Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ছিটমহলবাসীরা ফিরে পেল তাদের স্বাধীনতা হাসিনার কুটনৈতিক সাফল্যের অনন্য নজীর

মাহবুবুল আলম

 

ছিটমহলবাসীরা ফিরে পেল তাদের স্বাধীনতা

হাসিনারকুটনৈতিকসাফল্যেরঅনন্যনজীর

 

সম্প্রতি বহুল প্রতীক্ষিত বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিসংবিধান সংশোধনী বিল ভারতীয়পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষরাজ্যসভায় পাস হয় বিলটিবিলের লক্ষ্য হচ্ছে, ১৯৭৪ সালেরমুজিব-ইন্দিরা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ছিটমহল ওঅপদখলীয় ভূমি বিনিময় এবং প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করারাজ্যসভায়পাসের পর লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসুষমা স্বরাজপার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিলটি উত্থাপিত হলে তা বিনা বাধায়গৃহীত হয়পরদিন তা লোকসভায় উত্থাপিত হয় এবং অভূতপূর্বভাবে কোন বিরোধিতাছাড়া ৩৩১ ভোটে দীর্ঘ ৬৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সর্বসম্মতভাবে বিলটিপাস হয়আরও একবার প্রমাণিত হলো যদি দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রেদূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব থাকেন তা হলে তাদের মধ্যে অনেক কঠিন সমস্যারই সহজসমাধান সম্ভব১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি পাসের ফলে দুদেশে আটকেপড়াপ্রায় ৫১হাজার জনগণের দীর্ঘদিনের দুর্দশার লাঘব হবেভারতের লোকসভায় এতদসংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল ৩২২-১ ভোটে পাস হয়এর মধ্য দিয়ে ছিটমহল হস্তান্তরেরজন্য সংবিধানে সংশোধনী আনল ভারতলোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর পরইভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন ছেড়ে বিরোধী বেঞ্চের দিকে এগিয়েযান এবং কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে ধন্যবাদ জানানবিল পাসে সহায়তারজন্য বিজু জনতা দলের (বিজেডি) নেতা পি মাহতাব, তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপবন্দ্যোপাধ্যায় ও এআইএডিএমকের পি বেনুগোপালকেও ধন্যবাদ জানান ভারতেরপ্রধানমন্ত্রী  স্থলসীমান্ত চুক্তি বিল লোকসভায় পাসের খবর নরেন্দ্রমোদি নিজেই ফোন করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানানভারতেরপ্রধানমন্ত্রী তার টুইটার বার্তায় তা জানানটুইটারে নরেন্দ্র মোদি লেখেন, সংবিধান সংশোধন বিল সংসদে পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অন্যউচ্চতায় পৌঁছলএর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা দুই দেশের সীমান্ত সমস্যারস্থায়ী সমাধান হলোশেখ হাসিনাও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশেরসরকার, জনগণ ও তার নিজের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেনপ্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী জানান, ভারতের লোকসভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হওয়ার পর পরই নরেন্দ্র মোদিপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন এবং অভিনন্দনজানাননরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ১৮ মে আপনার পিতাবাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের তত্কালীনপ্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে এ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেনআপনারসরকারের সময় সেই মে মাসে বিলটি পাস হলোপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিলটি পাস হওয়ায় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, বিরোধীদলীয় নেতা সোনিয়াগান্ধী, ভারত সরকার, লোকসভা ও রাজ্যসভার সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুবাংলাদেশের দুঃসময়ে সবসময়ই তারা আমাদেরপাশে ছিলএখনো আছে  

 

বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিসংবিধান সংশোধনী বিল ভারতীয়পার্লামেন্টেপাস হওয়ার পর পরই ছিটমহলবাসীদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। নারী-পুরুষ,শিশু-বৃদ্ধ সবেই মিলে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। একে অপরকে গলায় জড়িয়ে ধরে, কেউবা কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে যান। সবাই মিলে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন। অনেক মুরব্বী বলেন, শেখ সাহেব ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার জন্যই আজ আমরা স্বাধীনতা ফিরে পেলাম। আল্লাহ যেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হায়াত দারাজ করেন। তাছাড়া সারা দেশেই এ নিয়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। যে বিএনপি এতদিন মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে গোলামী চুক্তি হিসাবে অভিহিত করে রাজনীতি করেছে সেই বিএনপিও বাংলাদেশ-ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তিসংবিধান সংশোধনী বিল ভারতীয়পার্লামেন্টেপাস হওয়ার পর ভারত সরকার তথা মোদী সরকারকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ সরকারকেধন্যবাদ না জানিয়ে ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানানোয়খালেদার সমালোচনা করছেন দেশের সাধারণ মানুষ। প্রিয় পাঠক আপনারা সবাই হয়তো জানেন বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে দিল্লীতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যানিরসনকল্পে একটি চুক্তি করেছিলেনযাক নিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধী অনেক রাজনীতি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনাকে ভারতীয় সেবাদাস প্রমানিত করার নানাবিদ অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু ধর্মের কল যে বাতাসে নড়ে তা এদেশের মানুষ এতদিনে বেশ বুঝতে পেরেছেন।

 

