একসময় ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের কাছে অবকাশ যাপনের জায়গা বলতে ছিল শুধু ক্যারিবীয় আর প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলো। তাদের কাছে পুরো এশিয়ায় বিনোদন-অবকাশের আরেক নাম ছিল থাইল্যান্ড। এখন অবস্থা পাল্টেছে। ধনী দেশের পর্যটকদের কাছে এখন শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যগুলোর একটি মালয়েশিয়া।
কুয়ালালামপুর থেকে একটু উপকণ্ঠের দিকে গেলেই চোখে পড়বে পাহাড়ের কোলে কিংবা উপত্যকায় সেখানকার ‘ভূমিপুত্র’ খ্যাত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিচিত্র জীবনযাপন।
রাজধানী কুয়ালালামপুর কিংবা প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়া থেকে খানিকটা বাইরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখান থেকে রাজধানীর অভিমুখে যাত্রা করলে রাস্তার দুপাশে সারি সারি পামগাছের দৃশ্যই বলে দেয় পাম তেল রফতানিতে দেশটি কেন এতটা এগিয়ে।
সুউচ্চ অট্টালিকা শোভিত কুয়ালালামপুর শহর পুরোটাই ট্রেনে করে ঘুরা যায়। অত্যাধুনিক বিপণিবিতানের পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থাপত্য, বৌদ্ধ ও হিন্দু মন্দিরের মতো স্থানগুলোতে সারা বছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই আছে। আছে উদ্দাম আনন্দে বিশ্বাসী পর্যটকদের জন্য গেন্টিং হাইল্যান্ড। তবে ইউরোপ-আমেরিকার পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মালয়েশিয়ার কয়েকটি দ্বীপ। যারা কোলাহল থেকে একটু দূরে শান্ত-নিরিবিলি-নির্জন পরিবেশে সময় কাটাতে চান তাদের জন্য এসব দ্বীপে রয়েছে অসাধারণ সব আয়োজন।
এমনই এক দ্বীপ মাবুল। মালয়েশিয়ার দ্বীপমালার রাজ্য সাবাহের একটি ছোট্ট দ্বীপ মাবুল এখন সারা বিশ্বের সাগরতলার সৌন্দর্যপিয়াসী ডুবুরিদের কাছে অতিপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দ্বীপের চারপাশের স্বচ্ছ পানির নিচে ডুব দিয়ে দেখা যায় সাগরতলের বিচিত্র সব প্রাণী। এই দ্বীপেই গড়ে উঠেছে অনুপম সুন্দর ‘ওয়াটার বাংলো’। এ যেন পানিতেই বসবাস।
এছাড়াও পর্যটকদের কাছে আরেকটি প্রিয় দ্বীপ লঙ্কাউই। অবশ্য এখানে নির্জনতা কম, সারা বছরই পর্যটকে গিজগিজ করে, হোটেল-রিসর্ট-শপিংমলে হৈ-হুল্লোড় লেগে থাকে সারা দিন।
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের পর সবচেয়ে বেশি পরিচিত নাম পেনাং। সাগর সৈকতের এই শহরে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক সব বিনোদন ব্যবস্থা। এখানেই আছে দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতির এক ফার্ম, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড়। আছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, বৌদ্ধমন্দির। পাশেই গা-জুড়ানো শীতল আবহাওয়ার পাহাড়। সৈকত শহরের সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যায় ট্রেন। এই পাহাড়ি পথটুকু পাড়ি দেওয়ার সময় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তার ডালি মেলে ধরবে আপনার সামনে।
কুয়ালালামপুর থেকে গাড়ি নিয়ে পর্যটকদের স্বর্গখ্যাত গেন্টিং হাইল্যান্ড না দেখে এলে মালয়েশিয়া সফর বৃথা হয়ে যাবে। পাহাড়ের গা বেয়ে খানিকটা দূরে শুরু পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘ রোপওয়ে। ক্যাবল কারে ওঠার আগে ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করেন অনেকেই। ছবি তুললে রোপওয়ে থেকে নামার সময়ই ছবির প্রিন্ট হাতে পাবেন।
গেন্টিং হাইল্যান্ডে নামার পরই ভিন্ন এক জগত্। চারদিকে রঙিন আলোর ঝলকানি। বড় বড় হোটেল। থিমপার্কে বিনোদনের সবই আছে। মনোরম সব দৃশ্য দেখার পর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। সেখানকার ক্লাবগুলো জমে উঠবে। নাচ, গান, বাজি আর সুরার আবেশে উপভোগের ষোলকলা পুরো করতে গেলে পকেট খালি হয়ে যাবে। বিদেশি ধনকুবেররা সেখানে খইয়ের মতো অর্থ ওড়ায়। পশ্চিমা থেকে আরব কোটিপতি, এশিয়া সব অঞ্চলের পর্যটক গিজ গিজ করছে।
হ্যাঁ, মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান ঠিকই; তবে বিদেশি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য নাইট ক্লাবসহ কোনো কিছুরই কমতি নেই!
মালয়েশিয়ায় ভ্রমণের জন্য প্রায় সারা বছরই প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করে থাকে বাংলাদেশের কয়েকটি ট্যুর অপারেটর ও দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স। মালয়েশিয়ায় ৩ থেকে চারদিন বেড়ানোর জন্য মাথাপিছু কমবেশি ৪০ হাজার টাকা নেয়। এদের কোনো কোনোটি ভিসার ব্যবস্থা করারও দায়িত্ব নেয়। তবে এর জন্য দিতে হয় বাড়তি অর্থ। আপনি চাইলে নিজেই ভিসা সংগ্রহ করে একাই যেতে পারেন মালয়েশিয়া, সেক্ষেত্রে খরচ গুনতে হবে অনেক বেশি।