এক অদ্ভুত কারনে তবারক আলির আকাশে-বাতাশে আজ আনন্দের ঘনঘটা। ঘরের কোনায়, খাটের নীচে, আলমারির ড্রয়ারে, উঠোনে, পুকুরে, লাউয়ের মাচায়, যেখানেই চোখ যায় শুধু আনন্দ আর আনন্দ। তবারক আলিকে কুকুরে কামড়েছে!
সংসারে তবারক আলি একা। সাধ করে পাশের গ্রামের ফুলমতিকে বিয়ে করেছিল যুবককালে। বিয়ের মাস দুয়েকের মধ্যেই ফুলমতি ধরাধম ত্যাগ করে চলে গেল। ফুলমতির সাথে অভিমান করে আর বিয়ে করেনি তবারক আলি। তবারক আলির বড় দুই ভাই থাকে সৌদি আরব। গত দশ বছরে তারা দেশে আসেনি। ভাইয়েরা মাসে মাসে যে টাকা পাঠায় তাতে খুব ভালভাবে তবারক আলির দিন চলে যায়। তাই কর্ম করা লাগেনা। তাছারা ফুলমতি গত হওয়ার পর আর কোন কাজেও মন বসেনা তবারক আলির।
কিছুদিন ধরে হাঁপিয়ে উঠেছিল তবারক আলি। জীবনের তিব্র একঘেয়েমীতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল সে। সকাল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল সেই এক’ই রকম জীবন চরম নির্যাতনের মত লাগছিল। একটু অন্য রকমের সাধ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে। আত্মহত্যা করার কথা ভাবছিল মনে মনে। তার মাঝখানেই ঘটে গেল ঘটনা।
বড় রাস্তার পাশে প্রতিদিন যে কঙ্কালসার কুকুরটি মরার মত পড়ে থাকতো হঠাত কোথা থেকে সে অসুরের শক্তি পেল কে জানে! পরম আক্রশে সে ঝাপিয়ে পড়লো তবারক আলির উপর। সাথে সাথে বদলে গেল তবারক আলির জীবন। তবারক আলিকে গ্রামের সবাই পছন্দ করতো। আশেপাশে দু’তিন গ্রাম খবর হয়ে গেল যে, তবারক আলিকে কুকুরে কামড়েছে।
গ্রামের ছেলে-বুড় সবাই যে যেভাবে পারছে তবারক আলির সেবা করছে। কেউ ডাক্তার ডাকছে, কেউ ওষুধ আনছে, কেউ হাত পাখায় বাতাস করছে, কেউ গা মুছিয়ে দিচ্ছে, কেউ জ্যান্ত মাছের ঝোল আর কচি মুরগী রান্না করে আনছে। পাশের বাড়ির আব্দুলের মা তো কেঁদে কেটে অস্থির!
তবারক আলির একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র আসে। বিষাদের কলসী আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। পৃথিবীটাকে খুব সুন্দর লাগে হঠাতকরে! এই মানুষগুলোর জন্য খুব মায়া হয় তার। ভালবাসা জাগে মনে, মানুষের জন্য ভালবাসা। মানুষগুলোর জন্য কিছু করার সাধ জাগে। কীভাবে যেন সে বুঝতে পারে, যে জীবন মানুষের উপকারে আসেনা; সে জীবন কোন জীবন’ই না!
Comments (1)
valo laglo
ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা জানবেন ।
খুব সুন্দর কবিতাটি ।
ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা জানবেন ।