Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আল মাহমুদের জলবেশ্যায় ‘টান’ নির্মাণের গল্প

কবি আল মাহমুদের উপন্যাস ‘জলবেশ্যা’ অবলম্বনে নির্মাতা মুকুল রায় চৌধুরী নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্রটান’। নদীবিধৌত সুন্দরবন অঞ্চলে ভ্রাম্যমান সুন্দরী বন্য পতিতা নারীদের জীবনের গল্প নিয়ে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে উপন্যাসটি লিখেছিলেন আল মাহমুদ। তার সঙ্গে যুক্ত হলো নির্মাতা মুকুল রায় চৌধুরীর নির্মাণ কল্পনা। পাঠক শুনে হয়তো অবাক হবেন, ‘টানচলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কে ৮টি বাঘ ঘিরে ধরেছিলো। কুমিরের হাত থেকেও অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। ‘টান’ চলচ্চিত্রটি শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে ভারতে। তার আগে নির্মাতা মুকুল রায় চৌধুরী লিখেছেন চলচ্চিত্রটি নির্মাণের গল্প..

নক্ষত্র পাঠকদের জন্য লেখাটি প্রকাশিত হল- 
‘টান’ এর টানে সুন্দরবনে   আমি তখন একটি সংস্থার রুরাল ক্যাম্পেন করতে বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে ঘুরছি৷ সেই কাজেই হাজির হয়েছি কুয়াকাটায়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণতম প্রান্ত পটুয়াখালি৷ তারও শেষ কিনারায় কুয়াকাটা৷ তখন সবে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় তছনছ করে দিয়ে গিয়েছে জীবন, জনপদ৷ লক্ষ-লক্ষ মানুষ ঘরহারা৷ অসহায় নারীপুরুষ শিশু আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণশিবিরে৷ রাতে রিলিফ নিয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে বেড়াতেও হত৷ এমনই এক রাতে মাঝনদীতে স্টিমার খারাপ হয়ে গেল৷ ছোট্ট ডিঙিতে আমাদের নিয়ে আসা হল একটা চরে৷ বিচিত্র সে চর৷ রাত্রে জেগে ওঠে৷ জল থেকে নয়, জনসমাগমে৷ হাসি, কলরব উচ্ছ্বলতায়৷ শয়ে শয়ে নৌকা এসে ভেড়ে ভোগের তাগিদে৷ নারীপুরুষের ভিড় উপছে পড়ে৷ সেখানেই প্রথম দেখি উগ্র রূপসী বেদিনিদের৷ বিচিত্র তাদের বেশবাস, আচরণ, বিচরণ৷ তারা সব অন্য কথা বলে৷ দল বেঁধে ঘোরে৷ মূলত নৌকায় বাস৷ এক হাতে সাপ, অন্য হাতে তারা নৌকায় তুলে নেয় ব্যাপারিদের৷   আল মাহমুদের 'জলবেশ্যা' গল্পটা আমায় প্রথম শুনিয়েছিল গৌতম সেন (ভন্টা)৷ রামু বোসের আলিপুরের বাড়িতে তখন শ্যুটিং চলছে আমারই একটা সিরিয়ালের৷ ভন্টা ডিরেক্ট করছে৷ সেই রাতে আল মাহমুদের 'জলবেশ্যা' গল্পটা আমার মনে পড়ে গেল৷ ঢাকায় ফিরে সাগর পাবলিশার্স-এর জুয়েলকে জিজ্ঞেস করলাম বইটার কথা, ও আনিয়ে দিল৷ সেদিন থেকেই নিয়ে ছবি করার ভূতটা আমার মাথায় চেপে বসে৷ আমার গড়পারের বাড়ির অন্দরের দায়িত্ব যার হাতে, সেই সাবিত্রীর নিজের বাড়ি সাত জেলিয়ায়৷ গোসাবা থেকে ভটভটিতে দু-ঘণ্টার পথ৷ সকাল সাতটায় সাত জেলিয়া থেকে বেরিয়ে আমাদের বাড়িতে ফিরতে বিকেল তিনটে বাজত সাবিত্রীর৷ মাঝে মাঝে ঝড় ওঠে৷ নদী ফুঁসে উঠে ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘরবাড়ি, বাসনকোসন বিছানাবালিশ৷ খবর পেয়ে সাত সাতটা নদী পেরিয়ে সাবিত্রী যখন ছুটে যেত তখন সব শেষ৷ এইভাবে সাবিত্রীর ঘর বারবার নদী এসে নিয়ে গিয়েছে৷ সেই কবে থেকে দেখছি, দিনের পর দিন এইভাবে সাতটা নদী পেরিয়ে সাবিত্রীকে ছুটে যেতে৷ কোনওদিন ভাবিনি, ওই একই পথে দিনের পর দিন আমাকেও ছুটতে হবে৷

