মাহবুবুল আলম
জঙ্গী স্টাইলে বিবৃতির মাধ্যমে চলছে সন্ত্রাসী কর্মসূচী
কোন পথে যাচ্ছে বিএনপি
টানা ৩২ দিন ধরে চলছে বিএনপি-জামায়াত তথা ২০ দলীয় জোটের অবরোধ এবং একই সাথে পরপর টানা দুই সপ্তার হরতাল। কিন্তু তাদের এই ধ্বংসাত্মক কাজে দেশের সাধারণ মানুষ দূরে থাক অংশগ্রহণ নেই দলের নেতাকর্মীদেরও। আন্দোলন সফলকরতে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে না থেকে যাত্রীবাহী গাড়িতেপেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ জঙ্গী কায়দায় সন্ত্রাস-নাশকতায় জড়িয়েপড়েছেবিএনপি ও জামায়াতের দেশবিরোধী অপশক্তি। তাদের এই সন্ত্রাস আশ্রিত কর্মসূচি এবং নাশকতার ছোবলে এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন মারা গেছে। এর মধ্যে অন্তত৫০জনকে হত্যা করা হয়েছে যাত্রীবাহী গাড়িতে পেট্রোবোমায় পুড়িয়ে। আর শত শত অগ্নিদগ্ধ মানুষ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে জীবন-মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। পুড়ে কয়লা হওয়া মানুষ ও তাদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠছে হাসপাতাল ও নাসিংহোমের পরিবেশ। এ ছাড়া তারাআগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে কয়েক হাজার যানবাহন। আন্দোলনের নামেবিএনপি-জামায়াতের লাগাতার এ নৃশংস ঘটনার কারণে জনমনে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।সারাদেশের মানুষের আপত্তির পরও এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল দিচ্ছেনখালেদা জিয়া। তবু সন্ত্রাসের মাধ্যমেই দেশকে সম্পূর্ণ অচল করার লক্ষ্যে অটল খালেদা জিয়াওতার সু-পুত্র! লন্ডনে নির্বাসিত তারেক জিয়া।
নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি বাদ দিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে জানমালেরব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে বিএনপি এখন জনরোষের মুখোমুখি।তাই প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের কোন না কোন প্রান্তে প্রতিদিনই বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নাশকতা ও পেট্রোলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারার প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। তাছাড়া, হরতাল অবরোধ চলাকালে কার নির্দেশে নাশকতা চালানো হচ্ছে, কে কোথাথেকে নির্দেশ দিচ্ছে এ নিয়ে খোদ বিএনপিরই অনেক নেতাকর্মী বিভ্রান্তও বিচলিত। তাদের মতে দলেরনিয়ন্ত্রণও এখন এক কেন্দ্রে নেই। কারণ, আন্দোলন শুরুর পর থেকেই দলের পক্ষথেকে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন পদে থাকা নেতাদের নামে দুপুরে একরকম, বিকেলেআরেকরকম এবং রাতে অন্য একরকম বিবৃতি আসছে।
সহযোগী এক দৈনিকের খবরে জানা গেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের এবারের আন্দোলনের ছক এঁকেছেস্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির চক্র। আর এ কারণেই এবারের আন্দোলনে দেশ ওজনগণের কোন স্বার্থকেই আমলে নিচ্ছে না তারা। আর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাজিয়াও যে কোন কিছুর বিনিময়ে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।আরএ জন্যই এবারের আন্দোলনে পেট্রোলবোমাসহ জঙ্গী কায়দায় কিছু নতুন কৌশলনেয়া হয়েছে। তাই তারা মনে করছেন দেশ ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। যে কোন পরিবেশ সৃষ্টি করে হলেও বর্তমান সরকারকে হটাতে হবে। সেই খবরে আরও জানা গেছে যে, ২০১৩ সালের পর জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরবর্তীতেজোটগতভাবে আন্দোলন করতে হলে জামায়াতের রূপরেখা অনুসারে সে আন্দোলন হতে হবে।তা না হলে জামায়াত সে আন্দোলনে সক্রিয় হবে না। তাই দশম জাতীয় সংসদনির্বাচনের পর জেলায় জেলায় জনসভাসহ খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় যে কর্মসূচীচলে তাতে তেমন সায় দেয়নি জামায়াত। তবে এবারের আন্দোলন শুরুর আগে জামায়াতএকটি রূপরেখা তৈরি করে খালেদা জিয়াকে দেখায়। লন্ডন থেকে তারেক রহমানওজামায়াতের আন্দোলনের কৌশল মেনে নেয়ার জন্য তার মাকে অনুরোধ করেন। তাইখালেদা জিয়া জামায়াতের রূপরেখা অনুসারেই আন্দোলনে সায় দেয়। তবে মাঝেমধ্যেবিএনপি জামায়াতের সমন্বয় না হওয়ায় আন্দোলন সম্পর্কে ভিন্ন রকম নির্দেশনাএলেও পরে আবার তা ঠিক করে নেয়া হয় বলে জানা গেছে।
