ওই হারামজাদা , কী করস ?
হঠাৎ এহেন সম্বোধনে খানিকটা বিচলিত হয়ে পিছনে ফিরে তাকাল জাকির । দেখল তার রুমমেট সাজু তাকে ডাকছে ।
কী হইছে ?
অ্যাসাইনম্যান্ট করছোস ?
না।
করবিনা ? কাইলকাই তো দেয়া লাগব ।
কাইলকা ? পরশু না?
না চান্দু । কাইলকা ।
কস কী ? জালাইল্লা করছে ?
কী জানি ? চল জিগাইয়া আহি ।
জাকির দেশের এক স্বনামধন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির হরতাল এন্ড পিকেটিং ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ছাত্র । আর দশটা ছেলের জন্মের পর থেকে বাবা মা যেমন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখে , তার বেলায় ও তার বাবা মা তাকে পিকেটিং ইঞ্জিনিয়ার বানানো স্বপ্ন দেখেছে । এবং সে স্বপ্ন সত্যি করতে আজ সে এখানে চলে এসেছে । তবে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছেনা । সে ও তার রুমমেট সাজু দুজনই একই প্রকৃতির । তাদের মধ্যে জালাল সবচেয়ে বেশি ব্রিলিয়ান্ট ।
জালাল সেসময়ে একটা বই পড়ছিল । বইটার নাম “দি আর্টস অফ ব্রেকিং এন্ড ফায়ারিং ভেহিকেলস ” । লিখেছেন বিশিষ্ট সাবেক ছাত্রনেতা কুদ্দুস শামস । জালাল সারাদিন পড়ার উপর থাকে । দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা পড়ে । আর ক্লাসে সবচেয়ে বিরক্তিকর যে কাজটা করে তা হল , হিসাব করে ঠিক ক্লাস শেষ হবার মুহূর্তে স্যারকে কঠিন একটা প্রশ্ন করে বসে । ক্লাসের দৈর্ঘ্য বিনা কারনে বাড়ে । তাই ক্লাসের খুব কম ছাত্রই (জালালের মত যারা তারা বাদে) তাকে দেখতে পারে । তবে কোন অ্যাসাইনমেন্টের কাজে তার কাছে যেতে হয় বাধ্য হয়ে । সাজু ও জাকির ও আজ গেল ।
ওই জালাইল্লা অ্যাসাইনমেন্ট করছোস ? সাজু বলে উঠে ।
করছি । ক্যান , কী হইছে ?
কী অ্যাসাইনমেন্ট দিছে ?
স্যারে কইছে একটা গাড়ি বা সিএনজির কাচ ভাইঙ্গা স্যাররে দেহাইতে ।
কস কী ? ক্যামনে করমু ?
আরে শালা এইডাও কইয়া দিতে হইব তোগো ।
জাকির এবার নরম সুরে বলল , ভাই কী করমু কো । আমরা তো পারিনা ভাই । একটু দেখাইয়া দে না ?
তুই জানোস সেই সকাল দিয়া এখন পর্যন্ত ৬-৭টারে দেখাইছি একই জিনিস ।
ভাই তুই না ভালা । এমুন করিসনা । তোরে চা খাওয়ামুনে ।
আইচ্ছা চল । বলে জালাল শার্ট গায়ে দিল । একটা বাশ হাতে করে ওদেরকে নিয়ে বের হল । কিছুদুর যেতেই তারা দেখল একটা সিএনজি আসতেছে । জালাল বলল , দেখতাছোস একটা সিএনজি আইতাছে । এহন ওইডারে থামামু চল । এই বলে তারা সিএনজির সামনে গিয়ে দাড়াল । চালক বেচারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সিএনজি থামিয়ে দিল । জালাল সাজুর হাতে বাশ দিয়ে বলল , নে এইবার এই বাশটা দিয়া এইটার কাচ ভাং ।
কস কী ? ভিতরে যারা আছে ওগো বাইর করুমনা ।
গর্দভ ওগো পরে বাইর করিস । এহন তাড়াতাড়ি কাচ ভাং । পালাইতে হইব । সাজু দ্রুত করে কাচে বাড়ি দিল । কাচ ভেঙ্গে গেল । ভেতরে যাত্রীসিটে বসা মহিলাটা আতকে উঠল । জালাল কাচের কয়েক টুকরা হাতে নিয়ে ওদের নিয়ে দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেল ।
জাকির ও একই ভাবে একটি সিএনজির কাচ ভাঙল । এরপর তারা এক চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছে । তখন জাকির বলল , আচ্ছা যে সিএনজির কাচ ভাঙলাম তার ড্রাইভার বেচারার অনেক ক্ষতি হইছে , তাইনা ?
ওরে গর্দভ , মাইনষের কষ্টের কথা চিন্তা করলে আর তোমার পিকেটার হওন লাগবনা । যাইয়া অন্যকিছু পড় ।
কথাটা অবশ্য সত্য । এই বলে চায়ে চুমুক দেয় সাজু । তার মনে এখন অনেক শান্তি । কালকের অ্যাসাইনমেন্টের ঝামেলা শেষ । এখন খুব আরাম করে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং এ যাওয়া যাবে । ভাবতেই তাই মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেল ।
কী হইছে ? হাসোস ক্যান ? জালাল বলে উঠল । সাজু উত্তর দিলনা । সে এখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ । তার একটা ভাব আছেনা ?
Comments (3)
অনেক সুন্দর কবিতা।
সবারই এমন একটি স্মৃতির বই থাকে, আমারও আছে। মাঝে মাঝেই সেই বই খুলে পেছনে চলে যাই
হ্যা ফেরদৌসা, ঠিকই বলেছ, আসলেই আমার তোমার সবারই এমনি একটি স্মৃতির বই আছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে কবিতাটি পড়ে সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থেকো সব সময়।
খুব সুন্দর কবিতা।
অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে নুসরাত, কবিতাটি পড়ার জন্য। কেমন আছ তুমি? অনেক দিন পর তোমাক দেখলাম। অনেক অনেক ভালো থেকো।
বোন শিল্পী যে এত সুন্দর কবিতা লিখতে পারেন, আমার মতো আহাম্মক আগে ভালোভাবে খেয়ালই করেনি। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সালাম আবুহেনা ভাই। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে আপনাকে আমার ব্লগ ঘরে দেখে। না ভাই, আমি মোটেও ভালো লিখতে পারিনা, তবে যখন যা মনে আসে তাই লিখার চেষ্টা করি মাত্র। আর অবশ্যই আপনাদের দোয়া কামনা করি সব সময়ই। অনেক অনেক ধন্যবাদ হেনা ভাই, কবিতাটি পড়ে আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন ভাই সব সময়।