Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আল মামুন সানি

৯ বছর আগে

গল্প!

প্রথম পরিচ্ছেদঃ

 

অর্জুন তলা, একজন সাথি আপা এবং আমরা গুটিকয়েক জ্যান্ত মানব-মানবী। দিনগুলো ঠিক কেমন ছিল তা ব্যাখ্যা করা অন্তত আমার পক্ষে অনেক কষ্টসাধ্য একটা কাজ। এমনও দিন গ্যাছে ঐখানে একবার ঢুঁ মেরে না আসলে মনে হত সারাদিনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করাই হয় নি। পুকুরটার দিকে ঘুরে বসতেই আমরা বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করতাম। মজার ব্যাপার হল সাথি আপার চায়ের অসাধারণ একটা ক্ষমতা ছিল, সেই ক্ষমতার বলে তার চা প্রতিদিন স্বাদ আর রঙ পাল্টাতো। কিন্তু সেই চা খাওয়ার যোগ্যতা আর সাহস শুধু আমরাই পোষণ করতাম বৈকি। আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে বা কারা জায়গাটা আবিষ্কার করে এই নিয়ে আছে নানামত, তবে আমি যে করি নি সেটা আমি গর্বের সাথে স্বীকার করি।

কালি মন্দিরের এই পাশটাতে তেমন আসা হতো না আগে, একদিন বিকেলে অবশ্য শীতের বিকেল ছিল সেটা, বাসায় বসে থাকতে ভাল লাগছিলো না, বাইরে গিয়ে গরম চা খেতে ইচ্ছে করছিলো ভীষণ। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হয়ে সোজা ৬ নম্বর বাসে চরলাম চড়ে ফার্মগেট তারপর ৮ নম্বরে করে শাহবাগ। হেঁটে হেঁটে টিএসসি গেলাম, কিছুক্ষণ বসে থেকে শুভ্রাকে কল করলাম বললাম হল থেকে বেরো তাড়াতাড়ি। এইটা আমার আর শুভ্রার তিন নম্বর সাক্ষাৎ। দশ মিনিট পর ও’এলো তারপর আমরা ছবির হাটের দিকে রওয়ানা হলাম, রাস্তা পার হতেই সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছেলে শুভ্রাকে ডাক দিল, চাদর মুড়ি দেওয়া ছেলেটার সাইকেলের পেছনে ছোট্ট একটা ব্যাগ ছিলো, ব্যাগটার প্রায় ৭০ শতাংশ ছেঁড়া, চাদরের আড়ালে একটা এলোমেলো গোটানো হাতার পাঞ্জাবি। খুব তড়িঘড়ি করে শুভ্রাকে বললো “দীনারে দেখছিস! দেখলে বলিস, আমি ফোন করছিলাম, আমাকে কল করতে বলিস।আমি একটু পর আসতেছি।” হুট করে আবার সাইকেলে উঠে চলে গেল। আমাকে দেখার বা আমার সাথে পরিচয় হওয়ার প্রয়োজনও বোধ করলা না, তার চোখ আর সাইকেলের বেলের উপর রাখা হাতের নড়াচড়া দেখে এমনটাই বোঝা যাচ্ছিল।

  দ্বিতীয় পরিচ্ছেদঃ

হঠাৎ মাথায় কি যেন কাজ করলো শুভ্রাকে বললাম “ঐ টিএসসি তেই চা খাই চল। পরে যাবো ছবির হাটে।” শুভ্রা রাজিও হয়ে গেল, চটজলদি আবার রাস্তা পার হয়ে স্বপন মামার দোকানে গিয়ে বসলাম। গোলাপ-খুব ভাল একটা ছেলে। স্বপন মামার দোকানে কাজ করে, আমাদের দেখলেই দৌড় দিয়ে ছুটে আসে। আর কেমন আছেন বাই, এদ্দিন আহেন নাই যে- বলে মুখে বিরাট হাসি জুড়ে দেয়। “মাহিন আপা কই, ট্যাবটা লইয়া আইতে কইয়েন। গেম খেলুম!”

মাহিন এই গল্পের গল্পে আরো পরে ঢুকবে। অসাধারণ গলা,ওর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত গুলো আমি আমার ল্যাপটপে রেখে দিয়েছি। প্রায় রাতে মন খারাপ থাকলে ওর গান শুনে তারাদের সঙ্গে নিয়ে ঘুমোতে যাই। আড্ডার মাঝে মাহিন আর আকাশের গান না হলে আড্ডার মোমবাতি টা কিছুতেই জ্বলতে চায় না। আচ্ছা আকাশ হচ্ছে ঐ ছেলেটা যে সাইকেল আর ছেঁড়া ব্যাগ নিয়ে প্রথমবারের মত আমার চোখের সাটারে ধরা দিয়েছিল।

মূল গল্পতে আবার আসা যাক, গোলাপের সাময়িক উত্তেজনা থামিয়ে বলে উঠলাম “থাম তুই যা দুইডা চা নিয়ে আয়”। শুভ্রার সাথে তখনো আমার চেনা- শোনা-জানার একটা প্রাইমারী অবস্থা চলছিল। যদিও আরো সাত আট মাস আগে থেকে ওকে আমি চিনি কিন্তু ঐ চেনাটা ভার্চুয়াল জগত থেকে। সামনা সামনি এটা আমাদের তৃতীয় বার দেখা অবশ্য আগেও বলেছি। চা খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করলাম, পেছন থেকে আকাশ শুভ্রাকে ডাক দিল “এই দীনা আসবে একটু পর, আমার সাথে কথা হয়েছে পরে”। শুভ্রা একটা হাসি দিয়ে বললো “ওই এইটা আমার বন্ধু শুভ।” আমি মুচকি হাসি দিলাম, ছেলেটা খুব সুন্দর করে তার নাম টা বললো ছড়া দিয়ে।

