সাধারন মানুষের কাছে পরিচিত ডান লপ সাহেবের নীল কুঠি নামে। গরীব চাষীদের উপর ব্রিটিশ নীলকরদেও অত্যাচার ও ঐতিহাসিক ফরায়েজী। আন্দোলন এর নীরব সাক্ষী নীলকুঠি এখন ও এটি দাঁড়িয়ে আছে। মাদারীপুর জেলা শহর থেকে ১০ কিঃমিঃ উওর- পূর্ব দিকে সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে এই নীলকুঠিরটির অবস্থান। জন শ্রুতি আছে, বহুকাল আগে থেকে গ্রামটি বিভিন্ন পীর আউলিয়ার পদস্পর্শে ধন্যবলে এর নাম হয় আউলিয়া পুর । এই গ্রামেই রয়েছে খ্যাতিমান আউলিয়া হযরত শাহসুফি খাজা ইউসুফ শাহ আহসানের দরগা শরীফ । অযত্নে অবহেলায় দরগাটি আজ জরাজীর্ণ। দরগাটির অবস্থান নীল কুঠিরের পাশেই । ৫০ বছর আগে ও এই এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে আবৃত। এখানে বাস করত বাঘ সহ নানা ধরনের হিংস্র প্রাণী । এখন অবশ্য এখানেআর জঙ্গল নেই । প্রায় দুশ বছর আগের কথা । ডানলপ সাাহেব নামের একজন ইংরেজ নীল কর নীলের ব্যবসা কওে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার বাসনা নিয়ে তিনি এসে ছিলেন এই এলাকায় । ১২ একর জমির ওপর তিনি স্থাপন করেন নীল কুঠি । এই নীল কুঠি আজ প্রায় নিশ্চিহৃ । কুঠির জমিও বিভিন্ন ভাবে বেহাত হয়ে গেছে । কুঠির ধ্বংসাবশেষ এবং ইটের তৈরি ভবনের ভিওি পড়ে রয়েছে । আর স্মৃতি হিসাবে প্রায় অক্ষত রয়ে গেছে শুধু চুল্লিটি স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, বৃহওর ফরিদপুরের অংশ হিসেবে মাদারীপুওে নীল চাষ শুরু হয় পলাশীর যুদ্ধের কিছুকাল পর থেকেই। এলাকার তৎকালীন কৃষকদের ধান,পাট, গম, সরিষা সহ অন্যাণ্য ফসল বাদ দিয়ে শুধূ মাত্র নীল চাষে বাধ্য করা হত । যে জমিতে একবার নীল চাষ করা হতো সেখানে অন্য কোন ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না। অত্যন্ত দরিদ্র কৃষকদেও বিপদেও সময় স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সুদে ও দাদনের টাকা দিয়ে নীল চাষে প্রভাবিত করা হত। মাদারীপুরের ছিল নীল চাষ এর জন্য খুবই উপযোগী। তখন ইংরেজই এদিকে ভিড় জমিয়ে ছিল নীল চাষ করতে। এই ডানলপ সাহেবের নীলকুঠির সাথে জড়িয়ে আছে। ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলন। উপমহাদেশের ব্রিটিশদেও অত্যাচার যখন চরম পর্যায়ে তখন নীলকুঠিয়াল ও তাদের দোসর জমিদার মহাজনদের অত্যাচাওে এঅঞ্চলের কৃষকরাও জর্জরিত হয়ে পড়ে। এ সময় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের হাজী শরীয়তউল্লাহ ও তার পুত্রপীর মহসীনউদ্দিন দুদু মিয়া এলাকার কৃষকদের নিয়ে গড়ে তোলেন বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী । এই প্রতিবাদ এক সময় গন আন্দোলনে রূপ নেয়। শরীয়তউল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে দুদুমিয়ার নেতৃত্বে ১৭৩৮সালে ব্রৃটিশদের সাথে নীলকুঠি থেকে তিন কিঃমিঃ দূরে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরাজিত নীলকুঠিয়াল ডানলপ তার দলবল নিয়ে নীলকুঠি ছেড়ে পালিয়ে যায়। আউলিয়াপুরের যে স্থানে এই যুদ্ধ হয় সেই স্থান এখনও রনখোলা নামে পরিচিত । বিলুপ্ত প্রায় ডানলপ নীলকুঠির পূর্ব পাশে রনখোলা,পশ্চিমে আউলিয়াপুর বাজার, উওরে কালীতলা ও দক্ষিনে আউলিয়াপুর দরগা শরীফ। ১২কক্ষ বিশিষ্ট এ কুটির মাঝামাঝি অংশে রয়েছে চুল্লি, পাশেই রয়েছে প্রায় ৪০ ফুট উচু চিমনি। দিন দিন অযন্ত আর অবহেলায় এই ঐতিহাসিক নির্দেশনটি বিলুপ্ত হতে বসেছে । এলাকাবাসী চায় তাদের পূর্ব-পুরুষদের উপর অত্যাচার ও ফরায়েজী আন্দোলনের ইতিহাসের শেষ স্মৃুতিচিহ্ন হিসাবে এই নীলকুঠি সরকার সংরক্ষন করুক ।সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তরা এলাকা পরির্দশন করে এলাকাবাসীকে নীলকুঠির সংরক্ষন করার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়নের কোন লক্ষন দেখেনি বলে জানালেন এলাকাবাসী । বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির সদস্য মাদারীপুরের অন্যতম ঐতিহাসিকবিদ ডা.আব্দল বারির সাথে কথা হলে তিনি এই নীলকুঠিকে সংরক্ষনের দাবী জানান। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এই নীলকুঠি হারিয়ে গেলে মাদারীপুর অঞ্চলে ব্রিটিশদের অত্যাচার ওফরায়েজী আন্দোলনের কোন স্মৃতি চিহ্নই অবশিষ্ট থকবে না। ণীলকুঠি সংরক্ষনে সরকার এগিয়ে আসবে এই প্রত্যাশা মাদারীপুরবাসীর। বর্তমানে নীলকুঠির অনেক জমি বেহাত হয়ে গেছে। এই জমি উদ্ধার না করা পর্যন্ত নীলকুঠির সংরক্ষন করা সম্ভাব নয়। নীলকুঠি রক্ষনাবেক্ষন করা জরুরী। শুধু দর্শণাথীদের জন্যই নয় এই নীরকুঠির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
ঘরোয়া বাকরখানী