Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মুখোশের ফেরীওয়ালা

৮ বছর আগে লিখেছেন

একটু ঘুমুতে চায়... শহরটা...!!!!

শহরটা প্রায় চারশো বছরের পুরনো। কিন্তু তাই বলে আলিস্যি নেই, ভোর হয় সুর্য্য ওঠার আগেই। তারপর আস্তে ধীরে জেগে ওঠা, প্রার্থনা শেষে একটু হাটাহাটি। ছোট ছোট বাচ্চাদের বেনী দুলিয়ে স্কুলে যাওয়া, অথবা মিষ্টি রোদে বারান্দায় ধোয়া ওঠা চায়ের কাপ আর খবরের কাগজে শহরটা জেগে ওঠে বেশ কোমল ভাবেই। কিন্তু সেটাও অল্প সময়ের জন্যই। কারন পুব আকাশ থেকে সুর্য্যদেব আগুন ঝরানো শুরু করতেই ঝট করে শহরটা গতিশীল হয়ে ওঠে। এবং যথারীতি কোথাও না কোথাও গিট্টূ লেগে যাবে। আর তাতে প্রায় ঘন্টা পার করে, কারো বসের ঝাড়ী, কারো শিডিউল মিস হয়ে যাবে, হয়তোবা কারো সম্পর্কই ভেঙ্গে যাবে। তাতে এই শহরের কি আসে যায়। সে তো ইচ্ছে করে এমন করেনি, শহর বয়ে চষে বেড়ানো এই আমাদের একটুখানি ধৈর্য্যের অভাবেই তো এমন প্যাচ লেগে যায়। এরপর শুরু কাদা ছোড়াছুড়ি। এ ওর গায়ে, ও এর গায়ে। কিন্তু কেউ দোষ ঘাড়ে নিতে চায় না। তবে এই প্যাচও ছুটে যায়। আবার শুরু হয় ছোটাছুটি। স্বপ্নের পেছনে, জীবনের তাগিদে শুধু দৌড় আর দৌড়। কে কার আগে লক্ষ্যে পৌছায় তার পেছনেই ব্যাস্ত সময় পার করা। কিন্তু কে কাকে দেখছে বলুন তো? সবাই তো বেচে থাকতেই হিমসিম খাচ্ছে, এর মাঝে কার ঘরে নতুন কি এলো না গেল তা নিয়ে ভাববার সময় কি আর এই শহরের আছে? এরপর দুপুরে সুর্য্যদেব যখন উন্মাদ হয়ে চারপাশ ভষ্ম করে দিতে চাইছে, শহরটা তখন বয়সের ভারে একটুখানি ঝিমিয়ে পরে। কোন পার্কের ছায়ায় অথবা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোন ঘরে শহরটা কেমন যেন থমকে থাকে। এই সময়টাতে বড্ড আলসেমী লেগে যায়। এতগুলো বছর তো শুধু প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েই চলেছে, কিন্তু হাড় গোড় তো শত বছরের মরিচা ধরা। তা সে যাই হোক, এত কিছুর পরেও ঘুমাতে কিন্তু পারে না। ছোট বাচ্চারা যেমন দুপুরে আরাম কেদারায় শুয়ে আরাম করা দাদুর কাচা ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে বলে বেড়িয়ে নিয়ে আসতে। তেমনি এই শহরেও কিছু জীবন আছে একেবারে সতেজ, তারাই ঘুমুতে দেয় না। শহরের এতে কোন অসুবিধে হয় না। আস্তে আস্তে সুর্য্যদেবের মাথাটা ঠান্ডা হতে থাকে, আর শহরটাও আবার গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। এবার বাড়ী ফেরা, জীবন ক্ষয় করে যেই খাচাটা বানানো হচ্ছে দিনশেষে সেই খাচাতেই ফিরে যাওয়া। দুপুরের উন্মাদনা শেষে, সুর্য্যদেব বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তাই ঝিমুনি কাটতে না কাটতেই টুপ করে ডুবে যান। কার্তিক মাসের এই বিকেলটা উপভোগ করার