বলিল অশ্বত্থ সেই
-জীবনানন্দ দাশ
[আবৃত্তি শুনতে হলে ক্লিক করুন]
বলিল অশ্বত্থ ধীরেঃ কোনদিকে যাবে বলো-
তোমরা কোথায় যেতে চাও?
এতদিন পাশাপাশি ছিলে, আহা, ছিলে কত কাছে;
ম্লান খোড়ো ঘরগুলো – আজো তো দাঁড়ায়ে তারা আছে;
এইসব গৃহ মাঠ ছেড়ে দিয়ে কোনদিকে কোন পথে ফের
তোমরা যেতেছো চলে পাই নাকো টের!
বোঁচকা বেঁধেছ ঢের; ভোলো নাই ভাঙা বাটি ফুটো ঘটিটাও;
আবার কোথায় যেতে চাও?
পঞ্চাশ বছরও হয়নিকো, এইতো সেদিন
তোমাদের পিতামহ, বাবা, খুড়ো,জেঠা মহাশয়
-আজও আহা, তাহাদের কথা মনে হয়! –
এখানে মাঠের পারে জমি কিনে খোড়ো ঘর তুলে
এই দেশে এই পথে এইসব ঘাস ধান নিম জামরুলে
জীবনের ক্লান্তি ক্ষুধা আকাঙ্ক্ষার বেদনার শুধেছিলো ঋণ;
দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে সব দেখেছি যে, - মনেহয় যেনো সেইদিন!
এখানে তোমরা তবু থাকিবে না? যাবে চলে তবে কোন পথে ?
সেইপথে আরো শান্তি – আরো বুঝি সাধ?
আরো বুঝি জীবনের গভীর আস্বাদ?
তোমরা সেখানে গিয়ে তাই বুঝি বেঁধে রবে আকাঙ্ক্ষার ঘর!
যেখানেই যাও চলে হয় নাকো জীবনের কোনো রুপান্তর;
এক ক্ষুধা এক স্বপ্ন এক ব্যথা বিচ্ছেদের কাহিনী ধূসর
ম্লান চুলে দেখা দেবে যেখানেই বাঁধো গিয়ে আকাঙ্ক্ষার ঘর!
বলিল অশ্বত্থ সেই ন’ড়ে ন’ড়ে অন্ধকারে মাথার উপর।