[আবৃত্তি শুনতে হলে ক্লিক করুন]
ইয়ারব
পাইকরহাটি
২২/১০/১৯৭১
মাগো,
তোমাকে দেখিনা প্রায় সাত মাস। মার্চের সাতাশে তোমার মুখটি শেষবারের মতো দেখে এসেছি সুবহে সাদিকের আগে। কুপি জ্বালিয়ে তুমি কেবলি তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে মোনাজাত করছিলে। কুপির আলোয় মোনাজাতরত তোমার শান্ত মুখটি গেঁথে আছে হৃদয়ে আমার। তোমাকে বলে আসতে পারিনি বলে ক্ষমা কোরো, মা। তোমার মতো এই দেশও যে আমার মা। এই দেশ তোমারও। ছাব্বিশে মার্চে বাবাকে যখন ধরে নিয়ে গেলো আইত্যা মাতবর আর তার চ্যালারা – তুমি বুকে পাথর বেঁধেছিলে দেখেই ভরসা পেয়েছিলাম আমাকে আপাতত কাছে না পেলেও তুমি ঠিক সামলে নেবে। তোমার মনের বল আমি জানি; তুমি দোয়া কোরো,মা। আমি ঠিক ফিরবো। বিজয় নিয়ে। রহমতের হাতে চিঠিটা পাঠাচ্ছি। এই কয়মাস যোগাযোগের কোনো সুযোগ পাইনি, মা। অন্তত এই চিঠিটা পেলে তুমি হয়তো ভরসা ফিরে পাবে বলেই লিখতে বসেছি আজ। আমি চলে আসার দশ দিনের মাথায় আইত্যা মাতবর রহিমাকে পাক-বাহিনীর ক্যাম্পে দিয়ে এসেছে – এ খবর আমি ঐ দিনই পেয়েছিলাম। আমরা সেদিন পাশের গ্রামেই ছিলাম আত্ম-গোপন করে। পরদিন সকালে বোনের ক্ষত-বিক্ষত নগ্ন লাশ আমি দেখেছিলাম গ্রামের ইস্কুল ঘরটার পিছনের দীঘিতে। বোনের সৎকারের ব্যবস্থা করতে না পারার কষ্ট বুকে চেপে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মা। ধরে নিয়ে যাবার সময় বাবার আর্ত চিৎকার, কুপির আলোয় মোনাজাতরত তোমার শান্ত মুখ আর বোনের নগ্ন লাশ আমাকে পাগল করে দিয়েছে। একেকটা অপারেশানে যাই আর এই তিনটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। দুরন্ত ষাঁড় যেমন শিঙ দিয়ে মাটির ঢিবি ফালা-ফালা করে ফেলে সেইভাবে আমি বেয়োনেট দিয়ে পাক-বাহিনীর মুসলিম নামধারী ঐ এযিদ বাহিনীর একেকটা পশুকে ফালা-ফালা করি – গুলিতে মরে গেছে জেনেও। শুনেছি আইত্যা মাতবর এখনো বেশ বহাল তবিয়তেই তার কুকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কুমোর পাড়ায় নিতাই আর মিতালীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে মিতালী আর তার বারো বছরের বোনটাকে নাকি আইত্যা মাতবরের বাড়িতেই আটকে রেখেছে। মাগো, এসব কথা বলে তোমার মনের আগুন দ্বিগুণ করে দিতে চাই না। তুমি শুধু দোয়া কোরো, মা। আমরা ঠিকই জিতবো। জয় আমাদের হবেই। আল্লাহ ঠিক তোমার দোয়া কবুল করবেন। মাগো, ভোর হয়ে আসছে। সূর্য ওঠার আগেই রহমতকে রওনা দিতে হবে। আমরাও চলে যাবো পাশের গ্রামের ক্যাম্পে। ওখানে রাতে একটা অপারেশানের পরিকল্পনা আছে। দেখা হবে, মাগো। স্বাধীন সূর্যের ভোরে।
ইতি
তোমার টুকু
(প্রতিযোগিতার জন্য লেখা চিঠিটি পূর্বে কোথাও প্রকাশিত নয়)
Comments (40)
দাদা
ঠিক বলেছেন
কিরে বাবা আফগানদের কি হিংসা
সারাদিন মাংস আর তন্দুর রুটি খায়। তাই মাথা গরম।
আফগানদের এ্যাটিচুড দুঃখজনক
রহমান ভাই বেয়াদপ। আচার আচরণ কোন কিছু শিক্ষা পাই নাই তারা। মূর্খের দল।