঠান, শিক্ষা-সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক ও নিয়ম-কানুন সহ কোন ক্ষেত্রেই নিজস্বতা বা স্বকীয়তা বলতে কিছু থাকে না দেশ যদি পরাধীন থাকে ৷ সর্বক্ষেত্রেই আবদ্ধ থাকতে হয় পরাধীনতার শক্ত শৃঙ্খলে ৷ অন্যের কালচার, অন্যের আচার-সংস্কৃতি, অন্যের পোশাক-পরিচ্ছদ সবই পরে নিতে হয় নিজের গলে ৷ বাধ্য ৷ মনের বিরুদ্ধে হলেও ৷ এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নেই ৷ পরিস্থিতিটাই করে রাখা হয় এমন ৷ এযে কত কষ্টকর তা যে কখনো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ না হয়েছে উপলব্ধি করতে পারবে না সে ৷
হাজার কৃতজ্ঞতা সেই সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যারা নিজেদের জীবন বাজী রেখে আমাদেরকে এমন পরাধীনতার হাত থেকে রেহাই দিয়েছেন ৷ এনে দিয়েছেন মুক্ত অনাবিল স্বাধীনতা ৷ তাদের সেই ত্যাগের ফলেই হয়ত আজ আমরা মুক্ত আলো-বাতাস গায়ে মেখে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারছি ৷ লাল-সবুজের একটি অনিন্দ্য সুন্দর পতাকা পেয়েছি ৷ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি ৷
তবে একটি প্রশ্ন, দেশ স্বাধীন, এই কথার বাস্তবতা কতটুকু? স্বাধীনতাটা কি কেবল বইপত্র আর ইতিহাসেই সিমাবদ্ধ থাকার জিনিস নাকি এর বাস্তবতাও প্রয়োজন? মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যা পেয়েছি তাকে কি প্রকৃত স্বাধীনতা বলা যায় না তা শুধু আক্ষরিক ? আমরা যদি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দৃষ্টি দিই তাহলে দেখব, স্বাধীনতার ৪৩ তম বছর অতিবাহিত হতে চলল ৷ অথচ বাস্তবতায় আমরা এর কোনটিই পাইনি ৷ চিন্তা-চেতনায়, বাকক্ষমতায়, সামাজিক নিরাপত্তায়, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে- কোথাওই আজ না আছে কোন স্বাধীনতা, না আছে কোন নিরাপত্তা ৷ তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদেরকে যা যা দেয়ার দাবি করা হয় বাস্তবে তার কতটুকু পেলাম আমরা?
আবার যদি নিরাপত্তার বাইরে গিয়ে আমরা উন্নয়নের দিকে তাকাই, সেখানেও আমরা পিছিয়ে ৷ আমাদের অনেক পরে স্বাধীন হয়ে বহু দেশ আজ আমাদের চেয়েও অনেক উন্নত ৷ অথচ উন্নয়নের উপাদান আর সুযোগ প্রাপ্তিতে তাদের চেয়ে কোনক্রমেই আমার পিছিয়ে নই ৷ আবার শিল্প-সংস্কৃতিতেও আমরা অনুসরণ করি বিদেশী সংস্কৃতিকে ৷ পোশাক-পরিচ্ছদেও আমরা বিদেশী সাজার চেষ্টায় মত্ত ৷ এছাড়া নাকি স্মার্ট হওয়া যায় না ৷ ক্ষেত ক্ষেত লাগে ৷ তাহলেতো বলতেই হয়, মুক্তিযুদ্ধের আগেও আমরা ছিলাম পরাধীন, এখনও আমরা পরাধীন ৷ তখন ছিলাম ভৌগলিক দিক থেকে পরাধীন ৷ আর এখন আমরা চিন্তা চেতনায়, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পরাধীন ৷ এর নাম কি এগিয়ে যাওয়া, স্মার্টনেস? না, এর নাম এগিয়ে যাওয়া নয় ৷ এর নাম স্মার্টনেস নয় ৷ একে বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে তামাশা করা ৷ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা ৷
Comments (0)
ভালো লাগলো। আমার এই সময়ের জন্য খুবই উপযোগী একটি পোস্ট। কিন্তু আপনার লেখার মূল পয়েন্টগুলো বোল্ড করে দিতেন যদি তাহলে ভালো হতো আরও।