আত্ম বিস্মৃত বাঙালী জাতি চিরকালই অনিহা প্রকাশ করে এসেছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য চর্চায়। এ কারণে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় পোনে দুইশত বছর পূর্বে বাঙালীর ইতিহাস নাই বলে খোদোক্তি করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঐ খোদোক্তি দূর করার জন্য অনেক কৃতি বাঙালী বাংলার ইতিহাস চর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন। কেউ ব্যক্তিগতভাবে, কেউ যুগ্নভাবে জাতির ইতিহাস ও ঐতিহার্য রক্ষায় তাদের মহান দয়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সথে পালন করে গেছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্রয় হলেন দিঘাপতিয়ার (নাটোর) জমিদার কুমার শরৎকুমার রায় (জন্ম : ১৮৭৬,মৃত্যু: ১২ এপ্রিল ১৯৪৬) ও তার ২ সহযোগি অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় (জন্ম : ১ মার্চ ১৮৬১,মৃত্যু: ১০ ফেব্রয়ারী ১৯৩০)ও রমাপ্রসাদ চন্দ্র (জন্ম : ১৫ আগষ্ট ১৮৭৩, মৃত্যু: ২৮ মে ১৯৪২); তাদের পরিশ্রমের ফল ১৯১০ সালে গড়া বাংলদেশের একমাত্র শতবষীয় জদুঘর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।
১৯০৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের কাশিম বজারে রাজা মনীচন্দ্রের রাজবাড়ীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে¡ অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গীয় সহিত্য সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন। ১৯০৯ সলে রাজশাহী শহরে পুঁঠিয়ার পাঁচ আনীর রাজ বাড়ীর চত্বরে আচর্য্য পি.সি. রায়ের সভাপতিত্বে বঙ্গীয় সহিত্য সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে। এই সম্মেলনের আঞ্চল-ভিত্তিক একটি মৌলিক তথ্য সম্বলিত প্রবন্ধ উপস্থাপনে ব্যবস্থা করা হয়। তৎকালীণ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ্র অত্যান্ত পরিশ্রম করে ‘বাঙালী জাতির উৎপত্তি’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করে পাঠ করেন। মৌলিক তথ্য সমৃদ্ধ এই প্রবন্ধ উপস্থিত নবীন ও প্রবীণ সহিত্যিকদের মনে ব্যাপক অলোড়ন সৃষ্টি করে। এই সম্মেলনের রমাপ্রসাদ চন্দ্রকে এ অঞ্চলের উপর অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রত্ন সম্পদের উপরে আরো একটি প্রবন্ধ রচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয় এবং তা আগামী অধিবেশনে পাঠনীয় হিসাবে নিদ্ধারণ করা হয়।
পরের বছর, ১৯১০ সালে বিহারের ভাগলপুরে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে কুমার শরৎকুমার রায়, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রমাপ্রসাদ চন্দ্র উত্তর বঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন। সেই সম্মেলনে বিগত সম্মেলনের প্রস্তাবিত প্রবন্ধটি রমাপ্রসাদ চন্দ্র পাঠ করলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিপুল প্রত্ন সম্ভারের গৌরবের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। সম্মেলন শেষে রাজশাহীর এই তিন জন প্রতিনিধি, ঐতিহাসিক রখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভাগলপুরের আইনজীবী নরেশ চন্দ্রে সঙ্গে ভাগলপুরের অন্তর্গত পুরাকীর্তি সমূহ দর্শন করেন এবং বহু প্রত্ন সম্পদ সংগ্রহ করেন। পরে এইগুলি ভাগলপুরের তদানীন্তন জমিদারের অনুমতিক্রমে কলিকাতা বঙ্গীয় পরিষদ জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য দান করা হয়।
কুমার শরৎকুমার রায় ইউরোপে অবস্থান কলে পাম্পেই, থিবি প্রভৃতি প্রাচীন নগরীর পুরাকীর্তির বিপুল সম্ভার দেখে যেমন অনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিলেন, ভাগালপুরের সমৃদ্ধ পুরাতাত্ত্বিক ভান্ডার দেখেও তেমন অনুপ্রাণিত হন। প্রাচীন বরেন্দ্র ভূমিতে যে পুরাকীর্তির ঐতিহ্যের কথা ডা. বুকানন হ্যামিলটন, জেনারেল কানিংহাম, ওয়েস্ট মেকট, রাভেনশ, উইলিয়ম হান্টার, অধ্যাপক ব্লাকম্যান প্রমুখ উল্লেখ করেছেন তার সুত্র ধরে কুমারের মনের অজান্তে এক মহাপরিকল্পনার জন্ম নেয়। বরেন্দ্র ভূমির প্রাচীন ঐতিহসিক প্রত্ন সম্পদের সম্বন্ধে রাজশাহীর প্রতিনিধিত্রয় চিন্তা করতে থাকেন, কি করে পরিকল্পনাটি বাস্তব রূপ দেওয়া যায়। এই দলের সব চেয়ে উৎসাহী কর্মী অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় কুমারকে মালদহের গৌড় পরিদর্শনের জন্য বলেন। দেশে ফিরে কোন কারণ বশতঃ তখন গৌড় পরিদর্শন সম্ভব হয় না। সে সময় তারা একটি সোসাইটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
রাজশাহীতে জাদুঘর বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে ১৯১০ সালের এপ্রিলের প্রথমের দিকে “বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি” গঠন করা হয়। সমিতির সভাপতি হলেন কুমার শরৎকুমার রায়, পরিচালক অক্ষয় কুমার মৈত্র, এবং সম্পাদক হন রমাপ্রসাদ চন্দ্র। পরে শশধর রায়, কলিকাতা জদুঘরের তদানীন্তন সুপারিনটেনডেন্ট রখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রামকমল সিংহ যোগদান করেন। ২৭ অগষ্ট ১৯১০ থেকে সমিতি অনুষ্ঠনিক ভাবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালের ভারতীয় সমিতি আইন অনুযায়ী ১৯১৪ সালে সমিতি রেজিস্টার হয়। তারপর তাঁরা উত্তর বঙ্গের (বরেন্দ্র ভূমির) অনুসন্ধন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। প্রথমে তাঁরা গোদাগাড়ী থানায় অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন; কারণ দেওপাড়া গ্রাম থেকে আবিষ্কৃত হয় বিজয়সেন দেবের একটি প্রশস্তির কথা। তদনুযায়ী অনুন্ধানী দল দেত্তপাড়া, পালপাড়া, মালঞ্চি, জগৎপুর, আতাহার, চব্বিশনগর, তালাই ও মাড়ওইল প্রভৃতি প্রাচীন গ্রামে অনুসন্ধান করেন। ভানপুরের জমিদার চৌধুরী হরিমোহন মহাশয় এই অনুসন্ধানী দলকে অভ্যর্থনা জানান, তারপর সাহাকালীচরণ তাদেরকে আহ্বান করলে তাঁরা কুমারপুর, বিজয়নগর, খেতুর প্রভৃতি স্থান অনুসন্ধান করে প্রাথমিক সূচনাতেই এই দল পাঁচ দিনে একটি চন্ডি মূর্তি সহ বত্রিশ খন্ড প্রত্ন সম্পদ সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। এ সময় দেওপাড়ার দিঘী থেকে একটি কলো পাথরের তৈরী বিখ্যাত গঙ্গা মূর্তি ও একটি লিপি সহ বহু মনসার প্রতীক আবিস্কৃত হয়।
অনুসন্ধানীদল তাঁদের সংগ্রহ নিয়ে রাজশাহী ফিরে আসেন। কিন্তু সংগ্রহগুলি সংরক্ষণ বিরাট একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় কলিকাতা যাদুঘরের তদানীন্তন অধ্যক্ষ রখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রামকমল সিংহ এখানকার সংগৃহীত কতকগুলি প্রত্ন সম্পদ কলিকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়মে ও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের চিত্রশালায় দান করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে রমাপ্রসাদ চন্দ্র আপত্তি জানান।
অনুসন্ধান সমিতির অভূতপূর্ব পুরাকীর্তির অনুসন্ধানে সন্তুষ্ট হয়ে রাজশাহীর তৎকালীন নগরপিতা ভুবন মোহন মৈত্রেয় সমিতিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সভা আহ্বান করেন। সভায় তিনি রাজশাহীতে একটি যাদুঘর স্থাপনের ইঙ্গি দেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের রাাজশাহী শাখার অবৈতনিক সেক্রেটারী বাবু শশধর রায় তাতে পূর্ণ সমর্থন দেন। এই প্রস্তাবের পর থেকে কুমার শরৎকুমার রায়ের মনে উত্তর বঙ্গের ঐতিহাসিক সম্পদ সম্পর্কে একটি গবেষণাগার ও জদুঘর স্থাপনের বিষয়টি উৎসাহ পায়। পরে বগুড়ার খঞ্জনপুর বৈঠকে ক্ষেতলাল, শিবগঞ্জ ও মহাস্থানগড় প্রভৃতি স্থান হই প্রচুর পরিমাণে প্রত্ন সম্পদ সংগৃহীত হলে সমিতির বিশিষ্ট কর্মী ফেট গ্রাম নিবাসী শ্রীরাম মৈত্রেয় রাজশাহীতে একটি যাদুঘর স্থাপন করে এইসব সম্পদ সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। অবশেষে কুমার রাজশাহীতে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ়তা প্রকাশ করেন। সমিতির সম্পাদক রমাপ্রসাদ চন্দ্র বিভিন্ন জেলাতে সংগ্রহ কার্য্য চালাতে থাকে।
১৬ ডিসেম্বর প্রথম সংগৃহিত ৩২টি প্রত্ন সম্পদের প্রর্দশনির মাধ্যমে জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে সংগৃহীত প্রত্ন সম্পদ সংরক্ষন করা হয় রাজা প্রমোদা নাথ রায়ের বাড়ী তে, পরে চৌধুরী মহেন্দ্র কুমার সাহা ও কালী প্রসন্ন আচার্য্যরে বাড়ীতে। সর্বশেষে রাজশাহী পাবলিক লাইব্রেরীর একটি কামরায় এইসব মূল্যবান প্রত্ন সম্পদ স্থানান্তরিত করা হয়।
১৯১১ সালে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ম কতৃপক্ষ বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগৃহীত দূষ্পাপ্য ও মূল্যবান প্রত্ন সম্পদ দাবি করে বসে। ১৯১২ সালে রাজশাহী জুন মাসে তদনীন্তন গবর্ণর বাহাদুরের কাছে রাজশাহীতে প্রস্তাবিত জাদুঘরের অনুমতির জন্য কুমার শরৎকুমার রায় ও রমপ্রসাদ চন্দ্র দার্জ্জিলিং যান। গভার্ণর বাহাদুর লর্ড কারমইকেল (খড়ৎফ ঈধৎসরপযধবষ) আগষ্ট মাসে রাজশাহীতে অনুসন্ধন সমিতির সংগৃহীতত প্রত্ন সম্পদগুলির একটি প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ হন। ১৯১৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী একটি চিঠিতে রাজশাহী শহরে একটি বেসরকারী জাদুঘর স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন।
রাজশাহীতে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির’ প্রস্তাবিত যাদুঘরের ভবণ নির্মানের জন্য কুমার শরৎকুমার রায় কাজ শুরু করেন। যাদুঘরের জন্য তাঁর অগ্রজ রাজা প্রমোদা নাথ বর্তমান মিউজিয়মের ভূখন্ডটি ক্রয় করে দান করেন। তৎসংশ্লিষ্ট অবশিষ্ট ভূখন্ড মিউজিয়মের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের জন্য বাবু দুর্গা দাস ভট্টাচার্য্য দান স্বরূপ ছেড়ে দেন। ১৯১৬ সালে ১৩ নভেম্বর তদানীন্তন গবর্ণর কারমাইকেল কর্তৃক জাদুঘর ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। কুমার নিজ ব্যয়ে জাদুঘর ভবনের কাজ আরম্ভ করেন, পরে তার অনুজ কুমার বসন্তকুমার রায়ের ৫,০০০ টাকা এবং অগ্রজ রাজা প্রমোদা নাথ রায় বহাদুরের প্রয়োনীয় উপরকণাদি এবং আসবাব পত্র দ্বারা মোট ৬৩,০০০ টাকা ব্যয়ে প্রাচীন গৌড়ের স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে অপূর্ব শিল্প সুষমামন্ডিত জাদুঘর ভবনটি নির্মিত করা হয়। জনা যায়, এ ভবনের নকশা কুমার স্বয়ং তৈরী করেন, এ কাজে তাকে সহায়তা করেন প্রকৈশলী বিজয়নাথ সরকার (স্যার যদুনাথ সরকারের ছোট ভাই)। ১৯১৯ সালের ২৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে তদনীন্তন গবর্ণর লর্ড রোনাল্ডসে কর্তৃক জাদুঘরের দ্বারোদঘাটিত হয়। এ অনুষ্ঠানে অন্যতম বিদেশী অতিথি ছিলেন লর্ড রোনাল্ডসের বন্ধু খ্যাতনাম ফরাসী পন্ডিত মাঁসিয়ে ফুঁসে।
১৯২৩ সালে সমিতি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পাহাড়পরে খনন কার্য শুরু করে। যার মেয়াদ ছিল ৫ বছর, কিন্তু পরবর্তী তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯২৭ সালে আগষ্ট মাসে বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির ব্যাপক উন্নতি কল্পে এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কুমার শরৎকুমার রায়, ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রমাপ্রসাদ চন্দ্র, আচার্য্য যদুনাথ সরকার, চৌধুরী মহেন্দ্র কুমার সাহা ও বিজয়নাথ সরকারকে নিয়ে একটি নতুন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি জাদুঘরের উপাদান সংগ্রহের জন্য একটি তহবিল খোলেন। ১৯২৮ সালে বাংলা সরকার এক শত পঞ্চাশ (১৫০) টাকার একটি অতিরিক্ত গ্রান্ট কয়েক বৎসরের জন্য মঞ্জুর করেন। এই ১৫০ টাকা ও মঞ্জুরীকৃত স্থায়ী (২৫০) দুই শত পঞ্চাশ টাকা, মোট (৪০০) চার শত টাকা মাসিক ভাতায় জাদুঘরের প্রথম কিউরেটর অধ্যাপক ননী গোপাল মজুমদারকে ময়েঞ্জোদারোতে খনন কার্য্যরে জন্য দুই বছরের জন্য প্রেরণ করেন। আর একশত টাকা কুমার নিজে থেকে ব্যয় করে অধ্যাপক মজুমদারকে সাহায্য করতেন । এছাড়াও উত্তর বঙ্গের আরও কয়েকটি স্তুপে খনন কার্য্য চালাবার জন্য তিনি অর্থ ব্যয় করেন। এইভাবে কুমার অকাতরে অর্থ ব্যয় ও অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রমাপ্রসাদ চন্দ্রের বন্ধুজনসুলভ সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠানে দ্যুতি সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। যারা বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতির, এই জাদুঘর গঠনে নিঃস্বার্থ ভূমিকা রেখেছেন ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় শ্রদ্ধার সাথে ‘গৌড় রাজমালা’ নামক গ্রন্থে তাঁহাদের নামের একটি তালিকা দিয়েছেন। এই তলিকায় রাজশাহী বিভাগের প্রত্যকটি জেলার রাজা, জমিদান ও কতিপয় উৎসাহী ব্যক্তির নাম উল্লিখিত হয়েছে।
কুমার শরৎকুমার রায়ের প্রিয়তম জ্যেষ্ঠপুত্র সাবিতা রায়ের অকাল মৃত্যুর পরে তার স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৩২ সলে ‘কুমার সবিতা রায় স্মৃতি সংরক্ষণ গ্রন্থমালা’ নামে তহবিল গঠন করা হয় । এই তহবিলের অর্থে জাদুঘরে প্রকাশনা কর্যক্রম শুরু করেন।
রমাপ্রসাদ চন্দ্র রাজশাহী ছেড়ে যাবার পর ১০ ফেব্রুয়ারী ১৯৩০ তে অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় কে এবং ১২ই এপ্রিল ১৯৪৬ তে কুমার শরৎকুমার রায় কে হারায় বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। এর কিছু পর ১৯৪৭ এ হয় দেশবিভাগ হয়। বিভাগোত্তরকালে এই জাদুঘর নানা সঙ্কটের সম্মুখীন হয়। তখন নাকি কয়েকটি মূল্যবান উপাদানও জাদুঘর গ্যালারী থেকে উধাও হয়ে যায়। এমন কি এর অস্তিত্বও হুমকির সম্মুখীন হয়। দেশ ভিাগের কারণে কলিকাতায় জাদুঘরের টাকা আটাপড়ে অয়ের উৎসে ভাটা পড়ে।
তারপর যোগ্য ব্যক্তির উপর পরিচালনার ভার অর্পিত হলে অগ্রগতি অব্যাহত থাকে। ১০ অক্টোবার ১৯৬৪ সলে মিউজিয়ামের সমস্ত দায়িত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্থান্তর করা হয়।
জাদুঘরের প্রথম কিপার ছিলেন রমা প্রসাদ চন্দ তিনি ১৯১০ থেকে ১৯১৭ পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন; তার পর এ দায়িত্ব পালন করেন: রাধা গোবিন্দ বসক (১৯১৭-১৯১৮), ডা. উপেন্দ্র নাথ ঘোষাল (১৯১৮-১৯১৯), ড. রাধা গোবিন্দ বসাক (১৯১৯-১৯২০), বিমল চরণ মৈত্র (১৯২০-১৯২১), সন্তোষ কুমার চট্রোপাধ্যায় (১৯২১-১৯২২), কুমার হেমন্দ্র কুমার রায় (১৯২২-১৯২৫)। ১৯২৫ সলে কিপার পদটি কিউরেট হিসাবে উন্নতর করা হয়। প্রথম কিউরেটর ছিলেন অধ্যাপক ননী গোপাল মজুমদার (১৯২৫-১৯২৭), তার পরে নীরদ-বন্ধু সান্যাল (১৯২৭-৫০), ড. ইতরাৎ হুসেন জুবেরী (১৯৫০-১৯৫১), এম. মীর জাহান (১৯৫১-১৯৫৪), ডি. কে. চক্রবর্তী (১৯৫৪-১৯৫৫) ড. শেখ গোলাম মখসুদ হেলালী (১৯৫৫-১৯৫৬), এম. মীর জাহান (১৯৫৫-১৬/০৪/১৯৫৯), মুখলেসুর রহমান (১৭/০৪/১৯৫৯-১৫/০৯/১৯৬৩), ড. এ. আর. মল্লিক (০১/০৯/১৯৬৩-২০-০৫-১৯৬৫), ড. আবু ইমাম (২১/০৫/১৯৬৫-০৬/১০/১৯৬৬), ও প্রফেসার মুখলেসুর রহমান (০৯/১১/১৯৬৬-০৬/০৫/১৯৭৪)। পরবর্তীতে জাদুঘরের পরিচালক হিসাবে দাযিত্ব পালন করেন প্রফেসার মুখলেসুর রহমান (০৭/০৫/১৯৭৪-৩১/০১/১৯৭৬ ) প্রফেসার আবু ইমাম (২৪/০৯/১৯৭৬-১৩/১২/১৯৭৬), এ. বি. এম হুসেন (২৮/০৯/১৯৭৬-১৩/১২/১৯৭৬), প্রফেসার এম. কে. ইউ. মোল্লা ০১/০২/১৯৪৬-২৭/০৫/১৯৮৮), প্রফেসার সাইফুদ্দিন চৌধুরী ২৮/০৫/১৯৮৮-০২/১২/২০০৮),ও মো. জাকারিয়া (০৩/১২/২০০৮-বর্তমান)।
জাদুঘরের প্রদর্শনি ৬ টি গ্যালারি তে বিভক্ত। বাংলাদেশের একমাত্র এ জাদুঘরেই আছে ময়েঞ্জোদারো নিদর্শনা। আরো আছে দূর্লভ :
গুপ্ত তম্রশাসন ও পাল-সেন পর্বের শিলালিপি।
প্রাচীন দুষপ্রাপ্র হিন্দু, বৈধ্য ও ষৈব মুক্তি।
সচিত্র অষ্টসহস্রিকাপ্রজ্ঞাপারমিতা এটি একটি বৌদ্ধ দর্শন গ্রন্থ। রাজা হরি বর্মার উনবিংশততম রাজত্বকালে আনুমানিক ইংরেজী ১১০৩ সালে অনুলিখি।