কাজের চাপে জীবন যখন অতিষ্ঠ হঠাৎ তখনই পেয়ে গেলেন একটা ছুটি। এই ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে আসুন দেশের বাইরে থেকে। খুব বেশি দূরে যাওয়ার সময় না থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এশিয়ার মধ্যে ভ্রমনের স্বর্গ মালয়েশিয়া থেকে। মালয়েশিয়া দেখার মত আছে অনেক কিছু। সমুদ্র, পাহাড়, দ্বীপ কি নেই এখানে! চাইলে ইচ্ছামত শপিংও করে নিতে পারবেন। চলুন, জেনে নিন কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন, কীভাবে যাবেন সহ খরচাপাতির টুকিটাকি।
কিভাবে যাবেন:
মালয়েশিয়া ভ্রমন করতে চাইলে আপনাকে বেছে নিতে হবে আকাশপথ। ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় যেতে ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ওয়েজ, বাংলাদেশ বিমান ও মালয়েশিয়ান এয়ার থেকে টিকেট কাটতে হয়। এয়ারলাইন্স, সময়ভেদে টিকেটের দাম কম বেশি হয়ে থাকে।
সাধারণত যাওয়া আসা খরচ ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজে টিকিটের দাম পড়বে ২২ হাজার টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকার মত। বাংলাদেশ বিমানের টিকেট পাবেন ২৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে যেতে চাইলে গুনতে হবে ৩০ হাজারের মত টাকা।
কোথায় থাকবেন:
প্রতিবছর মালয়েশিয়ায় প্রচুর পর্যটক আসে। এখানে সব হোটেলেই চেক ইন করার সময় দুপুর ১২টা। তাই কুয়ালালমপুরে পৌঁছে হোটেল খুঁজতে শুরু করলে, বিপদে পরতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আগেই হোটেল বুকিং করে রাখতে পারেন।
অসংখ্য হোটেলের মধ্যে টাইমস স্কয়ার, পার্ক রয়্যাল, ফেডারেল ইন্টারন্যাশনাল, রয়্যাল বেনতান ইত্যাদি পর্যটকদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। টাইমস স্কয়ার ও পার্ক রয়্যালে সকালের বুফে নাস্তাসহ দিনপ্রতি খরচ পড়বে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আপনি চাইলে মাঝারি কোন হোটলে থাকতে পারেন। “পাসার সেনি" বা "মসজিদ জামেক" দুটো জায়গাতেই আপনি পাবেন কে.এল এর অন্যান্য জায়গা থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামের হোটেল। মোটামুটি ৫০ থেকে ১০০ রিংগিতের মধ্যে পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দসই হোটেল। এর চেয়ে কম দামের হোটেল ও আছে, তবে ওগুলোতে না যাওয়াই উত্তম, সর্বনিম্ন ৪০ রিংগিটের নিচে হোটেলে না থাকাটাই ভালো। এছাড়া আপনি যদি নিজের মত করে থাকতে চান তবে থাকতে পারনে টাইমস স্কয়ারের স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টগুলো। এখানে রান্না-বান্নাসহ সকল ঘরোয়া পরিবেশই পাওয়া যাবে। তবে তার জন্য আপনাকে গুনতে হবে দিনপ্রতি ১৬ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
কোথায় খাবেন:
সবধরনের খাবারে স্বাদ পাবেন আপনি মালয়েশিয়ায়। ফাস্টফুড চেইনের সাথে পাবেন স্থানীয় খাবারের স্বাদ। সকালের নাস্তায় দুই রিঙ্গিটের বিনিময়ে খেতে পারেন মালয়েশিয়ান খাবার চানারুটি।
এছাড়াও আছে পাকিস্তানি ও বাঙালি রেস্তোরা। পাবেন কাচ্চি বিরিয়ানি, তন্দুরি চিকেন, কাবাব ইত্যাদি। ২০ রিঙ্গিত বা ৫শ' টাকাতেই ভরপেট খেতে পারবেন এই রেস্তোরাগুলোতে। এছাড়া ডেজার্ট হিসেবে খেতে পারেন সিক্রেট রেসিপির কেক।
কোথায় ঘুরবেন:
মালয়েশিয়ার ঘুরার মত জায়গার অভাব নেই। আপনি যদি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কোন জঙ্গলে হারিয়ে যেতে চান সেটিও পারবেন আবার যদি সমুদ্রের তীরে কাটাতে চান অবসরটুকু সেটিও পারবেন।
