শেরপুরের গারো পাহাড়ের জনবসতি সংলগ্ন নয়াবাড়ির টিলা এখন বন্যহাতির অভয়ারন্য। রাতে এসব বন্যহাতি আশপাশের গ্রামের ধান ক্ষেতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি করছে। কৃষকরা দলবদ্ধভাবে হাতির পাল তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হচ্ছেই। শতাধিক হাতির এ পালটি ভোর হলেই চলে আসছে নয়াবাড়ির টিলায়। সারাদিন তারা সেখানে থাকে। এ যেন বন্যহাতির নিরাপদ টিলাভূমি। প্রায় দেড় মাস ধরে বন্যহাতির পাল এ টিলাতে।
প্রতিদিন হাতি দেখতে শতশত লোক যাচ্ছে ওই টিলায়। নয়ানিভিরাম পাহাড়ি টিলায় লোকজনের সমাগমে যেন গড়ে উঠছে এক পর্যটন এলাকা। অনেকে আবার প্রশ্নও তুলেন এখানে কেন পর্যটন করা হচ্ছেনা। কারণ হিসেবে বলেন, এখানে প্রকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছে সৌন্দর্য্যময়ী পাহাড়ি টিলা। চোখ ধাধাঁনো আর মনকে কেড়ে নেয়ার মতো ভ্রমন পিপাসুদের টিলায় নতুন করে দেখার সুযোগ হচ্ছে বন্যহাতির বিচরণ। কিভাবে বন্যহাতি দলবেধেঁ থাকে? কিভাবে একে অপরকে সহযোগীতা করে? কোন হাতির নেতৃত্বে তারা এক স্থান থেকে অন্যত্র যায়। সবই যেন বিচিত্র মনে হবে।
শেরপুুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের বালিজুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটের এ নয়াবাড়ির টিলা। প্রায় এক হাজার একর জুড়ে বিশাল উচুঁ ও সমতল এ টিলা ভূমি। যার চারিদিকে ছোট ছোট কয়েকটি টিলা ভূমি যেন এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে বন বাগান করা হতো। কিন্তু ক’বছর কাঠ চুরির কারণে এখানের বন বাগান উজার হয়েছে। এসব পরিত্যক্ত ভূমিতে আশপাশের লোকজন আদা, হলুদ, বেগুনসহ সবজির চাষাবাদ করছেন। নয়াবাড়ির টিলার পূর্বে হালুহাটি, দক্ষিণে মালাকোচা, পশ্চিমে হাতিবর ও উত্তরে ভারতের সীমানা। স্থানীয় ইউপি সদস্য ছুরহক আলী জানান, ভারতের পোড়াকাশিয়া এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বন্যহাতির একটি পাল পাহাড়ে আসে। দিনের বেলায় আশপাশের এলাকার ঝোঁপ জঙ্গলে থাকে আর রাতে হানা দেয় জনবসতি এলাকায়। ক্ষতি করে জানমালের। প্রায় দেড় মাস যাবত দিনের বেলায় শতাধিক হাতির ওই পালটি নয়াবাড়ির টিলায় থাকছে । তাই বন্যহাতির পাল দেখতে প্রতিদিন শতশত লোক আসছে।
স্থানীয় সমাজ কর্মী ব্রতীন মারাক, গোলজার হোসেন, গোলাপ হোসেনসহ নয়াবাড়ির টিলা পাহাড়ে হাতি দেখতে আসা অনেকে জানান, এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি বন্যহাতি বিশাল বহর দেখার সুযোগ পাবে দর্শনার্থীরা। তবে এখানে বন্যহাতির পাল কতদিন থাকবে তা কেউ বলতে পারছেনা। তাদের মতে, সরকারিভাবে এ টিলাভূমির আশপাশে বন্যহাতির জন্য প্রচুর খাদ্যের ব্যবস্থা করা হলে হয়তবা হাতির পাল এখানেই থাকবে। তাছাড়া এর চারপাশ ইটের দেয়াল করা হলে হয়তবা হাতির পালটি স্থায়ীভাবে রাখার মতো পরিবেশ গড়ে উঠবে। তাহলে এটি হবে দেশের বৃহত্তম বন্যহাতিসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র।