ঈদের ছুটি পেয়ে গেছেন নিশ্চয়। কেউ কেউ হয় তো বাড়িতেও পৌঁছে গেছেন। বাবা মা’র সঙ্গে একটা জম্পেশ ঈদ কাটানোর পরেও হাতে থাকবে বেশ কয়েকটি দিন। আর সেই কয়েকটা দিনে হয় তো হাতের কাছে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। আপনার হাতের কাছে কি আছে? সমুদ্র? সিলেটের চা বাগান? মহাস্থান গড়? না ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান? চলুন ঘুরে আসি প্রকৃতির অপার সান্নিধ্য থেকে।
সমুদ্র সৈকত
সমুদ্রের হাওয়ায় মন হয়ে ওঠুক প্রশান্ত:
সমুদ্র টানে না কাকে? নীল জলের গর্জন শুনে, সমুদ্রের হাওয়ায় উদাস হতে কার না ভালো লাগে। হাতে দিন-চারেকের সময় পেলেই ঘুরে আসতে পারেন নীল সমুদ্রের বুক থেকে। আর এই সমুদ্র দেখার জন্য বিদেশ পাড়ি জমানোর কোনো দরকার নেই। এদেশেই রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি কক্সবাজার সম্রদ্র সৈকত।
ঢাকা থেকে খুব সহজেই বাসে অথবা প্লেনে করে পৌঁছে যেতে পারেন কক্সবাজার। তবে ট্রেনে চেপে কক্সবাজার সরাসরি যাওয়া যাবে না। ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছে সেখান থেকে খুব সহজে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন কক্সবাজার। কক্সবাজারে নেমে ভালো কোনো হোটেলে উঠে সামান্য আয়াস করতে না করতেই আপনাকে ডাক দিবে সমুদ্রের নীল জল। সমুদ্রের উন্মাতাল ডাকে সাড়া দিয়ে সমুদ্র সৈকতে পা রাখতেই আপনার চোখ জোড়া জুড়িয়ে যাবে।
যতদূর চোখ যাবে ততদূর জল আর জলের ঢেউ। পায়ের কাছে আছড়ে পড়ছে নোনাজল। এ অনুভূতি তো আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারবেন না। সমুদ্রের নীল জলের পাশে পাশে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে নিতে পারবেন বিশ্রামও।
সমুদ্র সৈকতের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি রঙিন ছাতা। ছাতাগুলোর নিচে শোভা পাচ্ছে আরাম চেয়ার। এই সব আরাম চেয়ারে বসে আয়েসী ভঙ্গিতে সমুদ্রের ঢেউ আর গুঞ্জন আপনার কাছে বলে যাবে রোমাঞ্চের অন্য রকম এক অনুভূতির গল্প। চাইলে নানা রকম ওয়াটার স্পোর্টসেও মেতে উঠতে পারবেন আপনি।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘোরা শেষ হলে মনটাকে আরও নাচিয়ে তুলতে ঘুরে আসতে পারবেন হিমছড়ি আর ইনানি বিচও। কক্সবাজার থেকে খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ৩২ কিলোমিটারের ব্যবধান। একটু মনোরম আর নিরিবিলি-নির্জনতার সান্নিধ্য যারা পেতে চান তাদের জন্য হিমছড়ি আর ইনানি বিচের জুড়ি নেই।
হিম ছড়ির ঝাউবনের সবুজের সঙ্গে সমুদ্রের নীল জল মিশে একাকার হয়ে তৈরি হয়েছে এক অদ্ভূত রোমাঞ্চকর রসায়ন। দেখেই মন নেচে উঠবে আপনার। কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি ও ইনানি বিচ যাওয়ার রাস্তাটাও খুব মনোরম নৈসর্গিক। সৈকতের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রাস্তায় অপরূপ প্রকৃতি দেখতে দেখতে হারিয়ে যাবেন আপনি।
দীর্ঘ বেলাভূমির পথ ধরে সমেুদ্রের ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখতে দেখতে পথ চলছেন আপনি, সমুদ্রের বুকে ভাসমান নৌকা, পাখির কিচির মিচির , সবুজ ঝাউবনের মাথা দোলানো দেখতে দেখতে কখন যে আপনার পথ ফুরিয়ে যাবে তা বুঝতেই পারবেন না।
ইনানি বিচের বেলাভূমি জুড়ে পড়ে থাকা অজস্র পাথর আপনাকে স্বাগত জানাতেই আরেকবার রোমাঞ্চিত হবেন আপনি। মন চাইবে আজীবন যদি এই প্রকৃতির স্পর্শে থেকে যেতে পারতেন তাহলে কতই না ভালো হতো।
আর হ্যা, এসব ঘুরেটুরে এসে কক্সবাজারের বার্মিজ মার্কেটে ঢুকতে যেন ভুল না করেন। কারুকার্যময় পাথর, শৌখিন চটি, বাঁশের ছাতা, আর দারুণ সব শো-পি স দেখে সবকিচুই আপনার কিনে ফেলতে মন চাইবে। আর এখানের সুস্বাদু খাবারের কথা না বললেই কিন্তু নয়, কোরাল, রূপচাঁদা, সুন্দরী চিংড়ি, ভর্তা দোঁপেয়াজু সহ নানা মজাদার খাবার দেখে জিহ্বায় জল এসে যাবে আপনার।
কক্সবাজারে যখন এসেছেনই তখন সেন্টমার্টিন দ্বীপের এত কাছ থেকে ফিরে যাবেন কেন। ঘুরে যেতে পারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপও। কক্সবাজার থেকে আপনি পৌঁছে যাবেন টেকনাফে। টেকনাফ বন্দর থেকে জাহাজে চড়ে আপনাকে যেতে হবে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। বাংলাদেশের একমাত্র এই প্রবাল দ্বীপে দিনে দিনে ঘুরে চলে আসতে পারবেন।
টেকনাফ বন্দর থেকে জাহাজে চড়ে যখন সেন্টি মার্টিনের দিকে যাত্রা করবেন, তখন নাফ নদীর জল কেটে চলা জাহাজের দুপাশে আপনার চোখে পড়বে কেবল সবুজ আর সবুজ। দু’ দেশের দুই উপকূলের মাঝ দিয়ে আপনার জাহাজ ছুটে চলবে। একই সময়ে দু’চোখের দৃষ্টিতে ভেসে ওঠবে দুই দেশের দুই বেলাভূমি। মিয়ানমার আর বাংলাদেশের সৌন্দর্যের হাতছানিতে আপনি আপ্লুত হবেন।
সেন্ট মার্টিনে পৌছে আপনার মনে হতেই পারে বিশাল সমুদ্রের মাঝে আপনি একা। চারদিকে জল আর জলের ঘুর্নি। এমন রোমাঞ্চের কথা কি ভাবতে পারছেন? ভাবুন আর না ভাবুন তবে এতটুকু বলা যায়, দুপুরের নির্জন সমুদ্রতীরে পাতার সর সর শব্দের মতো সমুদ্রের নোনা ঢেউয়ের রোমান্টিক সুরে হারিয়ে যাবেন আপনি।
সেন্টমার্টিনের প্রবাল নুড়ি পাথর, সবুজ প্রকৃতি দেখতে দেখতে খেয়ে নিতে পারেন এখানকার ডাবের জলও। আর জেনে রাখুন এখানকার ডাব কিন্তু ইতিহাসখ্যাত সুস্বাদু। অশান্ত সাগরের তীরে ডাবের জল খেয়ে প্রশান্তির ঠেকুর না তুললে পস্তাতে হবে আপনাকে।
মহাস্থান গড়
ঘুরে আসুন হাজার বছর আগের পৃথিবী থেকে
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন হাজার বছর আগের শহর থেকে। বাংলার ঐতিহাসিক রাজধানী মহাস্থান গড় থেকে ঘুরে আসতে পারেন আপনি। বগুড়া শহর থেকে মাত্র ১৩ কি.মি. দূরে অবস্থিত এই মহাস্থান গড়। প্রাচীণ এই পর্যটন কেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ হাজার বছর আগের নানা নির্দশন। এসেবের পাশাপশি রয়েছে শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার শরীফ। মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে এই মাজারটি অবস্থিত। কথিত আছে হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে এই ওলির আগমন ঘটে।
গড়ের পশ্চিম পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন। এসব দেখে আপনি যেতে পারনে শীলাদেবীর ঘাটে। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এই ঘাটের পশ্চিম পাশেই রয়েছে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত।
এসব অলৌকিক আর পৌরাণিক নিদর্শন দেখেতে দেখতেই আপনি হাজির হয়ে যেতে পারেন মহাস্থান গড়ের মিউজিয়ামে। মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
আর হ্যা, নানী, দাদী অথবা মা-বাবার কাছে শোনা বেহুলার বাসর ঘরটাও যদি দেখে যেতে পারেন তাহলে কেমন হয়? তার জন্য মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড থেকে আপনাকে আরও ২ কি. মি.দক্ষিণ পশ্চিমে দৌঁড়াতে হবে। এখানে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা ।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই পরিচিত।
এছাড়া মহাস্থান জাদুঘরের সামনে অবস্থিত গোবিন্দ ভিটাও দেখে নিতে পারেন আপনি।
ঢাকা থেকে বাসে করে খুব সহজেই চলে যেতে পারবেন বগুড়া শহরে। এখানে বেশকিছু হোটেল ও মোটেলে অবস্থান করে দেখে নিতে পারবেন পুরো শহরটি। বগুড়া শহর থেকে সকাল সকাল রওনা দিতে হবে মহাস্থান গড়ের দিকে। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন মহাস্থান গড়ে।
সিলেট চা বাগান
দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে
দুটি পাতা একটি কুঁড়ির শহর সিলেট থেকেও ঘুরে আসতে পারেন আপনি। চারদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে নিতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের চা বাগান থেকে। চারদিকে সবুজের সমারোহ। উচু নিচু ঢিলার মাঝে সবুজ গালিচা পেতে দাঁড়িয়ে আছে চা-বাগান। সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে আকাশের নীল মেশে আপনাকে অন্যরকম শিহরণ জাগাবে। আর পাহাড়ের কিনার ঘেষে ছুটে গেছে আকাবাঁকা মেঠোপথ। শহরের যান্ত্রিকতা থেকে বহুদূরের এই সবুজের মাঝে মিলবে প্রকৃতির সমস্ত সম্মিলন। আর পাহাড়ের আড়ালে আড়ালে দেখা মিলবে স্বচ্ছ ঝরনাধারারও। এমন অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে যেতে, সবুজের ভেতর লুকোচুরি, হৈ হুল্লোড় আর আনন্দে অবগাহন করতে আপনি আজই রওনা দিতে পারেন সিলেটের উদ্দেশ্যে।
জানিয়ে রাখি সিলেটের চা বাগানের খ্যাতি সারাবিশ্ব জুড়েই। দেশের মোট চায়ের ৯০ শতাংশই উৎপন্ন হয় সিলেটে। বাংলাদেশের মোট ১৬৩টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টি রয়েছে বৃহত্তর সিলেটে। বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সিলেট জেলার জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চা বাগান হলো- মালনীছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগান, তারাপুর চা বাগান, দলদলি চা বাগান, খাদিম চা বাগান, বড়জান চা বাগান, আলী বাহার চা বাগান, হাবিব নগর চা বাগান, আহমদ টি এস্টেট, খান চা বাগান, লালাখাল টি এস্টেট, শ্রীপুর চা বাগান, মুলাগুল চা বাগান ইত্যাদি।
ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে অথবা প্রেনে করে নামতে পারেন সিলেট শহরে। থাকতে পারবেন যেকোনো হোটেল মোটেলে।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান
হারিয়ে যেতে চাইলে সবুজের সমুদ্রে
ঢাকায় থাকছেন। খুব বেশি দূরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিন্তু অন্তত একটা দিন সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটাতে চান। আবার দিনশেষে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকাতেও ফিরে আসতে চান তাহলে আর দেরি না করে ঘুরে আসতে পারেন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান।
ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। ঢাকা থেকে ময়মনসিংগামী যেকোন বাসে উঠে রাজেন্দ্রপুর নেমে যেতে পারেন। অথবা ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গেটেও নামতে পারবেন আপনি। ভাড়া খুব বেশি নয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জাতীয় উদ্যানে এক সময় বাঘ, কালোচিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা গেলেও এখন তেমনটা খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন সেখানে শুধু সবুজ আর সবুজে বেস্টিত এক সবুজের মহাসমুদ্র যেন। এই সবুজের সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়ার সহজ পথ বাৎলে দেই চলুন।
ঢাকা থেকে বাস ছাড়ার পর মাত্র ঘন্টা খানেকের ভেতর গাজীপুর শহর পৌছে যাবেন। সেখান থেকে সামান্য দূরে শালনা ব্রীজ পার হওয়ার পরেই সবুজ প্রকৃতি আপনাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকবে। সাই সাই শব্দে ছুটে চলা বাসের দু’পাশে বনের সবুজ বৃক্ষেরা স্বাগত জানাবে মাথা দুলিয়ে। সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির বুক চিরে পিচঢালা মনোরম রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দুপাশে চোখে পড়বে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের ভেতর দিয়ে গেলেও আপনাকে নামতে হবে জাতীয় উদ্যানের গেটে। কারণ দুপাশের কাঁটাতারের বেঁড়া ভেদ করে আপনাকে যেতে দেওয়া হবে না। মূলত বণ্যপ্রাণীর আক্রমণ ও অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতেই এই কাঁটাতারের বেড়া। রাজেন্দ্রপুর পৌঁচানোর আগেই পেয়ে যাবেন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের গেট। তবে গুটিকয়েক বাস ছাড়া বেশিরভাগ বাস একানে থামে না বলেই আপনাকে কখনো কখনো রাজেন্দ্রপুর নেমে উল্টো পথে কিছুটা পাড়ি দিতে হবে। উদ্যানের ভেতর ঢুকতে হবে টিকিট কেটে। টিকিটের মূল্য খুবই অল্প। জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ করার পর গাছপালা আর কটেজ, লেক আর সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে পারবেন আপনি। বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। বিশাল ওয়াচ টাওয়ারে একবার উঠে গেলে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে সবুজের বিশাল সমুদ্র। লোভ সামলাতে পারবেন না, হাতের মোবাইল অথবা ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠবে মুহূর্তেই। লেকের ভেতর দিয়ে স্প্রিটবোর্ডে উঠে জলের সঙ্গে মনের আনন্দও ভাগ করে নিতে পারবেন আপনি।
আর হ্যা, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কিন্তু পাশের ছোটছোট ঝুপ গুলোর দিকে তাকাতে ভুল করবেন না কারণ এই ঝুপ ঝাড়ের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে লজ্জাপতি গাছ। আবার অনেক সময় লজ্জাপতির ঝুপও চোখে পড়বে। আলতো করে ছুঁয়ে দিলেই লজ্জাবতীরা চুপসে যাবে। লজ্জাবতীদের চুপসে দেওয়ার মতো আনন্দ আর কি হতে পারে বলেন!
শুধুই কি লজ্জাবতী! রয়েছে নানা গুল্ম জাতীয় গাছ-গাছালি। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান মূলত ক্রান্তীয় পতনশীল পত্রযুক্ত বৃক্ষের বনভূমি। এ বনে ২২১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে যার মধ্যে ২৪ প্রজাতির লতা, ২৭ প্রজাতির তৃণ, ৩ প্রজাতির পামজাতীয় বৃক্ষ, ১০৫ প্রজাতির ঔষধি, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৪৩ প্রজাতির বৃক্ষ। শাল এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষ। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে কাঁঠাল, আজুলি, কুম্ভী, গান্ধী গজারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ উদ্যানে রয়েছে বেশকিছু পিকনিক স্পট। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। এখানকার কটেজগুলো হলো: বকুল, মালঞ্চ, মাধবি, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউজ রয়েছে।
আরেকটা খবর জানিয়ে রাখি রাত্রি যাপনের জন্য কিন্তু এখানে কোন অনুমোদন দেওয়া হয় না। ফলে ভুলেওে এখানে রাত কাটাবার কথা ভাববেন না। আর পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া করতে চাইলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং নিতে হবে।