'জলবেশ্যা'র ছায়ায় 'টান' করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সুন্দরবনে কয়েকবার রেকি করতে যেতে হয়েছে৷ এর আগে শ্যুটিং করেছি ডাঙায়, যেখানে নদীর শাসন নেই৷ সুন্দরবনে শ্যুটিং সিডিউল ঠিক করতে হয় নদীর নিয়মে৷ জোয়ার ভাটার হিসেবে৷ চাইলেই স্পটে যাওয়া যায় না৷ রাত্রে শ্যুট করার খুব সমস্যা৷ প্রচণ্ড সাপের ভয়৷ যে বাঁধের ওপর দিয়ে ঘাটে যেতে হয়, তার তলায় সাপের বাস৷ আরও একটা বড় অসুবিধে, একসঙ্গে এতজন লোকের থাকার ব্যবস্থা৷ সকালে একসঙ্গে সকলকে রেডি করে স্পটে পৌঁছনো, শুনলাম 'জাপানিজ ওয়াইফ'-এর পরে সুন্দরবনে এতবড় শ্যুটিং আর হয়নি৷ জলজঙ্গলের এদিকটা চলে জেনারেটর-এ৷ একসঙ্গে একশো লোকের সব সুযোগ সুবিধা সামাল দেওয়া বেশ কঠিন৷   যাই হোক, এই সব নানা সমস্যা মাথায় নিয়ে শ্যুটিং শুরু হল৷ প্রায় এক মাসের সিডিউল৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন টাইগার সাফারির মলয় আর পবিত্র নন্দী৷ রেকি করে বালি টু, সোনাগাঁও আর আমলামেথিতে শ্যুটিং করার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা৷ জায়গাটা সজনেখালি, সুধন্যখালির কাছে৷ সজনেখালির উল্টোদিকে রিসর্ট৷ আমাদের একদলের থাকার ব্যবস্থা৷ বাকিরা বালি টু-র উল্টোদিকে পিরখালি জঙ্গলের কাছে হেল্প ট্যুরিজম-এ৷ প্রথম রাতে সোনাগা থেকে বালি আইল্যাণ্ড যাচ্ছি৷ স্টিমারে আমি একা৷ অন্ধকার নদীর বুকে স্টিমারের ছাদে বসে দেখলাম অন্ধকারে রাতের এক অদ্ভুত আলো৷ নদী, তারা আকাশ একসঙ্গে মিশলে দেখা যায় সে আলো৷ দেখলাম নদীর সঙ্গে মাটির গভীর প্রেম৷ কখনও কাছে এসে দু'জনে-দু'জনকে ভরিয়ে দেয়, কখনও দূরে সরে যায় বিরহে৷ এ এক অদ্ভুত 'টান'৷

শ্যুটিং শুরু হল দুর্গাদোয়ানি নদীর ওপর৷ একশ কুড়ি জনের টিম, চারটে বড় স্টিমার, ঋতুপর্ণা, রাজেশ, কৌশিক, দেবলীনা, চন্দনদের মতো স্টারেরা, আর আমার ক্যামেরাম্যান মনোজ - যাকে সামলানো সবচেয়ে কঠিন কাজ৷ এরমধ্যে আবার কলকাতা থেকে হাজির সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকরা৷ তাঁদের দায়িত্ব সামলান আমাদের ইপি শিবাশিস আর প্রযোজক সুরজিত্‍ হরি | ভোর থেকে বড়-বড় স্টিমার বোঝাই করে হাজার হাজার মানুষ শ্যুটিং জোনের সামনে চক্কর দিত৷ পুলিসি প্রহরায় কাজ করতে হত৷   যেদিন ঋতুর কাজ থাকত, সেদিন ওসি নিজেই চলে আসতেন৷ বেশিরভাগ শট ছিল ঋতু, রাজেশ আর সুমান্তকে নিয়ে৷ সুমান্ত চট্টোপাধ্যায়- একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার সাউথ-ইস্ট এশিয়ার ক্রিয়েটিভ হেড৷ আমার এক সময়ের সহকর্মী এর আগে কাজ করেছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সঙ্গে৷ ভীষণ ব্যস্ত৷ সে কোনওদিন আসত কোপেনহেগেন, কোনওদিন কায়রো থেকে৷ স্পটে একা ঠিক সময় পৌঁছে যেত৷ আর ঋতুকে লেক গার্ডেন্স থেকে আনা ছিল সবচেয়ে ডিফিকাল্ট৷ রাজেশেরও কোনও ঠিক নেই৷ এসেই বলত, চলে যাব৷ তিনটেয় বম্বের ফ্লাইট ধরতে হবে৷ এই তিনজনকে এক করা যে কী কঠিন ছিল! এক রাতে সুমান্ত আর ঋতুর ঘনিষ্ট দৃশ্যের শ্যুটিং৷ নৌকার ওপর৷ যেখানে শ্যুটিং করছি তার উলটো দিকেই কোর এরিয়া৷ সবে শট দিতে শুরু করেছে৷ হঠাত্‍ কাছেই বাঘের ডাক! সঙ্গে সঙ্গে ফরেষ্ট গার্ডদের-ফায়ারিং! প্যাক আপ করে ফিরে যেতে হল৷ শুনলাম যা, অবিশ্বাস্য!

