কথিত নিখোঁজ হওয়ার ৬৪ দিন পর শেষ পর্যন্ত সালাহউদ্দিনের গুম নাটকের নাটকের অবসান হলো। ১০ মার্চ রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি নম্বর সড়কের একটিবাড়ির দোতলার ফ্ল্যাট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়েযায় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরাতাকে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন হাসিনা আহমেদ। কিন্তু আইনপ্রয়োগকারীসংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয় সালাহউদ্দিন কোথায় আছেন তারা জানেন না। বিএনপিরপক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সালাহউদ্দিনকে নিয়েগেছে। নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক চেষ্টারপরও তার সন্ধান মেলেনি।বিএনপি জোটের টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী এবং বিএনপিচেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকে কেন্দ্র করে দেশেরাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল তখন অজ্ঞাত স্থান থেকে এক মাসের বেশি সময় ধরেবিএনপির নামে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠান দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনআহমেদ। এভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপকসমালোচনা হয়।
১০ মে২০১৫ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াবিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনপর্যন্ত তার হদিস না পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি অবিলম্বেসালাহউদ্দিনকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন সালাহউদ্দিনআহমেদকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থারলোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। ২ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোন হদিস পাওয়াযাচ্ছে না।বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সহায়তায় স্বামীর খোঁজ চেয়ে হাসিনা আহমেদ উচ্চআদালতে যাওয়ার পর সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন আদালত। এরপরপুলিশের পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়, তারা এই বিএনপি নেতার কোন খোঁজ জানেনা। তবে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া গেল কি না সে বিষয়ে নিয়মিত অগ্রগতিপ্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট ১২ এপ্রিল আবেদনটি নিষ্পত্তিকরে দেয়।
নিখোঁজ হওয়ার ৬৪ দিন পর হদিস মিলেছেতার। তিনি এখন মেঘালয়ে।বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদাজিয়াসহ দলের অন্য নেতারা এবং সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ধারাবাহিকমিথ্যাচার চালিয়ে এতদিন বলে আসছিলেন সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসালাহউদ্দিন নিখোঁজের সঙ্গে জড়িত। এদিকে বিডিনিউজ জানায়, সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী ভারত থেকে স্বামীর ফোনপাওয়ার কথা বলার অন্তত ১২ ঘণ্টা আগে ওই নামে এক বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেমানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথা জানিয়েছে মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ। মেঘালয়রাজ্যের শিলং নগর পুলিশের সুপার বিবেক শ্যাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেরভারত প্রতিনিধিকে জানান, সোমবার রাতে শহরের গলফ লিংক এলাকা থেকে ৫৪ বছরবয়সী এক বাংলাদেশীকে তারা গ্রেফতার করেন। ওই ব্যক্তি পুলিশকে বলেন, তার নামসালাহউদ্দিন আহমেদ, তিনি বাংলাদেশী। কিন্তু ভ্রমণের কাগজপত্র দেখাতে নাপারায় পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। তাকে খুবই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল।কথাবার্তাও স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছিল না। এ কারণে আমরা তাকে মেঘালয়ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে পাঠানোরসিদ্ধান্ত নেই। জানা যায়, সালাহউদ্দিনকে ভারতে পাঠিয়ে দিয়ে বিএনপিহাইকমান্ড ও তার স্ত্রী হাসিনা খবরটি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয়পুলিশ মেঘালয় থেকে তাকে গ্রেফতারের পর তড়িঘড়ি করে সংবাদ মাধ্যমে এ খবরপ্রচার করেন হাসিনা আহমেদ। আর এ খবর প্রচারের আগে তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গেওদেখা করেন সালাহউদ্দিন এখন ভারতের মেঘালয় রাজ্যেরশিলংয়ের পাস্তুরহিল এলাকার মিম হ্যানস মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেনবলে খালেদা জিয়াকে জানান।
আমরা সবাই জানি যে, সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বেশ ক’টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যেটানা অবরোধ চলাকালেই একটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করাহয়। এ পরিস্থিতিতে টানা এক মাস অজ্ঞাত স্থানে থেকে বিএনপির পক্ষে গণমাধ্যমেবিবৃতি পাঠানোর পর গ্রেফতার এড়াতে ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকেস্বেচ্ছায় উধাও হন তিনি। রাজনৈতিক বিশ্লেষখদের ধারণা সালাহ উদ্দিনের উধাও হওয়ার বিষয়টি জানতেন বিএনপিচেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। কিন্তুএটাকে নিয়ে রাজনীতি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিলেন তারা। তাইধারাবাহিকভাবে মিথ্যাচার করছিলেন। কিন্তু সত্য কোনদিন চাপা থাকেনা বলেই অবশেষে ধরা পড়েগেলেন সালাহউদ্দিন। সেই সঙ্গে সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে সকল মিথ্যাচার ফাঁস হয়ে গেল বিএনপির।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও মনে করছে, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করেবিএনপি যে নোংরা রাজনীতি করতে চেয়েছিল তা আর সম্ভব হলো না। টানা ৯২ দিননাশকতামূলক আন্দোলন চালিয়ে বিএনপি জোট ব্যর্থ হওয়ার পর তাদের হাতে আর কোনঅস্ত্র ছিল না। তাই সালাহউদ্দিনের নিখোঁজের ঘটনাকে নিয়ে রাজনীতি করে মানুষের সহনুভূতি আদায় করে দীর্ঘ তিন মাসের নাশকতার চিত্র ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলতারা।
সালাহ উদ্দিনের এ স্বেচ্ছা অন্তর্ধান নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। একই সাথে বিএনপি ঘরানায়ও আলোচনা-সমালোচনা, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে সালাহউদ্দিনেরসন্ধান পাওয়ার পর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার বাসায়গিয়ে তার বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে ‘হটটকে’ লিপ্ত হন। শিমুল বিশ্বাস হাসিনা আহমেদকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আপনারস্বামী ভারতে পালিয়ে গেছে আপনি তা জেনেও আমাদের জানাননি কেন? এর জবাবেক্ষিপ্ত হয়ে হাসিনা বলেন, সালাহউদ্দিনকে ভারত পাঠিয়েছেন আপনারা। তাই এখনআপনারাই জানেন, আমি জানি না।’
তাই সালাহ উদ্দিনের সেচ্ছা অন্তর্ধান নিয়ে নানাবিধ গল্প-গুজবের ঢাল-পালা বিস্তার করছে। তিনি কিভাবে কোনপথে কোন উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়া পাড়ি জমালেন তা নিয়ে এক একজন এক এক রকম বিশ্লেশষণ করছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন সিলেট অঞ্চল দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত হয়ে নেপালেপালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তুনেপালে ভূমিকম্প হওয়ায় আর নেপাল যাওয়া হয়নি তার।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া এবং দুইমাস পর ভারত থেকে স্ত্রীকে ফোন দেয়ার ঘটনা বিএনপির মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রেররাজনীতির মুখোশকেই জাতির সামনে ফের উন্মোচিত করে দিয়েছে বলে মনে করছেনসরকার ও বিরোধী দলের নেতারা। তাৎক্ষণিকপ্রতিক্রিয়ায় সরকার ও বিরোধী দলের বেশ কজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আন্দোলন-নির্বাচনসহ সবক্ষেত্রে ব্যর্থ বিএনপি সালাহউদ্দিনকে ‘গুমের’ অভিযোগকরে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল, তা আজ জাতির সামনেপ্রমাণ হয়ে গেছে ০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৩৬ Views