শ্রমজীবী মানুষের কবিতা
পোশাক পরিচ্ছদ
-পূর্ণেন্দু পত্রী
[আবৃত্তি শুনতে হলে ক্লিক করুন]
নতুন জামা-জুতো পরলে পরিচয়হীন অন্যলোক হয়ে যাই আমি।
তখন নিজেকেই প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, কেমন আছেন? ভালো?
একবার বিদেশে গিয়েছিলাম অন্যলোকের ওভার-কোট পরে
সকাল সন্ধ্যে সেই ওভার-কোট পরা মানুষটাকে দেখে মনে হতো
মিলিটারী-কামড়ানো কোন রাজ্যের পলাতক রাষ্ট্রপতি।
এইসব দেখে শুনেই আমার ধারনা, মানুষের কোনো ধরাবাঁধা পোশাক
না থাকাই ভালো।
স্বাধীন চড়ুইয়ের মতো যখন যেরকম খুশী পোশাক – পরিচ্ছদে ঢুকে পড়ুক।
রমনীদের এতো ভালো লাগে এজন্যেই। প্রতিদিন নতুন। আলাদা আলাদা।
যেদিন সবুজ শাড়ি, যেনো ঘাড়ের কাছে ঝুঁকে পড়া লতানো জুঁইয়ের ডাল
হাত ধরে ডেকে নিয়ে যাবে ঝাউবনের গোপন আঁধারে, আগুণের উল্কি এঁকে দেবে হাতে, বুকে।
দাঁতে চিবোতে দেবে লাল লবঙ্গ।
যেদিন লাল শাড়ি, কোমরের ঢাল থেকে উঁকি মারে তুর্কি ছোরার বাঁট।
কমলা রঙের ছাপা-শাড়ি যেদিন, বুঝতে পারি এই সেই চিতা বাঘ
মোলায়েম উরুর উপর শুইয়ে যে আমাকে চেটেপুটে খাবে এখন।
বেশ মজা পাই, নিজেকে নানান পোশাক পরিচ্ছদে পুরে।
মাঝে মাঝে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করে তাগড়াই ঘোড়ার কেশরে,
মাঝে মাঝে টিয়া টুনটুনির পালকে।
একবার এক বিকলাঙ্গ জটায়ুর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম তার রক্তক্ষতময় ডানা,
একবার এক মৃত হরিণের কাছে তার ভ্রমণ-বিলাসী সোনালী ছাল।
বাঘের চেয়ে আমার অনেক ভালো লাগে জিরাফের ডোরা কিন্তু জিরাফের চেয়ে ভালো লাগে
বাঘের সম্রাট-সুলভ চালচলন।
এক একদিন খেলতে খেলতে হেরে গিয়ে শামুক গুগলীর মতো ছোট হয়ে যাই
তখন সর্বাঙ্গ কাতর হয়ে ওঠে সজারুর বর্শা ফলকের জন্যে।
এক একদিন কারখানা কিংবা কারখানার ম্যানেজার বাবু বুকের বোতলে
প্লাস্টিকের সরু স্ট্র ঢুকিয়ে লম্বা চুমুকে শুষে নেন সমস্ত জল, জল স্তম্ভ, জোয়ার।
তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, বন্ধুগন!
গন্ডারের চামড়া এনে দিতে পারেন কেউ?
অথবা বাইসনের শিঙ?