মালয়েশিয়ায় আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। কুয়ালামপুর শহরেই আছে -চেন সি সো ইয়েন হাউস,মেনারা অলিম্পিয়া,ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি,পুত্রজায়া ব্রীজ,রয়্যাল প্যালেস,এগ্রিকালচারাল পার্ক,ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন,অর্কিড পার্ক,বার্ড পার্ক প্রভৃতি জায়গা। এছাড়া দেখতে পারেন মালেশিয় সংস্কৃতি,হস্তশিল্পের নানা নিদর্শন। এছাড়াও রয়েছে কর্মাশিয়াল সেন্টার,ইন্ডিপেণ্ডেন্ট স্কোয়ার,কিংস প্যালেস,ন্যাশনাল মিউজিয়াম,ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম,হাউস অব পালার্মেন্ট এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ স্থাপনা টুইন টাওয়ার রয়েছে এখানে।
এছাড়া যেতে পারেন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দুই হাজার মিটার উচুঁ বাটু কেভ দর্শনে। এটিতে উঠতে গেলে আপনাকে প্রায় ২৭০ খানা সিঁড়ি ভাঙতে হবে। উপরে উঠেই দেখতে পাবেন একটি গুহার নীচে আরেকটা অবাক করা গুহা যেখানে সারি সারি চিত্রকলা সাজানো রয়েছে। এছাড়াও থিম পার্কে প্রবেশ করে বিভিন্ন রাইডে আরোহণ করেও আনন্দ নিতে পারবেন।
মালয়েশিয়া গিয়ে লাঙ্কাউইতে যদি না যান তবে আপনার মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যাওয়াটাই বৃথা। লাঙ্কাউইতে বিনোদনের সবকিছুই আপনি পাবেন কেবল কার, ঝরনা, সমুদ্রের নিচ দিয়ে রাস্তা, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আরও অনেক কিছু। লাঙ্কাউই যাত্রা পথে অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বিশেষ করে রাস্তার ধারে অসংখ্য পাম ট্রি দেখে।
আপনি যদি চান মালয়েশিয়ার আশেপাশের দ্বীপগুলোতে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। অনেকগুলো দ্বীপ স্পীড বোট এ করে ঘুরিয়ে আনাকে আইল্যান্ড হপিং বলে।
“আইল্যান্ড হপিং এ একসাথে অনেকগুলো দ্বীপ ঘুরতে পারা যায়। এতে সময় ও টাকা দুই বাঁচে”।
দ্বীপ, সমুদ্র দেখতে দেখতে এক ঘেয়ে চলে আসলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট থেকে। সেখানে দেখতে পাবেন বাদুরের গুহা, ঈগলের গুহা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান।
এছাড়াও মালয়েশিয়া দেখতে যেতে পারবেন গেন্টিং হাইল্যান্ড, ,ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, দ্বীপ মাবুল, পেনাং আরও অনেক কিছু।
বিভিন্ন প্যাকেজ আছে ঘুরতে যাওয়ার। যেমন সিটি টাওয়ার, গেন্টিং হাইলং, পুত্রজায়া ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি”। আপনি চাইলে আপনার পছন্দের প্যাকজটি সংগ্রহ করতে পারবেন হোটেল থেকে।
কেনাকেটা:
কেনাকেটার জন্য মালয়েশিয়ায় রয়েছে অনেক গুলো শপিংমল। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারকে বলা হয় মালয়েশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল। এখানে বিশ্বের সকল নামকরা ব্রান্ডের দোকান পাবেন আপনি। এছাড়া আরও যেতে পারেন প্যাভিলিয়ন, টাইমস স্কয়ার, বিবি প্লাজা, সানওয়ে পিরামিড মার্কেট ইত্যাদি শপিং মলগুলোতে। ইলেক্ট্রনিকস পণ্য কিনতে চাইলে অবশ্যই যেতে হবে ল-ইয়েট প্লাজা।
খরচ:
প্রায় সারা বছরই ট্যুর অপারেটর ও দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স গুলো মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের জন্য প্যাকেজ দিয়ে থাকে। সাধারণত ৩ দিন থেকে ৪ দিন বেরানোর খরচ পড়বে ৩৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার পর্যন্ত। আপনি চাইলে একাই বেড়িয়ে আসতে পারেন মালয়েশিয়ায়, তবে তার জন্য আপনার খরচ আরও বেশি পড়বে।