Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Technology Image

পাটের জীন আবিষ্কারক বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম



পাটের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে গেছে। আগে যে এমনটা ছিল না তা অবশ্য নয়। পাট চাষের পথিকৃৎ হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ পরিচিত নাম ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পণ্যের তালিকায় শীর্ষে ছিল পাট। রপ্তানিপণ্যের তালিকায় পাট অনেক পিছিয়ে গেলেও পাট গবেষণার সাফল্যকে সঙ্গী করে আবারও বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম স্বগর্বে আলোচিত হলো সোনার বাংলার বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আমলের কারনে।

বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম ফরিদপুরে ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা "দলিলউদ্দিন আহমেদ" ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) একজন কর্মকর্তা এবং তার মা ছিলেন লিরিয়ান আহমেদ একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষিকা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার পিতা শহীদ হলে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে মা লিরিয়ান আহমেদের উপর। শিক্ষকতা করে তিনি তাঁর চার ছেলে ও চার মেয়েকে গড়ে তোলেন। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে স্বাধীনতার পর মাকসুদুল আলম চলে যান রাশিয়ায়। তিনি ১৯৭৯ সালে রাশিয়ার মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাইক্রোবায়োলজিতে এমএস ডিগ্রী লাভ করেন।

তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে মাইক্রোবায়োলজিতে পিএইচডি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য। মাকসুদুল আলম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি এর আগে ২০১০ সালে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলে দেন। বিশ্বের তিনটি ফসল, চারটি জীবাণুসহ ১৯টি জীবের জীবনরহস্য উন্মোচনের নেতৃত্বে ছিলেন মাকসুদুল আলম। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পেঁপে, মালয়েশিয়ার হয়ে রবার ও বাংলাদেশের হয়ে পাট ও ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। তিনি বাংলাদেশে পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পরে পাটবিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্পের কাজে হাত দেন। মাকসুদুল আলম এর আগে মালয়েশিয়ার গবেষণা করতেন। ২০১০ সালে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর উদ্যোগে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে ছিলেন।



জীবন রহস্য

জীবন রহস্য বা জেনোম সিকোয়েন্স হচ্ছে জীবনের সেই নকশা যা কোনো জীবের সমস্ত কর্মকাগু ও আচার আচরন নিয়ন্ত্রণ করে এই নকশার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে জীবনের ব্যাপ্তি ও প্রকাশ|

জীবন রহস্যের রাসায়নিক পদার্থ

জীবনের নকশা সাজাতে প্রয়োজন হয় ৪ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এগুলো হলো-এ এডিনিন (Adenine)টি থায়মিক (Thymine).জি- গুয়ানিন (Guanine) ও সি সাইটোসিন(cytosine) জীবের আচার আচরন নিয়ন্ত্রণকারী সব জীনই ধারন করে জেনোম তাই কোন জিবের জীবন রহস্য উন্মেচনের অর্থ হলো তার জীবন নকশায় এই চাএটি অহ্মর কীভাবে সাজানো আছে তা জেনে যাওয়া | ওই জীবন নকশায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে কোনো জীব বা উদ্ভিদকে রোগ প্রতিরোধী করে তার জীবনকে নিরাপদ করা যায়|

প্রয়োগ

যেকোন শক্রকে মোকাবেলা করতে আগে জানা দরকার সেটি কোন ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে | আর এটা জানতে পারলে তাকে মোকাবেলা করাও সহজ হয়| ফসলের শক্র ছএাক প্রতিরোধেও আগে জানতে হবে এটি কোন ধরনের উপায় ব্যবহার করে যাতে এর মোকাবেলা করা সহজ হয়| এর জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে সে বিষয়টি জানা হয়ে গেছে| এখন ছএাকের জীবন নকশাই বলে দেবে যে কোন ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে| এর পূর্বে অনেকটা অনুমান ভিওিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ব্যবহার আগেই সাফল্যের মুখ দেখলো গবেষণাটি|

বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাস

• Kingdom: Fungi
• Phulum: Ascomycota
• Class: Dothideomycetes
• Subclass: Incertae sedis
• Order: Botryosphaeriales
• Family: Botryosphaeriaceae
• Genus: Macrophomina
• Species: Macrophomina phaseolina

