বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যেসব কবি-সাহিত্যিক তাদের লেখনীর মাধ্যমে ভারত উপমহাদেশের তরুণ সমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাদের মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম অন্যতম। মুক্তচিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, মুক্তসমাজ ও মুক্তসংস্কৃতি নির্মাণের কবি ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি গোঁড়ামি-ধর্মান্ধতা, জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও ছোট-বড় এসব কুসংস্কার ও সংকীর্ণতাকে কখনও আমলে নেননি। মানুষকে সব ধরনের চেতনার দৈন্যতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার জন্য শক্ত হাতে লিখেছেন অবিরাম। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ- দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের প্রতি মানুষের অত্যাচার এবং দাসত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই বিদ্রোহী কবি চিরশায়িত আছেন।
"মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই/যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই"
এই কবিতায় তার অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে।
তার এই ইচ্ছার কথা বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কবি নজরুলের সমাধির এক পাশে রয়েছে মসজিদ আর অন্য পাশে চারুকলা ইন্সটিটিউট। এরই ফাঁকে সুপারিগাছে ঘেরা ছোট্ট প্রাঙ্গণটিকে চিরতরের জন্য আপন করে নিয়েছেন বিদ্রোহী কবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে নজরুলের কবরসংলগ্ন এলাকাটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। নজরুলের কবরের সামনে তৈরি করা হয় একটি ছোট্ট গোলচত্বর। এই গোলচত্বরের শোভাবর্ধন করতে সেখানে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি লাইন পোড়ামাটির ফলকে এঁকে বসানো হয়েছে।
যেকোন দিন ঘুরে আসুন জাতীয় কবির সমাধিস্থান থেকে।