Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আল মামুন সানি

৯ বছর আগে

একজন শুভ (১)

দ্বিতল বাসে দোতলার বা-পাশের একটা সিটে বসে নিচের মানুষ দেখে দেখে সময় কাটাচ্ছে আমার বন্ধু শুভ। শুভ’কে আমি প্রথম দেখেছিলাম গতবছর কাঁটাবনের একটা চায়ের দোকানে। আমার পাশে বসে শব্দ করে চুমুক দিচ্ছিলো চায়ে। মুখ ভর্তি দাঁড়ি। ছেলেটাকে দেখে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। কেন ইচ্ছে করছিলো তা ঠিক মনে নেই। কথা বললাম। ভীষণ আন্তরিক। সব কথার জবাব খুব সোজা করেই দিচ্ছিল। নিজ থেকেই আমার ফোন নম্বরটা চেয়ে নিল।

তারপর থেকে অনেকটা রুটিন করেই দেখা করতাম আমরা। সারাদিন এখানে ওখানে বসে আড্ডা দিয়ে কাটাতাম। আমার থেকে তিন বছরের বড় ছেলেটা তবুও তুই করেই বলতাম। তেমন গুরুত্ব বহন করে না এই শুরুটা। হয়তো ছেলেটা খুব একা ছিল নয়তো আমি খুব একা ছিলাম। তাই এত দ্রুত বন্ধুত্ব হয়েছিল।

জ্যামের সময়ে বাসে বসে মানুষ দেখা শুভোর পছন্দের কাজগুলোর একটি। আজ ওর একটা ক্লাশ টেস্ট ছিলো। রাতে পড়া শেষ করে ঘুম দিয়ে উঠে দ্যাখে আর দশ মিনিট বাকি। ভাবলো পড়া যেহেতু শেষ তাই পরীক্ষা না দিলেও চলবে। আমাকে ফোন করে সদরঘাট আসতে বললো। বুড়িগঙ্গার কালো পানির গন্ধ অনেকদিন নাকে যায়নি। তাই পরীক্ষা বাদ দিয়ে গন্তব্য এখন বুড়িগঙ্গা।

বাস থেকে সে একটি মেয়েকে লক্ষ্য করছে অনেকক্ষণ ধরে। মেয়েটিকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। বারডেমের সামনে একা দাঁড়িয়ে মেয়েটা, চেহারার মধ্যে খুকিপনা আদল আছে, যদিও বিশোর্ধ হবে বয়স। জ্যাম ছাড়লো। মেয়েটাকে একা রেখেই বাসটা চলা শুরু করলো। পেছন ফিরে শুভ দেখলো মেয়েটা কাঁদছে এখন। শুভোর মনটা খারাপ  হয়ে গেল। শুভ এই মন খারাপ হওয়াটাকে জীবিত রাখতে চাচ্ছে। ভাবতে শুরু করলো এখন তার বাবা তাকে ফোন করে বলছে তোর মা আর নেই শুভ। হাউমাউ করে কান্না করছে সবাই। ফোনে কান্নার শব্দ শুনতে শুনতে শুভ বললো আচ্ছা আমি আসছি কিছুক্ষণ পর। মা মারা গেলে আসলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয় তা শুভোর জানা নেই। সত্যিই তো, এই মুহূর্তে যদি এই খবরটা পুনরায় বাস্তবে বেজে উঠে তখন কি করবে শুভ! বাস থেকে নেমে যাবে নাকি বুড়িগঙ্গার আকাশ দেখে তারপর বাসায় যাবে। শুভ কেমন যেন হয়ে গেল হঠাৎ ! কি ভাবছে সে এসব, কেন ভাবছে, শুধু শুধু মন খারাপ করার জন্য কেউ কি তার মায়ের মৃত্যুর কথা চিন্তা করতে পারে? যাই হোক বাদাম কিনলো পাঁচ টাকার । মুখে দিচ্ছে আর হাত বাড়িয়ে গাছের পাতা ছোঁবার চেষ্টা করছে। আবার ভাবতে শুরু করলো আচ্ছা বাবা মারা গেলে আমি কি সকালে উঠে রোজ বাজারে যাবো, আর যদি আপুটা মারা যায় তখন কি আমি আকাশের রঙের আয়োজন একা একাই দেখবো! চা করা শিখবো নিজে নিজে। আর আপুটার ছবি দেখে কাঁদবো নাকি আপুটার প্রিয় কবিতা আপুটাকে শোনাবো! শুভ একটা করে বাদাম জানালা দিয়ে বাইরে রিক্সার উপর ফেলছে, ওর হাত কাঁপছে। সাদা কালো বা নীল রঙের স্রোত স্লোগান দিচ্ছে শুভ একবার ভেবে দ্যাখ তুই মারা গেছিস। তুই কি সত্যিই বেঁচে আছিস!


চলবে......।।
২ Likes ৩ Comments ০ Share ৩২৭ Views