যে ছএাকটি নিয়ে গবেষনা করা হয়

বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম-এর নেতৃ্ত্বে বিজ্ঞানীদের দলটি ম্যাক্রোফমিনা ফাসিওলিনা নামক ছএাক নিয়ে গবেষনা করেন| এ ছএাকটি উদ্বিদের বিভিন্ন ধরনের হ্মতি করে থাকে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রোগ হলো ব্লাইট এই রোগে আক্রমনের ফলে উদ্বিদের আক্রান্ত অংশ শুষ্ক ও বিবর্ণ হয়ে যায়|

রুট রট

এই রোগে আক্রান্ত উদ্বিদের শিকড় পচে যায় বা ধীরে ধীরে হ্ময়প্রাপ্ত হয়|

গবেষনা কার্যক্রম

গবেষণা পরিচালিত হয় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউটে বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম-এর নেতৃ্ত্বে| ২০১০ সালে নভেম্বরে শুরু হয় গবেষণা| ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই গবেষণার প্রাথমিক মেয়াদ ধরা হয়েছিল ৩ বছর| তবে সময় শেষ হওয়ার আগেঈ সাফল্যের মুখ দেখলো গবেষণাটি|

পাটের জীবনরহস্য বা জিন নকশা (জিনোম সিকোয়েন্সিং) বের করার গবেষণায় এবার পূর্ণতা পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম। বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল একজন বাংলাদেশী জিনতত্ত্ববিদ। তাঁর নেতৃত্বে তোষা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন হয়েছিল ২০১০ সালে। সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চাষ হওয়া পাটের দুটি প্রধান জাতের মধ্যে এটি একটি। এবার তাঁরই নেতৃত্বে আরেকটি জাত দেশি বা সাদা পাটের জীবনরহস্য উন্মোচিত হলো। ২০১২ সালে তাঁর দল পাটের জন্য ক্ষতিকর একধরনের ছত্রাকের জীবনরহস্য উন্মোচন করায় উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবনের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায় বাংলাদেশকে।



সোনার বাংলার প্রাণ ড. মাকসুদুল আলমের কর্মজীবন বেশ বিস্তৃত তিনি পেত্রোভিচের প্রাণরসায়নের নানা শাখায় অবদান রেখেছেন। জার্মানিতে তিনি কাজ করার সুযোগ পান প্রাণরসায়নের অন্য দুই দিকপাল "ডিয়েটার ওয়স্টারহেল্ট" ও "জেরাল্ড হেজেলবাউয়ের" সঙ্গে। জার্মানির পর তিনি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন বাই প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গবেষণার জন্য মাকসুদ ও তাঁর সহকর্মীদের ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয়। ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। ওই সেন্টারে কাজ করার সময় ২০০০ সালে তিনি ও তাঁর সহকর্মী "রেন্ডি লারসেন" প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিনের মতো এক নতুন ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের সুবাদে মাকসুদের খ্যাতি ও দক্ষতা সবার নজরে আসে। ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে কাজ করে যান। হাওয়াইয়ান পেঁপের জিন নকশা উন্মোচনের জন্য ডাক পড়ে তাঁর। এ কাজ সম্পন্ন করার পর বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের প্রচ্ছদে স্থান পান তিনি। পেঁপের জিন নকশা উন্মোচনের পর তিনি পাটের জিন নকশা উন্মোচনের কথা ভেবেছিলেন। সে সময় কয়েকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ডাক পড়ে মালয়েশিয়ায় রাবারের জিন নকশা উন্মোচনের জন্য, ওই কাজেও তিনি সফল হন। পরে তিনি মনোনিবেশ করেন পাটের জিন নকশা উন্মোচনে।



সোনার বাংলার বাঙ্গালী জিন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা পাটসহ বিশ্বের ৫০০টি উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর ছত্রাকের জীবনরহস্য উদঘাটন করেছেন। এর মাধ্যমে ছত্রাক কীভাবে ফসলের জৈব উপাদান নষ্ট করে, উৎপাদন কমিয়ে দেয় সেই রহস্যের সমাধান মিলবে। Macrophomina phaseolina নামের ছত্রাকটি দুনিয়াজুড়ে ৫০০টি উদ্ভিদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ছত্রাকের আক্রমণে শুধু পাটের উৎপাদনই ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যেতে পারে। জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে ওই ছত্রাক ফসলের শরীরে প্রবেশ করে কীভাবে তাদের প্রোটিনসহ অন্যান্য জীবনীশক্তি নষ্ট করে, তার রহস্য খুঁজে পাওয়া গেছে। তাঁদের এই উদ্ভাবন ১৯ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল বিএমসি জেনোমিকস-এ প্রকাশিত হয়েছে।

২০ বছর আগে দেশের বিজ্ঞানীরা সাদা আঁশের পাটের একটি লাইন (জাত তৈরির আগের পর্যায়) উদ্ভাবন করেছিলেন। এই ধবধবে সাদা আঁশযুক্ত পাটের আঁশ ব্যবহার করতে প্রক্রিয়াজাত (ব্লিচিং) করার দরকার হয় না। প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই এটি সরাসরি কাপড় বা অন্যান্য সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। পরিশোধন করতে না হলে পাটের উৎপাদন-ব্যয় হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি পাটের বর্জ্য থেকে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। এই জাতকে ঘিরে বিজ্ঞানীরা এমনটাই আশা জাগিয়েছিলেন। কিন্তু লাইন থেকে জাত তৈরি করতে গিয়েই লাগল বিপত্তি। ধবধবে সাদা আঁশের ওই পাট দেশবাসীর মনে আশার ঝিলিক দিয়ে আবার হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছিল। ওই পাটের জাতটি বড় হওয়ার আগেই ছত্রাকের আক্রমণে কাণ্ডপচা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাটের সাদা আঁশ দিয়ে সরাসরি কাপড় তৈরির সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। তাই বিজ্ঞানীরা এই মুহুর্তে ওই সাদা পাটের জাতকে ছত্রাকসহিষ্ণু করার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। ওই জাতের ওপর আক্রমণকারী ছত্রাকটির ব্যবহৃত হাতিয়ার ও তা ব্যবহারের কলাকৌশল এর জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে জানা গেছে।

আমেরিকা কিংবা বিশ্বের অন্যান্য ধনী দেশের কোটি কোটি টাকার প্রলোভন ছেড়ে যে মানুষটি সোনার বাংলায় পড়ে ছিলেন তিনি হলেন পাটের জিন আবিস্কারক ড. মাকসুদুল আমল। দেশ প্রেম একেই বলে যেখানে অর্থ ছাড়া কেউ কথা বলে না আর সেখানে ড. মাকসুদুল আমল বাংলাদেশে এসে বিনা পারিশ্রমিকে পাটের জিনোম আবিস্কার করেছেন ।



পাটসহ প্রায় ৫০০ উদ্ভিদের স্বাভাবিক বিকাশকে এই ছত্রাক বাধাগ্রস্ত করে। কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে তাঁর সাধনা এবার এগিয়ে গেল আরও বড় এক ধাপ। তাঁর পাট ও ছত্রাকের জীবন রহস্য ভেদের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। সে গবেষণায় ছিল এ দেশের প্রায় ৩০ জনের এক গবেষকদল। এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন মাকসুদুল আলমসহ মোট পাঁচজন গবেষক। তিন বছর মেয়াদের সে প্রস্তাবিত গবেষণার ফল তাঁরা বের করে আনেন এক বছরের মাথায়। মাকসুদুল আলমের জন্য মাসে ১৬ লাখ টাকা পারিশ্রমিক ধরা হয়েছিল, তিন বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় পৌনে ছয় কোটির টাকা। কিন্তু সে পারিশ্রমিক তিনি গ্রহণ করেননি। মাকসুদুল আলমের মূল লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞানকে এলিটদের ক্লাব থেকে বের করে সাধারণের স্তরে পৌঁছে দেওয়া। এ শিক্ষা তাঁর মধ্যে এসেছে শৈশবেই, মায়ের প্রেরণায়। একাত্তরের ৩ এপ্রিল মাকসুুদুলের বাবা দলিলউদ্দীন আহমেদকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। শক্তহাতে সংসারের হাল ধরেন মা লিরিয়ান আহমেদ। সব বাধা পেরিয়ে যোগ্য করে তোলেন সন্তানদের। তাঁর এই হার না-মানার চেতনাই সঞ্চারিত হয়েছে সন্তানের মধ্যে। মাকসুদুল আলমের জন্ম ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে, ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর। বেড়ে ওঠা পিলখানায়। তরুণতর বয়সে ছোট ভাই মাহবুবুল আলম ও বন্ধু জোনায়েদ শফিকের সঙ্গে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘অনুসন্ধানী বিজ্ঞান ক্লাব’ ক্লাবের কার্যালয় ছিল লালবাগের ২৩ নম্বর গৌরসুন্দর রায় লেনে, তাঁদের বাসার ছাদে। ক্লাবের সভা বসলে খুদে বিজ্ঞানীদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন মা। ক্লাবের কাজ বলতে ছিল গাছ পর্যবেক্ষণ, গাছের চারা লাগানো ও পাতা সংগ্রহ করা। গাছের পাতা অ্যালবামে সাজিয়ে বই দেখে দেখে বের করতেন গাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম। বিজ্ঞানের বৃহত্তর জগতের আহ্বান এভাবেই পৌঁছায় মাকসুদুল আলমের কাছে। একসময় পাড়ি দেন রাশিয়ার মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢুকে পড়েন পুরান ঢাকার গলি থেকে জ্ঞানের মহাসড়কে। রপ্ত করতে থাকেন প্রাণরহস্যের দরজা খোলার জাদুমন্ত্র। শৈশবে যাঁর মন আবিষ্ট করে রেখেছিল গাছ, অন্য কিছুতে কী করে মন বসে তাঁর? প্রাণের অজানা বিস্ময়কর বর্ণমালা উদ্ধারকেই তিনি বেছে নেন গবেষণার ব্রত হিসেবে। উচ্চশিক্ষা শেষে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সালে আবিষ্কার করেন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হেলো ব্যাকটেরিয়ামের জীবনরহস্য। সেই থেকে শুরু। তাঁর নামের সঙ্গে একের পর এক নিয়মিত যুক্ত হতে থাকে নানা প্রাণরহস্য উন্মোচনের কৃতিত্ব।



পেঁপে দিয়ে শুরু বিজ্ঞানের বিশ্বপরিসরে মাকসুদুল আলম প্রথম চমক দিয়েছিলেন পেঁপের জীবনরহস্য ভেদ করে। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে নানা রোগের কারণে ভীষণ ক্ষতির শিকার হচ্ছিলেন পেঁপেচাষিরা। মুক্তির প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। ফল মিলছিল না। মাকসুদুল এ গবেষণায় সফল হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এবার তাঁর কাছে ডাক আসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, রাবারের জীবনরহস্য উন্মোচনের। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণার সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয় তাঁকে। এখানেও তিনি যথারীতি সফল। মস্কো, হাওয়াই, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বা দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাকসুদুলের নেতৃত্বে গবেষণার পর গবেষণায় আলোকিত হতে থাকে প্রাণের বিচিত্র জীবনরহস্য। এরই মধ্যে ঘটে চমকপ্রদ এক ঘটনা। নভেম্বর ২০০৯-এ প্রথম আলোর এক ক্রোড়পত্রে বেরোয় তাঁর কৃতিত্বগাথা: ‘পেঁপের পর রাবারের জিন-নকশা উন্মোচন করলেন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম: উন্মোচিত হোক আমাদের পাটের জিন-নকশা’ তাতে চোখ পড়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর। মাকসুদুলকে তিনি দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে দায়িত্ব দেন পাটের জীবন-নকশা উন্মোচনের।

৬০ বৎসর বয়সে সোনার বাংলার সোনার ছেলে আমাদের রেখে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে হাওয়াইয়ের কুইন্স মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি ছিলেন। এর আগে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত থেকে তার শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একই সঙ্গে ড. মাকসুদুল আলমের লিভার, কিডনি এবং ফুসফুস অকেজো হয়ে পড়ে। শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ১৬ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।