Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

হরি দাস পাল

৯ বছর আগে

নীলাদ্রি......(প্রতিযোগীতা, ক্যাটাগরি-২)

 

মেয়েটির শিউলী ফুলের মত শুভ্র গালে আর চুমু খাওয়া হয়না শুভংকরের। সপ্ন ভেঙে যায় মাঝ পথেই। আবার নতুন করে ওই এক’ই সপ্ন। সব দ্বিধা কাটিয়ে যখন’ই পাশে বসা মেয়েটির গাল স্পর্শ করতে যাবে ঠিক তখন’ই সপ্ন ফুরিয়ে যায়। এভাবে কতক্ষন চলার পর ঘুম ভাঙে শুভংকর বুঝতে পারে না। আলসেমীতে দেহটা একেবারে অবশ হয়ে আছে। বিছানা, বালিশ, কাথা’ও এলিয়ে পড়ে আছে আদুরে মেয়েটির মত করে। পুরাতন দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে শুভংকর মনে মনে একটু কৌতুক বোধ করলো। ১২টা বাজতে ৫ মিনিট বাকী। জীবনের ১২টা বাজতে কি এখনো ৫মিনিট বাকি আছে? এখনও কি ফেরা যায়?

টিউব লাইটের পাশে দেয়ালের গায়ে কয়েকটা টিকটিকি স্থায়ী বসবাস শুরু করেছে। ধ্যানমগ্ন কোন তপস্বীর মত তারা লাইটের পাশে বসে থাকে সারাক্ষন। রাতের বেলায় পোকামাকড় বেহুশের মত আলোর দিকে ছুটে আসে। আলোর প্রতি এই অন্ধ প্রেম পোকাগুলুকে টিকটিকির খাদ্যেে পরিনত করে। আমাদের মনুষ্য সমাজে’ও এই ধারা চালু আছে। আমরা কেউ টিকটিকি হয়ে বসে আছি, কেউ পোকা হয়ে টিকটিকির খাদ্য হচ্ছি রোজ। মাকড়োশার জালের ওপাশে ঝুলে থাকা নিঃসঙ্গ ক্যালেন্ডারটার দিকে চোখ পড়তেই শুভংকরের বুক ধপ করে ওঠে। আজ কত তারিখ?

যার ভয় ছিল ঠিক তাই হল। আজ ২৮শে শ্রাবনগতকাল ২৭শে শ্রাবন ছিল নীলাদ্রির জন্মদিন। মুহূর্তেই শুভংকরের লেট গুড মর্নিংটা তেতো হয়ে উঠলো। বালিশে, বিছানায়, ঘরের কোনায় কোনায়, জানলা পেরিয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়লো তিক্ততার রঙ। যদিও নীলাদ্রির কোন ঠিকানা আজ শুভংকরের জানা নেই। রঙিন খামে অনেকদিন কোন চিঠি আসেনি তার কাছে। হুট করে বেড়াতে যাওয়া হয়না বহুদিন। কোন প্রকার যোগাযোগ নেই, তবুও নীলাদ্রির জন্মদিনটা শুভংকর ভুলে যেতে চায়না। কিন্তু সে ভুলে যায় বারবার! অনেকদিন আগের এক ২৭শে শ্রাবন শুভংকর ভুলে গিয়েছিল বলে নীলাদ্রির অভিমান হয়েছিল খুব। সারাটাদিন না খেয়ে ছিল সে। শুভংকরের খুব জানতে ইচ্ছে করে, নীলাদ্রি গতকাল’ও কি উপোষ ছিল? সারাদিন ঘরে দরজা এটে বসেছিল মুখ ফুলিয়ে। নাকি লাল পাড়ির শাড়ি পরে, খোপায় ফুল গুজে বেড়াতে গিয়েছিল?

স্মৃতির বন্ধ পাতা একটি একটি করে খুলে যেতে থাকে। শুভংকর সেগুলো ঘেটঘুটে চেখে দেখে। একটি সময় ছিল যখন শুভংকরকে না দেখলে চোখ শুকিয়ে যেত নীলাদ্রির। শুভংকরের'ও চলতো না নীলাদ্রিকে ছাড়া। এখন দুজনার দেখা হয়না বহু-বহুদিন। দুজনার'ই দিব্যি চলে যাচ্ছে! অদ্ভুত নাহ? নিজেকেই প্রশ্ন করে সে।

হঠাৎ শুভংকরের মনে হয়, গতরাতে যে মেয়েটিকে স্বপ্নে দেখেছি সে নীলাদ্রি ছিল না তোহ? নাহ! নীলাদ্রি তো এত ফর্সা না। তবুও ঠোটের এক কোনায় সারাক্ষন লেগে থাকা এক টুকরো মিষ্টি হাসি, শরীরের ঠিক সেই রকম মিষ্টি একটা গন্ধ? সে নীলাদ্রি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না! এলোমেলো ভাবতে ভাবতে শুভংকর আবার ঘুমিয়ে পড়ে। একটা পরিচিত মিষ্টি গন্ধ ক্রমশ নীকটে আসে তার। সেই শ্বেতপরী আবার  সামনে এসে দাঁড়ায়। শুভংকর মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে। বহুদিন হয়ে গেছে সে নীলাদ্রিকে দেখেনি। অস্ফুটে বলে ওঠে, তুমি কি নীলাদ্রি? মেয়েটি ঠোট টিপে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা পরিচিত হাসি তার ঠোটের কোনা থেকে নীরবে ছড়িয়ে পড়েছে সমস্ত মুখে। যেন খুব মজা পাচ্ছে সে। শুভংকর আবার বলে, তুমি কি নীলাদ্রি? মেয়েটি নীরবতা ভেঙে কি যেন একটা বলতে যাবে অমনি শুভংকরের ঘুম ভেঙে গেল।

মেঘ ডাকছে। বাইরে বোধহয় বৃষ্টি হচ্ছে। দেয়ালের গায়ে টিকটিকিটা কি যেন একটা শিকার ধরেছে। শুভংকরের কাছে হঠাৎ করে সবকিছু ভ্রম বলে মনে হয়। যেন সবকিছু’ই মিথ্যে। বাইরের বৃষ্টি, দেয়ালের টিকটিকি, বিছানা, বালিশ, ঘুণে ধরা আলনা, বাসি থালা-বাসন এমনকি নিজেকেও! সত্যি মনে হয় শুধু নীলাদ্রিকে। পৃথিবীতে এখন একমাত্র সত্যি হল নীলাদ্রি.........নীলাদ্রি............

০ Likes ১ Comments ০ Share ৫৬৫ Views

Comments (1)

  • - সাইফুল ইসলাম

    আমার কাহিনী emoticons

    - মামুন

    আমাদের সবার কাহিনী :(

    - টোকাই

    ভালো লাগলো ।

    • - মামুন

      অনেক ধন্যবাদ ভাই।

      শুভ সকাল।