ঢাকা থেকে বের হলেই সড়কপথে মাত্র চার ঘন্টায় পৌঁছা যায় টেকেরহাট। মাদারীপুর জেলার একটি বন্দর টেকেরহাট। খাল-বিল-ঝিল-নদী-নালা জলের মতো ছড়িয়ে রয়েছে এখানে। সবুজ-শ্যামল স্নিগ্ধতা নদীমাতৃক টেকেরহাটকে করেছে যেন আরও বৈচিত্র্যময় ও রূপসী। এখানে বিলের কাছে এলেই শোনা যায় বিরহী ঘুঘুর একটানা ডাক। এখানকার বিলে-ঝিলে ফুটে আছে শাপলা-সাদা, লাল কিংবা গোলাপি। দেখবেন এরই পাশে এক ঝাঁক রাজহাঁস আপন মনে খেলছে। এ দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে। রূপসী বাংলাকে আপন করে পেতে চাইলে একটিবারের জন্য হলেও টেকেরহাটে আসুন।
যেভাবে যাবেনঃ- ঢাকা থেকে টেকেরহাট যাওয়ার বাস ছাড়ে গাবতলী এবং সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে। সার্বিক,চন্দ্রা ,হানিফের যে কোনো একটি পরিবহনে উঠুন। সমায় লগবে চার ঘন্টা। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা।
যেভাবে থাকবেনঃ- রাত যাপন করার জন্য ডাকবংলো সওজের মিল্কভিটার গেস্ট হাউস রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য উলে¬খযোগ্য হোটেলের মধ্যে হোটেল সবুজ,হোটেল তানিয়া রয়েছে। এর যে কোনো একটিতে উঠতে পারেন।
যা যা দেখবেনঃ-এখানে কুমার নদীর তীরে মিল্কভিটার বিশাল এক কম্পাউন্ডে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনুমতি নিয়ে পাশেই কুমার নদীর ওপরে ব্রিজ। এই ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে পূর্ব-পশ্চিম যে দিকেই তাকান না কেন, দেকবেন কুমার নদী এঁকে-বেঁকে বয়ে গেছে। পানসি নৌকা নিয়ে মাঝি চলে যাচেছ। তখন তো মনে পড়বেই শচীব দেব বর্মনের গাওয়া ঝিলমিল ঝিলের জলে ঢেউ খেলিয়া যায় রে ...গানের কথাগুলো। কুমার নদীতে নৌবিহার করার জন্য নৌকা পাবেন। নৌকা নিয়ে দূরে বহু দূরে বিল-ঝিলের দিকে চলে যান। সামনে যা কিছু দেখবেন সবই যেন সবুজের আদিগন্ত সাগর। এসব দেখতে দেখতে মনে পড়ে কবির লেখা ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী। ফুলে ওফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনী গানের এ কথাগুলো! নয়নভোলা দৃশ্য দেখতে দেখতে বিলের কাছ থেকে হেঁটে আসুন।তখন বারবার চোখে পড়বেই কত না প্রজাতির পাখি। বিলে মাছ ধরার দৃশ্য দেখেও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকবেন। এখানকার নদী-খাল-বিল,পলাবন ভূমি, পুকুর-দিঘিতে এতই মাছ জম্মায় যে, তা এ এলাকার চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃও থাকে। এখানকার মৎস্য চাষিরা শুধু প্রাকৃতির মাছের ওপরই নির্র্ভর করেই বসে নেই। পুকুর-দিঘিতে চাষ করছে দেশি মাছ। যেমন-চিতল,আইড়, বোয়াল,টাকি শোল ,কই,মাগুর,চিংড়ি আরও কত কি! এসব পুকুর-ঘের ঘুরে দেখায়ও বেশ আনন্দ রয়েছে। এসব দেখে দেখে আপনিও হয়তো মাছ চাষে উৎসাহী হয়ে উঠবেন। এখানে প্রাচীন আমাদের মন্দির, জমিদার বাড়ি ,মঠ,ঐতিহাসিক রাজা রামমন্দির, অন্নপূর্নার মন্দির ,বালেশ্বরের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জমিদার অগ্নিপুরুষ চিও প্রিয় রায় চৌধুরীর বাড়ি ও সমাধিসৌধ, কবি কিরন চাঁদ দরবেশের বাড়িসহ অনেক জমিদার বাড়ি ওছড়িয়ে রয়েছে। ঘুরে ঘুরে এসবও দেখে নিন। গাঁয়ের পথে ভ্যান নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে ও যেতে পারে। হয় তো নতুন বন্ধুটি বলবে-তুমি যাবে ভাই,যাবে মোর সাথে/আমার ছোট গাঁয়/গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের রায় ...। ’গিয়ে দেখুন না,বন্ধু কতই না আতিথেয়তা দেখাবে। মনে রখবেন বন্ধুর মত বন্ধু পেলে টেকেরহাট গেলে এমনটি হয় ।জ্যোৎস্না রাতে টেকেরহাট ব্রিজের ওপর বসে থাকতে আরও বেশি আনন্দ...। তাই বারবার টেকেরহাটের কুমার নদীর তীরে ছুটে যেতে মন চাইবে।
কত টাকা খরচ হবেঃ- ২থেকে ৩দিন টেকেরহাটে থাকবেন ।এ ভ্রমনে প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ লাগবে ।