কেন বিএনপি-জামায়াতের এ মরিয়া অবস্থান তা পর্যলোচনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষরা বলেছেন, ২০১৫ সাল বিএনপি জামায়াতের জন্য খুবই ক্রুসিয়াল টাইম কেননা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম শেষ পরিণতের দিকে যাবে২০১৫ সালে।এই সময়ে কয়েকজনের ফাঁসি হবে নিশ্চিত করে বলা যায়।২৫ আগস্ট হাসিনারও দলের উপর বোমা হামলার রায় বেরোবে ২০১৫ সালে।খালেদা জিয়ার দুর্নীতিমামলার কারক্রম পুরাদমে শুরু হবে ২০১৫ এ।জামাতকেসন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে ২০১৫ সালে।খালেদার ছেলের দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমশুরু হবে ২০১৫ সালে।এবং আরও অনেক গুরুতপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে মিমাংশাওহবে এ বছর।এসব কারণেই ২০১৫ সাল বিএনপি-জামায়াতের তথা ২০ দলীয় জোটের কাছেখুবই গুরুত্বপূর্ণ মরা-বাঁচার সংগ্রাম বলে মনে করছে বিএনপি-জামায়াত।এ সময়ের মধ্যে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারকে হটাতে না পারলে কিছুতেই সরকারের উপরোক্ত উল্লখিতকার্যক্রম বন্ধ করতেপারবে না।তাই সু-পরিকল্পিত ভাবেই বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধ হরতালের মাধ্যমে দেশ ধ্বংস ও আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারারসন্ত্রাসী মিশনে ঝাঁপিয়ে পরেছে।তারা একাই এ কাজ করছে না, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আইএসআইই বিএনপি-জামায়াত জোটকে অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস অাশ্রিত হরতার অবরোধ কর্মসূচি ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হওয়ার পাশাপাশি দাদতাগোষ্ঠী ও বিশ্বের বৃহত বলয়েরও সমর্থ হারাচ্ছে তারা। পেট্রোলবোমাসহ আন্দোলনের নামে নাশকতা চালিয়ে জনস্বার্থের বিঘ্ন ঘটানোর কারণেবিএনপি এখন বিদেশীদের সমর্থনও হারাচ্ছে। আন্দোলনের প্রথম দিকে সংলাপকরে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকারের প্রতি বিদেশী চাপ থাকলেওএখন উল্টো নাশকতা বন্ধ করার জন্য বিএনপিকেই চাপ দিচ্ছে বিদেশীরা। আন্দোলনেরনামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য চলতে থাকায় ক্ষুব্ধ বিদেশীরা একের পর এক বিবৃতিদিয়ে বিএনপিকে সাবধান করে দিচ্ছে। এতে বিএনপি এখন চরম বেকায়দায় পড়েছে।সম্প্রতি ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরা সরকারী দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেএকটি বৈঠক এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপিরনাশকতামূলক আন্দোলনের নিন্দা জানিয়েছেন। বিশেষ করে পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহমানুষ হত্যার ঘটনাকে তারা কিছুতেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে মেনে নিতে চাচ্ছেননা। তাই তারা এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা বন্ধ করার দাবিজানিয়েছেন। আর বিএনপি এতদিন মনে করেছিল প্রতিবেশী দেশ ভারত আওয়ামী লীগেরপ্রতি মুখ ফিরিয়ে নেবে। কিন্তুভারতের ক্ষমতাসীনবিজেপি সরকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিই আস্থা প্রকাশ করেছেনবলে জানা গেছে।