বেগুনী রঙের পানি সবুজ শ্যামল বাতাস আমার নাম আ………কাশ ।।
হাসতে হাসতে পেটে ব্যথা ধরিয়ে দিল ছেলেটা। একটু আগে ভেবেছিলাম খুব মুডী। এখন দেখছি ছেলেটা বেশ রসিক আর হাসাতে দারুণ পটু। আকাশ সবসময় শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে। খুব স্পষ্ট করে প্রতিটি শব্দ উচ্চারণ করে। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম এই ছেলে হয়তো বাংলায় পড়ছে। যাই হোক অনেক এটা সেটা নিয়ে গল্প করার এক ফাঁকে দীনাও চলে এসছে। তারপর আমরা ছবির হাটের দিকে যাবো ঠিক করলাম, ভেতরে ঢুকার আগে আকাশ বললো চল ওই সাথি আপার দোকানে যাই, আমরা কালিমন্দিরের দিকে হাঁটতে থাকলাম আর আকাশকে ছ্যাকা খাওয়া পাবলিক বলে ক্ষ্যাপাতে আরম্ভ করে দিলো ওরা দুজন। আমিও তাল লাগালাম। আকাশ আমাকে তখন দাদা বলে সম্বোধন করলো। বললো দাদা তুমিও পচাচ্ছো আমাকে। আমরা বেশ হেসেহুসে সাথি আপা মানে গল্পের শুরুর অর্জুন তলার কাছে আসলাম। সাথি আপার সাথে সবাই খুব মজা করে কথা বলতে লাগলো। আবার চা খাবো কিনা এই জিজ্ঞাসে আমি বললাম হ্যা খাওয়া যায়, সাথে একটা সিগারেট নিয়ে এসো আকাশ। আকাশ একটা সিগারেট নিয়ে আসলো, আমি বলে উঠলাম তোমারটা। আকাশ হেসে উত্তরে বললো অবসরে আছি। ছেলেটার উতফুল্লতাটা কেন যেন মিথ্যে মনে হচ্ছিল, আড়ালে তার জোনাকি না হেসে বিষণ্ণতা কাদছে। চা সিগারেট খেতে খেতে আমি দীনাকে আমার স্টুডেন্টদের কথা বললাম “জানিস ওরা দুইটাই অংকে ফেল করছে। কিন্তু ভাগ্য ভাল অঙ্ক আমার সাবজেক্ট না। বেঁচে গেছি আমার সাবজেক্ট গুলাতে টেনে টুনে পাশ করছে।” আকাশ শুনে বললো আমিও করেছিলাম অংকে ফেল কিন্তু আমাকে শালারা আর এসএসসি দিতে দেয় নি প্রথম যাত্রায়। এদিকে শুভ্রা চুপ করে কি ভাবতে ভাবতে আমার কাছ থেকে সিগারেট টা নিয়ে চা-এ চুমুক দিয়ে দিব্যি সিগারেট টানতে শুরু করলো। পাশে কালি মন্দির, পুকুরটার ওই পাড়ে। অসাধারণ স্বর্গীয় শব্দ যেন ভেসে আসছে ওখান থেকে, ঢাকের শব্দ এতটা মনোযোগ দিয়ে আগে কখনো শুনিনি। আর উপরের দিকে তাকিয়ে আরো যুক্ত হলো ভাল লাগাটা। একটা টাওয়ার যেটা থেকে আলো এসে দূর আকাশে মিলিয়ে গ্যাছে। ঐ আলোটা একটা চাঁদ চাঁদ ফিল ক্রিয়েট করছে চারিদিকে। শুভ্রা এইটার নাম দিল নকল চাঁদ। আকাশ হঠাৎ গাওয়া শুরু করলো চন্দ্রবিন্দুর “ভিনদেশি তারা”। পুরো পরিবেশ টা আমাদেরকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠেছে। বিকেলে বাসা থেকে বের হওয়াটা এখন ষোলো কলায় রূপ নিচ্ছে। যেন জীবনানন্দের কোন কবিতায় আমরা ঢুকে গেছি, আর ডাল পালায় বসে বিভূতিভূষণ পড়ছি।

 

বাকি পরিচ্ছেদগুলো পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন দেয়া হবে।

০ Likes ২ Comments ০ Share ৪৬০ Views

Comments (2)

  • - ফাতিন আরফি

    অনেক ধন্যবাদ প্রিয়। 

     

    • - Azimul Haque

      সমাজতন্ত্রের শত্রু, সারাবিশ্বের মোড়ল আমেরিকার নাকের ডগায় বসে ছোট্ট দেশ কিউবায় যেভাবে তিনি সমাজতন্ত্র টিকিয়ে রেখেছেন বছরের পর বছর, তাতে আসলেই তিনি অনন্য এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে গেলেন। 

      দেশ-সমাজের যারা ভাল চান, তাদের এই উদাহরন পর্যবেক্ষনে রাখা দরকার। 

      জনাব নুর মোহাম্মদ, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।