আগেই, অন্ধকারের রানী হয়ে দৃশ্যপটে আসেন চন্দ্রাবতী। শুরু হয় শহরের আরেক জীবন। আলো আধারীর এই জীবনগুলো বড় রহস্যময়। রঙ্গীন বাতি আর লাউড স্পিকারের উন্মাতাল জীবঙ্গুলো বড্ড বেশী বেসামাল। কিচ্ছু করার নেই, শহরের কিছুই করার নেই। শহরের গায়ে নতুন জামা পরানো হয় প্রতি রাতেই। কালো অন্ধকারের মাঝে রাজপথ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ন ল্যম্পপোস্টগুলো নিয়ে ভালোই নক্সা হয়েছে জামাটায়। কিন্তু তাই বলে শহরটা থেমে নেই, এই শহরে জীবন যে, রাতেও স্বপ্ন খুজে বেড়ায়। কড়া লিপ্সটিক, আর বিদেশী মদের গন্ধে সেই জীবন তাদের নোংরামী ঢাকতেই গায়ে পড়ে থাকে সভ্যতার চাদর। তাতেও কিছু আসে যায় না এই শহরটার। একবিংশ শতাব্দীর এই রাতগুলো বোঝার আগ্রহ ছেড়ে দিয়েছে সেই কবেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই রাতগুলো বড় দীর্ঘ। ঘুমুতে ঘুমুতে সেই দুপুর রাত্রি পার হয়ে যায়। এই বয়সে এত অল্প সময় ঘুমুলে কি চলে। চন্দ্রাবতী যখন তার যৌবন বিলোতে বিলোতে প্রায় নিঃশ্ব হয়ে সুর্য্যদেবের অপেক্ষায় ধুকতে থাকেন, শহরটা তখনো ঘুমায় না। উত্তরের বাতাস শিষ দিয়ে কিছু স্বপ্ন ছড়িয়ে বেড়ায় নির্জন এই প্রবীন শহর জুড়ে। ঠিক তখন মনে হয় শহরটা কতবেশী পুরোনো। এই একবিংশ শতাব্দীতেও ঝিঝির ডাক শুনতে পাওয়া যায়, খুজে পাওয়া যায় সে পুরনো শহরটাকে। চারশো বছরের এই সিমেন্টের জঙ্গলের প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে কত শত বছরের ইতিহাস। কত সত্য মিথ্যার চাদেরে ঢেকে আছে শহরের জীবনগুলো। মাঝে মাঝে ভেসে আসে কান্না, এই সভ্যতার নীচে চাপা পড়া জীবন গুলো অশরীরি হয়ে ছুটে বেড়া এদিক ওদিক। এ কান্নাও শোনা যায় শেষ রাতে। যখন আরেকটা দিনের অপেক্ষায় প্রহন ঘুনছে কিছু নির্ঘুম চোখ। কিন্তু সেটিও বড় একঘেয়ে, খাচার মধ্যে থেকে কল্পনায় শুধু একটু ধানের শীষের উপরে শুধু একটি শিশির বিন্দুই ভেসে বেড়ায়। কিন্তু ঘাসে ডগায় জমে থাকা অজস্র মুক্তোগুলোর উপর দিয়ে খালি পায়ে হাটার যে কি আনন্দ সেটা নিতে হলে যে খাচা ভেঙ্গে বেরোতে হয়। কিন্তু এই চারশো বছরে কম যুদ্ধ-বিগ্রহ তো দেখেনি এই শহরটা। আর সেই ভয়েই এই খাচায় নিজেকে আটকে রেখেছে। বয়স তো আর কম হলো না, এখন না হয় অভিযানগুলো অন্য কারো জন্য তোলাই থাক। আর এই বুড়ো শহরটা বেচে থাক আরো শত বছর।
Likes Comments
০ Share

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    সত্য চলে গেলে সমাধী থাকবে

    অনেক ভাল লাগল

    • - মুদ্রা

      ধন্যবাদ

    - প্রলয় সাহা

    অনবদ্য দাদাভাই

    • - মুদ্রা

      ধন্যবাদ

    - মাসুম বাদল

    লিখা চলুক অবিরাম... emoticonsemoticonsemoticons

    • - মুদ্রা

      ধন্যবাদ