চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন তো, একটা ভয়ংকর অন্ধকার গুহার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন আপনি। আপনার হাতের ছোট্ট একটি বাশের মশালটাই গুহায় আলোর শেষ উৎস। পায়ের নিচে এবড়ো থেবড়ো পাথর আর হিম শীতল পাহাড়ি ঝরনার জলধারা বয়ে চলছে। গুহায় কোন মতে চলতে চলতে একপর্যায়ে হামাগুড়িও দিতে হচ্ছে আপনাকে। গুহার দুপাশের দেয়ালও চেপে আসছে ধীরে ধীরে। একসময় হঠাৎ দেখতে পেলেন একটু খালি আলো! ঐ তো সবুজ গাছপালা। কি মারাত্মক রোমাঞ্চকর অনুভূতি তাই না? নাহ, এটা কোনো সিনেমার দৃশ্য না। এমন অনুভুতি পেতে পারবেন আপনিও। আর তার জন্য খুব দূরে কোথাও যেতে হবে না আপনাকে। বাংলাদেশেই আছে এমন অসাধারন রোমাঞ্চকর গুহা!
মানুষের মন মাত্রই রহস্যপ্রেমী। আর তাই যেখানেই কিছুটা রহস্য আর রোমাঞ্চের গন্ধ পাওয়া যায় সেই স্থানটিই আকর্ষন করে মানুষকে। তেমনই আকর্ষনীয় ও রহস্যময় একটি পর্যটন স্থান হলো খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা। খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্রে এই গুহা অবস্থিত। এই গুলার সর্বোচ্চ উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০০ ফুট উঁচু।
আলুটিলার গুহায় যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে টিকেট কেটে নিতে হবে মূল গেট থেকে। এরপর মশাল কিনে নিতে হবে। প্রধান গেট দিয়ে ঢোকার পরে বেশ খানিকটা পাহাড়ি পথ পেরুলেই মিলবে গুহার সন্ধান। গুহার পাথর গুলো পিচ্ছিল। তাই পা পিছলে যায় এমন স্যান্ডেল বা জুতা পরা যাবে না। গুহার মুখে প্রবেশের আগে মশাল জ্বালিয়ে নিতে হবে। মশাল গুলো সোজা করে ধরতে হবে নাহলে কেরোসিন তেল পরে যাবে এবং গুহার মাঝ পথে গিয়েই নিভে যাবে মশাল। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য মোবাইল টর্চ বা টর্চ লাইট নিয়ে যেতে পারেন সঙ্গে।
এবড়ো থেবড়ো পাথরের উপর দিয়ে হেটে যেতে যেতে বেশ রোমাঞ্চকর অনুভুতি হবে আপনার। একটা পর্যায়ে গিয়ে হয়তো মনে হতে পারে এই গুহার পথের কোনো শেষ নেই। কিন্তু আরো কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর যখন আলোর সন্ধান পাবেন তখন সত্যিই জীবনটাকে অনেক বেশি সুন্দর মনে হবে আপনার। অ্যাডভেঞ্চার ও ভ্রমন পিপাসুদের জীবনে অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসা উচিত এই গুহাটি।
আলুটিলা গুহায় যেতে হলে প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে উঠে খাগড়াছড়ি শহরে যেতে হবে। খাগড়াছড়ির রেস্ট হাউজ গুলোর মধ্যে পর্যটন হোটেলটাই সবচেয়ে উন্নতমানের। আশেপাশের অন্য কিছু রেস্ট হাউজ আছে চাইলে সেগুলোতেও থাকতে পারেন। শহর থেকে চান্দের গাড়ি অথবা লোকাল বাসে চড়ে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেটে ঘুরে আসতে হবে গুহা। তবে সন্ধ্যার আগেই বেড়ানো শেষ করে শহরে ফিরে আসাই নিরাপদ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তায় দূর্ঘটনার ভয়ে সন্ধ্যার পরে তেমন কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না এখানে।