প্রধান সড়ক থেকে সূর্যমন্দিরে হাঁটার পথ। ৩০০ গজ হবে। মন্দিরের গেটে গিয়ে থামতে হবে। টিকিট কাটতে হবে। মন্দিরে ঢুকতে চওড়া সড়ক। সড়কের দুই পাশে সবুজ পরিপাটি বাগান। এরপর মন্দিরে ঢোকার প্রধান গেট। সূর্যমন্দির। একসময় মন্দিরটি সমুদ্রের পাড়ে অবস্থিত ছিল। কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণর ছেলে শাম্ব এখানে সূর্য উপাসনা করে কুষ্ঠ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এ জন্যই এটির নাম সূর্যমন্দির। মন্দিরটি আন্তর্জাতিক বিশ্ব ঐতিহ্য প্রকল্প কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ও ইউনেস্কো নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পূর্ব গঙ্গা রাজবংশের (১০৭৮-১৪৩৪) রাজা প্রথম নরসিংহদেব (১২৩৮-১২৬৪) দ্বারা নির্মিত। এক হাজার ২০০ শিল্পী ১২ বছরে এটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। পুরো মন্দিরটি পাথরের খাঁজ কেটে তৈরি করা হয়েছে। কারুশিল্পের চমৎকার নিদর্শন এই মন্দির। না দেখলে বোঝার উপায় নেই কারুকার্যের নিদর্শন এরূপ হতে পারে। মন্দিরটির উচ্চতা ২২৮ ফুট। মন্দিরের কারুকার্যে তিন রকমের সূর্যদেবতা রয়েছে। দক্ষিণ পাশের সূর্যদেবতাকে ‘উদিত সূর্য’, যার উচ্চতা ৮.৩ ফুট, পশ্চিম দিকের সূর্যদেবকে ‘মধ্যাহ্ন সূর্য’, যার উচ্চতা ৯.৬ ফুট এবং উত্তর দিকের সূর্যদেবকে ‘অস্ত সূর্য’, যার উচ্চতা ১১.৫ ফুট, আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পুরো সুর্যমন্দিরটি একটি রথের মতো। এটি তৈরি করা হয়েছিল সূর্যদেবের পুজোর জন্য। মন্দিরে আছে ২৪টি চাকা। প্রতি চাকায় আটটি খাডি। একেকটি চাকার ব্যাস ৯.৯ ফুট।
মন্দিরের দক্ষিণ দিকের কারুকার্যে খচিত রয়েছে দুটি যোদ্ধা ঘোড়া। প্রতিটি দৈর্ঘ্যে ১০ ফুট ও প্রস্থে ৭ ফুট। পূর্ব দিকে মন্দিরে প্রবেশের মুখে দুই পাশে দুটি ঐশ্বর্যপূর্ণ সিংহ দুটি হাতির ওপর চেপে আছে। প্রতিটি সিংহ ও হাতির মূর্তি একটি পাথরের তৈরি। এটি দৈর্ঘ্যে ৮.৪, প্রস্থে ৪.৯ এবং উচ্চতায় ৯.২ ফুট। প্রতিটি সিংহ ও হাতির ওজন ২৭.৪৮ টন। এটি মন্দিরের প্রধান গেট। এ ছাড়া মন্দিদের গায়ে অসংখ্য দেবদেবীর কারুকার্য শোভিত। প্রত্যেক দেবদেবীর রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস। তবে অধিকাংশ দেবদেবীর ক্ষয়িষ্ণু অবয়ব। আগের সেই দেহবল্লরি যেমন শোভা পাচ্ছে না, তেমনি হাত-পা ভেঙে মন্দিরটি প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যের ক্ষয়িষ্ণু নির্মাণ দর্শন করছে পর্যটকরা। মন্দির পরিদর্শন শেষে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করে না। বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। মন্দিরের শিল্পকর্ম নিয়ে যে কোন শিল্পপ্রেমীর মন ভাবনার অতলে ডুবে যাবে বারবার।