অদ্য ১১.০২.২০১৫দৈনিক জনকন্ঠে বিভাষ বাড়ৈ তার “গায়েবি বিবৃতিতে সন্ত্রাসী কর্মসূচী, খোদ বিএনপি নেতারা বিচলিত” শিরোনামের প্রতিবেদনে বলেছেন,‘চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ জোটের নামে বিএনপির শীর্ষনেতাদের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে দেয়া অব্যাহত নাশকতামূলক বিবৃতি নিয়ে চরমবিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন এমনকি গণমাধ্যমের সঙ্গেওকোন যোগাযোগ ছাড়াই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের মতো আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেবিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বিবৃতির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।নাশকতায় ব্যাপক গণঅসন্তোষের পরও একই কায়দায় দফায় দফায় বিএনপি-জামায়াত জোটেরডাকা কর্মসূচী নিয়ে দলের ভেতরেই তৈরি হয়েছে সংশয়। আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেবিএনপির নামে যে কর্মসূচী ঘোষণা করা হচ্ছে তাতে খালেদা জিয়ার সমর্থন নিয়েপ্রশ্ন উঠেছে দলের ভেতরেই। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব হাফিজ উদ্দীনেরবিবৃতি নিয়ে সংশয়ে আছে খোদ দলের মিডিয়া উইং। সিনিয়র নেতাদের অনেকেইআন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পাঠানো নাশকতামূলক কর্মসূচী নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘এসব কর্মসূচীতে চেয়ারপার্সনের আদৌ সমর্থন আছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই’।এদিকে এমন বিতর্কের মধ্যেই মঙ্গলবার আরও দুইদিন হরতালের বার্তা দিয়েবিএনপির নামে একটি বিবৃতি এসেছে গণমাধ্যমে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে পাঠানো ওই বার্তায় বলা হয়েছে, চলমান অবরোধের মধ্যেহরতালের কর্মসূচী বর্ধিত করে এখন তা বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল৬টা পর্যন্ত চলবে। ২০ দলীয় জোটের পক্ষে এই বিবৃতিতে গত কয়েক দিনের মতোআবারও অজ্ঞাত স্থানে থাকা যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের একটিস্বাক্ষর কেটে এনে বসানো হয়েছে। বিবৃতিটি দেখলেই স্বাক্ষর কেটে এনে বসানোরবিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। জানা গেছে, দলটির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে শীর্ষপর্যায়ে অনেক নেতাই আল-কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের মতোআন্ডারগ্রাউন্ড থেকে একের পর এক নাশকতামূলক কর্মসূচী দেয়ায় বিবৃত। এসবকর্মসূচীতে চেয়ারপার্সনের বাইরেও অদৃশ্য শক্তির হাত আছে বলেও মনে করছেনতারা। সিনিয়র অনেক নেতাকে অন্ধকারে রেখে কিছু নেতা চেয়ারপার্সন ও দলকেনাশকতার পথে ঠেলে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন অনেকে।”
সম্প্রতি সাংবাদিক কাজী সিরাজ বেসরকারী একটি টেলিভিশনের এক টক শোতে বলেছেন, বিএনপি চালাচ্ছে অফিস স্টাফরা। অফিস স্টাফ বলতে এখানে খালেদা জিয়ারকার্যালয়ের বেতনভুক্ত স্টাফরা। কাজী সিরাজ বিএনপিপন্থী সাংবাদিক হিসেবেপরিচিত হলেও বিএনপির সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে তিনি এমন মনোভাব পোষণ করেছেন।
বিএনপির নেতৃত্বহীন আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স নিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা ব্যঙ্গ-রসিকতা করে অনেকেই পোস্ট দিয়েছেন। জনকন্ঠের সৌজন্যে প্রাপ্ত সেসব পোস্ট এর কয়েকটি এখানে উদ্ধৃত করছি। সর্বশেষ বিএনপির যুগ্মসম্পাদক সালাউদ্দিনের নামে হরতাল দিয়ে বিবৃতি আসার পর হাসনাত নামক এক ফেইসবুক ইউজার তার ফেসবুকপেইজে বলেছেন, ‘বিবৃতি আর বোমা হামলা-জঙ্গীবাহিনীর সঙ্গে বিএনপি-রাজাকারজোটের সাদৃশ্য স্পষ্ট। জঙ্গীদের সঙ্গে কোন আলোচনা নয়, কঠোরতম উপায়ে দমন করাহোক এদের।’ রাজ্জাক লিখেছেন, তাই খালেদা জিয়া যতবার আন্দোলনের ডাক দেয়, ততবারই কোন সাড়া পায় না। তাই দেশের জনগণের ওপর ক্ষিপ্ত বর্বর খালেদা জিয়া।ক্ষিপ্ত খালেদা জিয়া এখন বাসে-ট্রাকে-রেলে পেট্রো