Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

হরি দাস পাল

৮ বছর আগে

ভোম্বলের বউ

ভোম্বল আমার কাছের বন্ধু ছিল কারন, আমরা স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে বোম বাষ্টিং খেলতাম। পৃথিবীর সবথেকে মজার খেলার মধ্যে বোম বাষ্টিং অন্যতম। এত কম পয়সায় এর চেয়ে বেশি বিনোদন আর কোন খেলাতেই নেই।

খেলার সরঞ্জাম বলতে একটা টেনিস বল ছাড়া কিছু না। প্রথমে বলটি উপরে ছুড়ে মারো। নিউটনের আপেলের মত বলটি যখন নিচে পরবে খপ করে ধরে, বলটি উপরে না উঠে নিচে নামলো কেন এসব অবান্তর কথা না ভেবে, যাকে সুবিধা ধিপ করে তার গায়ে মেরে দাও।

আমার কব্জিতে খুব বেশি জোর না থাকলেও হাতের এইম ঠিক ছিল ষোলআনা। তাছাড়া বল যত জোরেই গায়ের দিকে আসতো না কেন, আমি ধরে ফেলতাম। সুতরাং বেশির ভাগ সময় খেলা আমার নিয়ন্ত্রনে থাকতো। ভোম্বল আবার গায়ে গতরে একটু বেশি ছিল। বল ধরে মোটামুটি যেকোন এক দিকে ছুড়লেই ভোম্বলের গায়ে লেগে যেত। তবে ভোম্বলের বাস্তব জ্ঞান মন্দ ছিলনা। কিভাবে যেন আমার সাথে একদিন সন্ধি করে নিল। খেলার সময় ভোম্বল আমার কাছেই থাকবে। আমি বল ধরে ভোম্বলকে না দেখার ভান করে আর এক জনের গায়ে এইম করবো। সেই জন্যে ভোম্বল আমার কাছের বন্ধু ছিল।

তবে পৃথিবীতে কোনদিন একপেশে বন্ধুত্ব হয়না। বিনিময়ে আমি যা পেতাম তার মুল্য ছিল আরো বেশি। ভোম্বল ছিল ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আমি বল এইম করে মারতে জানতাম কিন্তু স্কুলে অংক নামের যে দুর্বোধ্য ধাঁধাঁটি ছিল তার রহস্য কোনদিন বুঝতে পারিনি। ভোম্বলের কাছে আবার অংক ছিল সকালে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়ার মত সোজা। সুতরাং অংক পরীক্ষার দিন ভোম্বলের খাতার দিকে আমাকে নিবিড় মনোযোগ দিতে হত। ভোম্বল’ও বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্যে খাতার উপর তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো না।

একদিনের ঘটনা। আমাদের ক্লাসের এক বান্ধবীর বাড়িতে তার চাচা-চাচী এসেছে বেড়াতে। আমি আর ভোম্বল ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম দেখি, আমাদের বান্ধবী’টি, অতিরিক্ত কিউট, গোল্টুস মার্কা তিন-চার বছরের এক মেয়ে কোলে নিয়ে বসে আছে। ভোম্বল চোখ মোটা করে বল্লো, কে রে গোল্টুস টা? বান্ধবী হেসে বল্লো, কাজিন। ভোম্বল গোল্টুসের সাথে খাতির করতে গিয়ে ধারালো নখের খামচি খেয়ে আহত হয়ে হাল ছেড়ে দিল। তারপর আমি ট্রাই মারলাম। সামটাইম, মিরাকল হ্যাপেন্স! গোল্টুস সিদ্ধ গোল আলুর মত গলে গেল। আমার কোল থেকে আর নামতেই চায়না। আমি গর্বিত সুরে বললাম, দেখলি ভোম্বল? এভাবেই পটাতে হয়। সেদিন বুঝিনি এই সামান্য কথাটি ভোম্বল মনে রাখবে।

তারপর অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছে। বোম বাষ্টিং খেলা জীবনের ধুলোবালিতে ঢাকা পরা বহু পুরাতন স্মৃতির পাতায় বন্দি। অংকের সাথে মিটে গিয়েছে জীবনের সকল লেনদেন। জীবনে বসন্ত এসেছে। এসেছে চলেও গেছে। কত বসন্তে আমি কোকিল হয়ে এডালে ওডালে বসে ডাকাডাকি করে কারো সারা না পেয়ে বিরহের কবিতা লেখা শুরু করেছি। এ সেই সময়ের কথা। সে এক বসন্তের কথা।

সেই বসন্তে বহুদিন পর ভোম্বলের সাথে দেখা। দেখেই আমি গালের হা আর বন্ধ করতে পারিনা, চোখের পলক সরাতে পারিনা। ভোম্বলকে দেখে নয়, ভোম্বলের পাশের ভয়ানক সুন্দরী মেয়েটিকে দেখে। জীবনে এই প্রথম আমার অনুভুতি হল, আমি কেন ভোম্বল হলাম না? ভোম্বল মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল,
শ্রীমতি নীরঞ্জনা দেবী, আমার ভবিতব্যা। আর এই হল আমার বন্ধু, হরিদাস পাল।

পরিচিত হয়ে ধন্য হলাম। তবে মেয়েটিকে আমার কেমন চেনা চেনা ঠেকলো। আমি দ্বিধান্বিত কন্ঠে বললাম, কোথায় যেন দেখেছি? ভোম্বল’ই মীমাংসা করে দিল, তুই ওকে দেখেছিস একবার। আমাদের স্কুলের বান্ধবী মালতি? ওর কাজিন।

আমি সব বুঝে গেলাম, তবুও বিশ্বাস হয়না। এই সেই? যে একদিন আমার কোলে উঠে আর নামতে চাইছিল না? আজ বাসন্তী শাড়ি পরে ভোম্বলের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে! কে জানে, আরো কি কি করছে! নাহ। আর ভাবতে গেলে আমি হয়তো হার্ট এ্যাটাক করে মরে যাব। থাক ভোম্বল, তুই সুখে থাক। একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে আমি নত মুখে বললাম, তাহলে আসি।

আমি কিছুদূর আসতেই ভোম্বল ডাক দিল,
দেখলি হরি! এভাবেই পটাতে হয়। আমি শুধু মনে মনে একটা কথাই বলতে পারলাম, হায় ঈশ্বর!

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪২ Views