মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে সব জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বেশেষে মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের ফলে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতি ভাস্কর্য। বিজয় পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের চির অম্লান করতে নির্মাণ করা হয় 'জাগ্রত চৌরঙ্গী' নামের ভাস্কর্যটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এটি প্রথম ভাস্কর্য। এ ভাস্কর্যটি ১৯৭৩ সালে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তার ঠিক মাঝখানে সড়কদ্বীপে নির্মাণ করা হয়। ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাক 'জাগ্রত চৌরঙ্গী' ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন।
জয়দেবপুর শহর থেকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। আর এই প্রতিরোধ যুদ্ধে কমপক্ষে ২০ জন মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হন এবং ১৬ জন আহত হন। তাঁদের অবদান ও আত্মত্যাগকে চেতনায় সমুন্নত রাখতে এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়। ভিত বা বেদিসহ ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। ২৪ ফুট ৫ ইঞ্চি ভিত বা বেদির উপর মূল ভাস্কর্যের ডান হাতে গ্রেনেড ও বাম হাতে রাইফেল। সাধারণ মানুষের প্রতীকী রূপ হিসেবে ভাস্কর্যের পুরুষটি মালকোচা মেরে লুঙ্গি পরা, খালি গা ও পেশিবহুল। কংক্রিট, হোয়াইট সিমেন্ট, গ্রে সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে ঢালাই করে নির্মিত এ ভাস্কর্যটিতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টর ও ১১ নম্বর সেক্টরের শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে।