Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Travel Image

ঢাকা থেকে একটু দূরে




রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন জেলা গাজীপুর। এই জেলার উত্তরে রয়েছে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ, পূর্বে কিশোরগঞ্জ-নরসিংদী, দক্ষিণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং পশ্চিমে ঢাকা ও টাঙ্গাইল জেলা অবস্থিত। দেশের প্রাচীন জেলাগুলোর একটি এই গাজীপুরে রয়েছে ঘুরে বেড়ানোর মতো নানা দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থান।


গাজীপুর শহরের বেশ কিছুটা আগে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বপ্রথম স্মারক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরে সংঘটিত প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রামে শহীদ হুরমত আলীসহ অন্য শহীদদের স্মরণে ১৯৭১ সালেই নির্মিত হয় এ ভাস্কর্যটি। এর স্থপতি আবদুর রাজ্জাক। ভাস্কর্যটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। আর এর দু’পাশে ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১১নং সেক্টরের ১০৭ জন এবং ৩নং সেক্টরের ১০০ জন শহীদ সৈনিকের নাম খোদাই করা রয়েছে।


গাজীপুরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ স্থান ভাওয়াল রাজবাড়ী। এই প্রাচীন রাজবাড়ীটি গাজীপুর সদরে অবস্থিত। জমিদার লোকনারায়ণ রায় বাড়িটির নির্মাণ শুরু করলেও শেষ করেন রাজা কালীনারায়ণ রায়। প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে মূল ভবনটি বিস্তৃত। ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশপথ। মূল প্রবেশপথের পরই রয়েছে প্রশস্ত একটি বারান্দা এবং এর পর একটি হল ঘর। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য ছিল শাল কাঠের তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জায়গায় রয়েছে ‘নাটমণ্ডপ’।


রাজবাড়ীর সব অনুষ্ঠান হতো এই মঞ্চে। রাজবাড়ীর মধ্যে পশ্চিমাংশের দ্বিতল ভবনের নাম ‘রাজবিলাস’। এই ভবনের নিচে রাজার বিশ্রামাগারের নাম ছিল ‘হাওয়া মহল’। দক্ষিণ দিকে খোলা খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষের নাম ‘পদ্মনাভি’। ভবনের দোতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ছিল ‘রানীমহল’ নামে পরিচিত। সুরম্য এই ভবনটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৬০টি কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এটি জেলা পরিষদ কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে মৃতপ্রায় চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী। এটি ছিল ভাওয়াল রাজপরিবারের সদস্যদের শবদাহের স্থান। প্রাচীন একটি মন্দির ছাড়াও এখানে একটি সমাধিসৌধ রয়েছে।


এছাড়া গাজীপুরে রয়েছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। পৃথিবীর অন্যান্য জাতীয় উদ্যানের আদলে ৬ হাজার ৪৭৭ হেক্টর জমিতে ১৯৭৩ সালে এই উদ্যান সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল বৃক্ষাদি হল শাল।এছাড়াও নানা রকম গাছ-গাছালিতে পরিপূর্ণ এই উদ্যান।
জাতীয় উদ্যানের ভেতরে বেশ কয়েকটি বনভোজন কেন্দ্র, ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্ট হাউস রয়েছে। উদ্যানে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৬ টাকা। এ ছাড়া পিকনিক স্পট ব্যবহার করতে হলে বন বিভাগের মহাখালী কার্যালয় থেকে আগাম বুকিং দিয়ে আসতে হবে। জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় সফীপুর আনসার-ভিডিপি অ্যাকাডেমির বিশাল চত্বর ঘুরে বেড়ানোর জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। অনুমতিসাপেক্ষে বনভোজন করারও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।



যেভাবে যাবেন :

ঢাকা থেকে গাজীপুর যেতে পারেন রেল ও সড়কপথে। ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী প্রায় সব আন্তঃনগর, কমিউটার, মেইল ট্রেনে চড়ে আসতে পারেন গাজীপুরে।

এছাড়া ঢাকার কাঁচপুর ও যাত্রাবাড়ী থেকে ট্রান্স সিলভা, অনাবিল, ছালছাবিল পরিবহন, লোহারপুল থেকে রাহাবার পরিবহন, মতিঝিল থেকে গাজীপুর পরিবহন, ভাওয়াল পরিবহন, অনিক পরিবহন, সদরঘাট থেকে আজমিরী, স্কাইলাইন পরিবহন, গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ছাড়াও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাস সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলাচল করে গাজীপুরের বিভিন্ন রুটে। ভাড়া ৪০-৬০ টাকা।



কোথায় থাকবেন :


ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই শেষ করা সম্ভব গাজীপুর ভ্রমণ। তাই এখানে অবস্থান না করলেও চলে। তারপরও শহরের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এ রকম কয়েকটি হোটেল হল-হোটেল আল মদিনা, থানা রোডে হোটেল মডার্ন, কোনাবাড়ীতে হোটেল ড্রিমল্যান্ড ইত্যাদি। এসব হোটেলে দৈনিক ১০০-২৫০ টাকায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।