এক-আধটা নয়, আটটা বাঘ নাকি জালের এপারে চলে এসেছে৷ সব বলাবলি করছিল, ঋতুকে দেখতেই নাকি দল বেঁধে৷ পরদিন ভোরে ওদের আর একটা সিন৷ হঠাত্‍ প্রচণ্ড বৃষ্টি৷ তিনটে স্টিমারে আমরা প্রায় একশ জন নদীর ওপর আটকে আছি৷ স্টিমার ঘাটে লাগানো যাচ্ছে না৷ মাঝ দরিয়ায়৷ দু'ঘন্টা ধরে কাক ভেজা ভিজে শ্যুটিং ক্যানসেল করতে হল বটে, কিন্তু ভোরের সেই টালমাটাল বর্ষণ, প্রকৃতির সে যে কী রূপ! ওহ, চিরকাল মনের পটে আঁকা থাকবে৷ কী ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য তার! এইভাবে প্রাকৃতিক কারণে দিনের পর দিন শ্যুটিং বাতিল করতে হয়েছে৷ তারপর জোয়ার-ভাঁটা৷ সকালে যেখানে জোয়ার, বিকেলে সেখানে এক হাঁটু কাদা৷ নৌকায় সবাইকে বসিয়ে সেই হাঁটু কাদা ঠেলে পৌঁছতে হয়ে স্পটে৷ এমনও হয়েছে, সকালে চড়ার ওপর ঘর বানানো হয়েছে৷ বিকেলে সেখানে পৌঁছে দেখি ঘরের মাথাটুকু শুধু জেগে আছে৷   আমাদের গাইড ছিলেন অনিলদা৷ সুন্দরবন টাইগার প্রজেক্টের ফিল্ড অফিসার৷ অনিলদা ছাড়া সুন্দরবনে শ্যুটিং করা সম্ভব ছিল না৷ বিশেষত ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট এবং কোথায় কী বিপদ হতে পারে তা আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া৷ একটা ভুল করেছিলাম৷ একটা সিন ছিল, ঋতু নদী থেকে স্নান করে নৌকায় উঠবে৷ ঘাট নেই৷ ঋতু জলে নামতে চাইছিল না৷ কিন্তু শটটা আমার চাই-ই৷ প্রায় জোর করেই নামালাম৷ অনিলদা এসে জোর করে ঋতুকে নৌকায় তুলে দিলেন৷ বললেন, নদীতে কুমির ভরা! কে বলেছে নামতে?   সাঙ্ঘাতিক কঠিন ছিল একটা গ্রাম্য মেলার দৃশ্য৷ যেখানে ডাকাতি হবে৷ বিদ্যাধরীর ধারে আমলামেথি গ্রামে দৃশ্যটা করব ঠিক করি৷ হাজার খানেক লোক নিয়ে শ্যুটিং| অনিলদা আর আমলামেথির মানুষজনের সাহায্য ও আন্তরিকতা ছাড়া সে দৃশ্যগ্রহণ সম্ভব ছিল না৷ গোসাবার একটি সাংস্কৃতিক দল আছে| নাম 'উজান'| দলটা পরিচালনা করেন দুলাল দা৷ দলের বেশিরভাগ অভিনেতাই 'জঙ্গল করে' অর্থাত্‍ জঙ্গলই তাঁদের জীবিকা৷ এঁরা অনেকেই 'টান'-এ অভিনয় করেছেন৷ গত শীতের একটা বড় সময় আমাদের সুন্দরবনে কেটেছে৷ ভোরের আলো ফোটার আগে শিশির ভেজা স্টিমারে বসে নদীর বুকে ঘোরা, কুয়াশা ছিঁড়ে প্রথম সূর্যের আলো, পারাপার হীন অগাধ জলধি - আমার স্মৃতির সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে রইল৷

২ Likes ৮ Comments ০ Share ৫৮০ Views

Comments (8)

  • - তাহমিদুর রহমান

    দাঁড়ান চা টা শেষ কইরা লই

    • - গোলাম মোস্তফা

      দাড়াই তে পারব না এখন  ৮৬০ কিমি গাড়ী ড্রাইভ করতে হবে  চা খাওা শেষ হলে পয়সা টা সঞ্চালক সাহেব এর কাছে দিয়ে গেলে হবে আজে বাকীতে কন চা নাই অনেক অনেক শুভ কামনা ভালথাকুন পাশে থাকুন 

    • Load more relies...
    - তাহমিদুর রহমান

    একমত দাদা

    • - গোলাম মোস্তফা

      কি সে একমত ? সেটা নোট করতে হবে তা না হলে ফাইন হবে 

    - রোদেলা

    সকাল থিকা হুদা চা দিতাছেন,আর কিছু নাই স্টকে?

    Load more comments...