স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকা বর্তমানে একটি অন্যতম ও আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমন পিপাসুরা ছুটে আসেন তেলিয়াপাড়া চা বাগান এলাকায় অবস্থিত ব্যতিক্রমধর্মী এই স্মৃতিসৌধ দেখতে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কিংবা তেলিয়াপাড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার অভ্যনত্মরে চা বাগান বাংলোর কাছে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের অনন্য স্মৃতি ধারণ করে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে এই স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের নিকটেই লাল রংয়ের শাপলা ফুল শোভিত লেক এবং চা বাগানের অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য। যা দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে সহজেই।
রাইফেলের বুলেট আকৃতির স্মৃতিসৌধের সোনালী রং রোদ্রের উজ্জ্বল আলোকে ঝলমল করে। অপূর্ব এই স্থাপত্যকর্মের পাদদেশের ফলকে ‘২নং ৩ নং ৪নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ১৯৭৫ সালে উদ্বোধন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ্ তার হেড কোয়ার্টার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপন করেন। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তি বাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে উঠে। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ অপর কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডাররাও কার্যোপলক্ষে বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনা নায়কদের পদচারণায় মুখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ শে জুনের পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেডকোয়ার্টার তুলে নেয়া হয়। বর্তমানে তেলিয়াপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ এই স্মৃতিসৌধ রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। স্মৃতিসৌধ এলাকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিকল্পে ইতোমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চা বাগানের ঐতিহাসিক ডাকবাংলোকে যাদুঘরে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। যাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতি, ইতিহাস, দলিলপত্র রক্ষিত থাকবে। তার পাশে নির্মিত হবে স্মৃতিসৌধ। ৭১ ফুট উচু ও ৫০ ফুট বেদী সম্বলিত এ বেদীতে মার্বেল পাথরের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ সেক্টরের সকল শহীদদের নাম ও বিশেষ করে ৩ নং সেক্টরের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন কমান্ডারদের নাম লেখা থাকবে। আর এ জন্য তেলিয়াপাড়া রেল গেট থেকে ডাকবাংলো পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মান করা হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। আর এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সিলেটের পর্যটনে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।