এ পর্যায়ে অবার ফিরে আসি ছিট মহল প্রসংগে। অখণ্ড ভারত বিভক্ত করেভারত এবংপাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লগ্নে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দেরেডক্লিফের মানচিত্র বিভাজন থেকেই উদ্ভব ছিটমহলেরএক দেশের ভূখণ্ডে থেকে যায় অন্যদেশের অংশএতে এক অসহনীয় মানবিক সমস্যার উদ্ভব হয় ১৬২ টি ছিটমহল আছেদুই প্রতিবেশী দেশেএর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশেআরবাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতেএসব ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা ৫১হাজারসাম্প্রতিক (২০১১) জনগণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলে বসবাসরতলোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ১৪ হাজার২৪২৬৮ একরভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহলতার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একরবাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একরভারতীয় ছিটমহলগুলোর অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেসবের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯, পঞ্চগড়ে ৩৬, কুড়িগ্রামে ১২ ও নীলফামারিতেচারটি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছেঅপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অবস্থানভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেএর মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার ও চারটি জলপাইগুড়িজেলায় অবস্থিতকুচবিহার রাজ্যের কোচ রাজার জমিদারির কিছু অংশ রাজ্যের বাইরের বিভিন্ন থানা পঞ্চগড়, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট, ফুলবাড়ী ও ভুরুঙ্গামারিতেঅবস্থিত ছিলভারত ভাগের পর ওই আট থানা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হয়আর কুচবিহার একীভূত হয়পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেফলে ভারতের কিছু ভূখণ্ড আসে বাংলাদেশের কাছেআর বাংলাদেশের কিছু ভূখণ্ড যায় ভারতেএই ভূমিগুলোই হচ্ছে ছিটমহল

 

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কিভাবে এ সমস্যার উদ্ভব হলো। ১৯৪৭ সালে বাংলা ও পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেনলর্ড মাউন্টবেটনতাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল রেডক্লিফকে প্রধান করে সেবছরই গঠন করা হয় সীমানা নির্ধারণের কমিশন১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই লন্ডন থেকেভারতে আসেন রেডক্লিফমাত্র ছয় সপ্তাহের মাথায় ১৩ আগস্ট তিনি সীমানানির্ধারণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেনএর তিন দিন পর ১৬ আগস্ট জনসমক্ষেপ্রকাশ করা হয় সীমানার মানচিত্রকোনো রকম সুবিবেচনা ছাড়াই হুট করে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ায়সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথভাবে হয়নিঅভিযোগ রয়েছে, কমিশন সদস্যদেরনিষ্ক্রিয়তা আর জমিদার, নবাব, স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও চা-বাগানের মালিকেরানিজেদের স্বার্থে দেশভাগের সীমারেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলেছেআরউত্তরাধিকার সূত্রেই উপমহাদেশের বিভক্তির পর এই সমস্যা বয়ে বেড়াচ্ছে দুইদেশ১৯৫৮ সালের নেহেরু-নুন চক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ীর উত্তর দিকের অর্ধেকঅংশ ভারত এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর সংলগ্ন এলাকা পাবে বাংলাদেশচুক্তি অনুযায়ী বেরুবাড়ীর সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভারতের পক্ষ থেকে যথাযথ সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় তা আর সফলতার মুখ দেখেনি।

 

সমস্যার সৃষ্টি হয় ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানে দেশ বিভাজনের পরেযখন রংপুরচলে যায় পূর্ব পাকিস্থানে এবং কোচবিহার চলে যায় ভারতেসমস্যার শুরুএখানেইএই সমস্যা হবে জেনেই ব্রিটিশরা কিন্তু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলতারারেডক্লিফ কমিশনগঠন করে দেশবিভাজনের সীমানা নির্ধারণের কাজ করেছিলকিন্তু রেডক্লিফের অদূরদর্শিতা, উভয় দেশের রাজাদের স্বার্থ, স্থানীয়জমিদারদের লোভ, তৎকালীন কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বেরনিকটস্থ চা বাগান মালিক ও ভূস্বামীদের প্রতি স্বজনপোষণ করতে গিয়ে সীমানানির্ধারণের কাজটি সঠিকভাবে হতে পারেনিফলে একদিকে যেমন স্থানীয় মানুষেরসাথে আলোচনা ছাড়াই তাদেরকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে অন্যদেশে, অপরদিকে ছিটমহলএলাকাগুলির মানুষেরা হয়ে গিয়েছেন নিজভুমে পরবাসীসমস্যার শুরু সেখানেইবাংলাদেশের মানচিত্রের উত্তর-পশ্চিমাংশ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সীমান্তেরকাছাকাছি কয়েকটি জেলার অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূখ- দ্বীপের মতো ভাসছেঅপরদিকে ভারতের মানচিত্রেও তাই১৯৮১ সালে প্রকাশিত বুকার অব বুকারসপুরস্কারপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক উপন্যাস মিডনাইটস চিল্ড্রেন

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪১১ Views

Comments (0)

  • - সুমন সাহা

    আপনার লেখাতে বরাবর একধরনের আবেদন থাকে। সবগুলো লেখা পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে বিগত দুটি লেখা খুব মনোযোগ সহকারে পড়েছি। লেখাতে একধরনের প্রচ্ছন্ন ইশারা থাকে। ভালো লাগে।

    অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো প্রিয়।

    ভালো থাকুন। সবসময়। অনেক অনেক।

    - টোকাই

    সুন্দর ছিল । ভালো লাগলো ।