দিন পেরুলেই এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল থেকে মাথা তোলার সময় পাচ্ছেনা। ঠিক এই সময়ে জেলখানায় বসে দু:খে মাথার চুল ছিড়ছে কাজী রায়হান রাহী আর তার বন্ধু উচ্ছাস।
হ্যা তারাও পরীক্ষার্থী। রাহীর বয়স মাত্র সতের বছর। চিটাগাং কলেজের মেধাবী ছাত্র। তার মা জেলের বাইরে বিলাপ করছেন। ছেলে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার আগের দিন জেলখানায় বন্দী। চোখের সামনে দেখছেন ছেলের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবিষ্যৎ।
রাহীকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানেন? সে নাকি কিছু মুমিনের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে! সে একজন ব্লগার, #জামাত শিবিরের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে। কতটা ঠুনকো আমাদের ধর্মানুভূতি! সতের বছরের একটা ছেলের কথায় সেই অনুভূতি মাথাচড়া দিয়ে উঠে।
রাহী তার পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে কলেজে যাচ্ছিল। পথে একদল জামাত শিবির ক্যাডার পথরোধ করে প্রচন্ড মারপিট করে। লোকজনের ভিড় জমে, পুলিশ আসে। পুলিশ গ্রেপ্তার করে মারধরের শিকার রাহী আর উচ্ছাসকে। শিবিরকর্মীদের লোমও স্পর্শ করেনি! ধর্মানুভূতি! সে তো মারাত্মক ব্যাপার! মারপিট, মানুষ খুম, ধর্ষণ তো ধর্মানুভূতির তুলনায় দুগ্ধপোষ্য শিশু। তাকে গ্রেপ্তার করা হল আইসিটি আইনে, ৫৭ ধারায়। জামিন আবেদন নাকচ করে জেলখানায় প্রেরণ করা হল। সবচেয়ে দু:খের ব্যাপার, রাহীর উকিল তার পক্ষে মামলা পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানায়, কারণ তার ধর্মানুভূতিও আঘাতে জর্জরিত।
মজার ব্যাপার হল, আইসিটি আইনে নিয়মিত হত্যার হুমকি দেয়া জামাতিদের কখনো ধরা হয়নি, চটি পেজের এডমিনকে ধরা হয়নি, ফারাবি শফিউর রহমানের মত সন্ত্রাসীকে ধরা হয়নি। ধরা হল সতের বছরের সেই ছেলেটাকে, দিন পেরুলে যার এইচএসসি পরীক্ষা। যে ছেলেটি #জামাতিদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করে, যে গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লেখালেখি করে।
আমি নিজেকে খুব অসহায় আর অনিরাপদ মনে করছি। হ্যা অনিরাপদ, এই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও। যারা ধর্মনিরপেক্ষতার(!) বাণী শোনায়। স্রেফ লেখালেখি যে সরকারের কাছে এতবড় অপরাধ, সেই সরকার কিভাবে আমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান দিবে?
রাহীর জীবন ধ্বংসের জন্য কি এই ধর্মনিরপেক্ষ(!) সরকার দায়ী থাকবে? আইসিটি আইনের প্রয়োগ বোধহয় কেবল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগারদের জন্য। কাজী রায়হান রাহী, সুব্রত শুভ আসিফ মহিউদ্দীনের জন্য! এই সরকার আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখায়।
মানুষকে হত্যার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে থাকে ফারাবি, একের পর এক প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মানুষকে উস্কে দিয়ে নিরাপদ থাকে #বাঁশেরকেল্লা, অশ্লীলতা ছড়িয়ে নিরাপদ থাকে চটি পেজ এডমিনরা!
ধিক্কার এই তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে।
রাহীর ব্যাপারটা আমি কেবল গতরাতে জানতে পারি। ফেসবুকে কয়েকদিন অনিয়মিত হয়ে পড়েছি। খবরটা শোনার পর রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি। রাহীর জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে শিউরে উঠেছি বারবার। পরীক্ষার দুইদিন আগে জেলখানায় আটকে থাকাটা কত ভয়ংকর আমি ভাবতেও পারিনা।
একটা দৃশ্যের কল্পনা আমাকে ঘুমুতে দেয়নি। আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি কিছু লোকের গোঁড়ামির প্রতিবাদ করেছিলাম বলে। দুইদিন পরে আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আমাকে জেলের চারদেয়ালের মাঝে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আমার মা বাবা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন। কারাগারের হত্যা, ধর্ষণ মামলার আসামিরাও আমাকে ঘৃণা করছে। কারণ ধর্মানুভূতি হত্যা ধর্ষণের চেয়ে মারাত্মক! আমাকে দশ বছরের সাজা দেয়া হতে পারে। আমি পটাশিয়াম সায়ানাইডের খোঁজ করছি। আত্মহত্যা করব বলে। একদল নষ্টের সাথে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
নিজেকে কল্পনা করুন তো এই চরিত্রের সাথে। যদি বিবেক কাঁদে তবে দোহাই লাগে প্রতিবাদ করুন।
কাজী রায়হান রাহীর পক্ষে জনমত গড়ে তুলুন। তার মুক্তি দাবি করুন। একটা ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেবেন না, প্লিজ।
৫৭ ধারায় আটকৃত কাজী রায়হান রাহী আর উচ্ছাসের নি:শর্ত মুক্তি চাই।
Comments (1)
নিচের লাইনগুলো কেমন ছন্দ ছাড়া মনে হল কবি (এটা আমার একান্ত নিজস্ব মতামত)। লিখতে থাকুন অবিরাম। শুভেচ্ছা সতত
দাদা
আধুনিক কবিতার ছন্দ লাগে না পড়তে গেলেই ছন্দ পাওয়া যায়
বেশ ভাল লাগল কবিতা অভিনন্দন কবি কে---------
লিখা চলুক অবিরাম...
শুভকামনা রইলো...