উনিশশো’ একাত্তর
-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
[আবৃত্তি শুনতে হলে ক্লিক করুন]
মা, তোমার কিশোরী কন্যাটি আজ নিরুদ্দেশ
মা, আমারও পিঠোপিঠি ছোট ভাইটি নেই
নভেম্বরে দারুণ দুর্দিনে তাকে শেষ দেখি
ঘোর অন্ধকারে একা ছুটে গেল রাইফেল উদ্যত।
এখন জয়ের দিন, এখন বন্যার মত জয়ের উল্লাস
জননীর চোখ শুকনো, হারানো কন্যার জন্য বৃষ্টি নামে
হাতখানি সামনে রাখা, যেন হাত দর্পণ হয়েছে
আমারও সময় নেই, মাঠে মাঠে কনিষ্ঠের লাশ খুঁজে ফিরি।
যে যায় সে চলে যায়, যারা আছে তারাই জেনেছে
একা একা হাহাকার; আজিজুর, আজিজুর শোন-
আমার হলুদ শার্ট তোকে দেবো কথা দেওয়া ছিল
বেহেস্তে যাবার আগে নিলিনা আমার দেহ ঘ্রাণ?
লিকলিকে লম্বা ছেলে যেন একটা চাবুক, চোয়ালে
কৈশোরের কাটা দাগ, মা’র চোখে আজও পোলাপান
চিরকাল জেদী! বাজি ফেলে নদীর গহ্বর থেকে মাটি তুলে আনতো
মশাল জ্বালিয়ে আমি ভাগারের হাড়-মুন্ডে চিনবো কি তাকে?
মা, তোমার লাবণ্যকে শেষ দেখি জুলাইয়ের তেসরা
শয়তানের তাড়া খেয়ে ঝাঁপ দিল ভরা বর্ষা নদীর পানিতে
জাল ফেলে তবু ও’কে টেনে তুললো, ছটফটাচ্ছে যেন এক জলকন্যা
ষ্টিমার ঘাটায় আমি তখন খুঁটির সঙ্গে পিছ-মোড়া বাঁধা।
কটা জন্তু নিয়ে গেল টেনে হিঁচড়ে, হঠাৎ লাবণ্য মুখ ফিরিয়ে
তাকালো সবার চোখে, দৃষ্টি নয়, দারুণ অশনি
ঐটুকু মেয়ে, তবু এক মুহূর্তেই তার রুপান্তর ত্রিকালমায়ায়
কুমারীর পবিত্রতা নদীকেও অভিশাপ দিয়ে গেল।
মা, তোমার লাবণ্যকে খুঁজেছি প্রান্তরময়, বাঙ্কারে ফক্স-হোলে
ছেঁড়া ব্রা, রক্তাক্ত শাড়ী – লুন্ঠিতা সতীর মত চিহ্ন পড়ে আছে
দূরে কাছে কয়েক লক্ষ আজিজুর অন্ধকার ফুঁড়ে আছে ধপধপে হাড়ে
কোথাও একটি হাত মাটি খিমচে ধরতে চেয়েছিল।
যে যায় সে চলে যায়, যারা আছে তারাই জেনেছে
বাঁ হাতের উল্টো পিঠে কান্না মুছে হাসি আনতে হয়
কবরে লুকিয়ে ঢোকে ফুলচোর, মধ্যরাত্রে ভেঙে যায় ঘুম
শিশুরা খেলার মধ্যে হাততালি দিয়ে ওঠে পাখিরাও এবার ফিরেছে...
Comments (12)
সামাজিক ভাবে অবহেলার শিকার বলেই আজ হিজরাদের এমন অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। আমরা মুখে অনেকি অধিকারের কথা বললেও ওদের সামনে দেখলে পালাই। এর জন্য লজ্জা না বরং ঘৃনা কাজ করে।
আপনার লেখা পড়ে বরা বরই অন্য রকম একটা অনুভূতি পাই। আজও তাই।
শুভকামনা।
যাক ৫০০ টাকায় সব দফারফা হয়ে গেল।আহা সবকিছু যদি এরকম ৫০০ টাকায় ঠিক হয়ে যেত।বা ৫০০০ টাকা দিয়ে হলে যদি ওদের জেন্ডার আইডেনটিটি ঠিক করা যেত।ওদের জন্য সমবেদনা আর আপনার টাকা গচ্ছায় সমবেদনা।
ভাল লেখার জন্য ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।
হাহাহাহাহাহা! মইদুলের সাথে আমিও হাসলাম। ভাল লেগেছে। আসলে ওরাতো সমাজ বঞ্চিত মানুষ। আমরা মুখে যতই বড় বড় বুলি ছাড়ি তার কিছুইতো করি না। তাদের ব্যাপারে কত কর্মসূচি হচ্ছে কত আইন হইল কিন্তু কোন কিছুইতো হইলো না্। আর এই দেশে কিছু হবেও না।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
তাদের ব্যাপারে শুধু কর্মসুচীই হয় বাস্তবায়ন হয় না। ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।