Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.
Technology Image

যেভাবে বুঝবেন আপনি স্মার্টফোন আসক্ত



স্মার্টফোন - সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এমনকি অনেক সময় আবার ঘুমের মধ্যেও আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি। সমাজটা আজ যেন সত্যিই এই স্মার্টফোনের কারণে অনেক দিক দিয়েই হয়ে গিয়েছে অসামাজিক! অনেক ক্ষেত্রেই সেই 'কফি হাউজের প্রাণবন্ত আড্ডার এখন আর দেখা মেলেনা, আর যদি শেষ পর্যন্ত আড্ডা শুরুই হয় তার মধ্যেও স্মার্টফোন থেকে যায় সমান ভাবে। সবাই যেন স্মার্টফোনের এই যুগে সবার সাথে সব সময় কানেক্টেড, কিন্তু ডিজিটাল এই পদ্ধতি কি সত্যিই আমাদের মধ্যেকার আবেগকে কমিয়ে দিচ্ছে না? সহজ একটি বিষয় একটু চিন্তা করে দেখুন, আগে আপনি আপনার ছোট বেলার বন্ধুদের অনেক দিন পরে দেখলে যে রকম খুশী হতেন, আনন্দ পেতেন - সেই আনন্দ কি আর আজকে পান? কেননা ছোট বেলার বন্ধুতো সবসময়ই ডিজিটাল ভাবে প্রায় আপনার সামনেই ছিল! বলবেন, তাই বলে কি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলবেন না? কেন নয়? অবশ্যই! কিন্তু তাই বলে স্মার্টফোন আসক্ত হতে হবে? আপনি কি জানেন আমরা প্রায় কম বেশি সবাই স্মার্টফোন আসক্ত? মনে মনে ভাবছেন 'আমি নাহ!?' চলুন, দেখে নেয়া যাক, আপনি স্মার্টফোন আসক্ত কি না। আমি কিছু পয়েন্ট তুলে ধরবো যা আসলে আমার কথা নয় কিন্তু আমি প্রকাশ করতে চেষ্টা করব আমার মত করেই। পয়েন্ট গুলোর সাথে যদি আপনি মিলে যান তবেই বুঝতে পারবেন, আসলে আপনি স্মার্টফোন আসক্ত কি না। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

১। রাস্তায় হাঁটার সময় স্মার্টফোনের ব্যবহার
এর-ওর উদাহরণ না দিয়ে এই পয়েন্টটিতে আমার নিজের কথাই বলা যাক। আমি যখন রাস্তায় হাঁটি তখন সব সময়ই আমার হাতে স্মার্টফোন থাকে। ভাইবার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম - প্রায় সব কিছু একই সময়ে ব্যবহার করার ফলে হাঁটার সময় মনোযোগ প্রায় ৯০ শতাংশই থাকে স্মার্টফোনের উপর। তাই, মাঝে মাঝে রিক্সার সামনে পড়তে হয় আবার মাঝে মাঝে রাস্তায় পরে থাকা ময়লার উপর পা পরে যায়। এগুলোতো অনেক ছোট খাটো ব্যাপার, এরকম ভাবে কিন্তু অ্যাকসিডেন্ট হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছুই নয়।

স্মার্টফোন সম্পর্কিত অ্যাকসিডেন্টগুলো বর্তমানে বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে এরকম ঘটনা এখন পর্যন্ত খুব কম হলেও নেভাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া - এরকম বেশ কিছু দেশগুলোতে স্মার্টফোন রিলেটেড অ্যাকসিডেন্টের পরিমাণ এতটাই বেশি যে সেখানকার কিছু স্টেটে হাঁটার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করার কারণে জরিমানা করার পদ্ধতিও চালু হয়েছে। আমাদের দেশে এরকম কিছু চালু হয়নি আর সম্ভবত এরকমটা কখনোও হবেও না, কিন্তু তাই বলে আমাদের নিরাপত্তা তো আমাদেরকেই দেখতে হবে, নয় কি? যাই হোক, আসলে এই পোষ্টের উদ্দেশ্য সচেতন করা নয় বরং আপনি স্মার্টফোন আসক্ত কি না তার পেছনে কিছু যুক্তি তুলে ধরা। তো আপনিও যদি রাস্তা ঘাটে হাঁটার সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন তবে অবশ্যই আপনি একজন স্মার্টফোন আসক্ত। উপদেশ থাকবে, রাস্তায় হাঁটার সময় স্মার্টফোনে নয়, চোখ থাকবে রাস্তাতেই।



২। টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার করা
ইংরেজি ছবিগুলোতেই এরকম একটা দৃশ্য বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে, টয়লেটে কমোডের উপরে বসে পত্রিকা পড়া। সেই পত্রিকার স্থান এখন স্মার্টফোন দখল করে নিয়েছে। আর স্মার্টফোন মানেই অনলাইন, আর অনলাইন মানেই দুনিয়ার সাথে আপনি কানেক্টেড। কিন্তু, যদি এরকম ভাবে আমরা ভেবে দেখি যে টয়লেট ব্যবহার করার সময় আমরা দরজা লক করে থাকি! যেন, সেই সময়টুকুতে আমরা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারি। কিন্তু স্মার্টফোন নিয়েই যদি আপনি টয়লেটে ঢুকে থাকেন তবে ব্যাপারটা কেমন হয়ে গেল না? টয়লেট ব্যবহারের সময়েও আপনি দুনিয়ার সাথে কানেক্টেড, হয়তো চ্যাট করছেন আপনার প্রিয় মানুষটার সাথে...! ভাবুন একবার!!

ব্যাপারটা অনেকের কাছেই কিছুটা বিদঘুটে লাগতে পারে তবে টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার করার হার কিন্তু কম নয়! মানুষ তার দরকার থেকে শুরু করে গেম খেলার জন্যেও টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে। এমনকি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর টয়লেটে বসে নিউজ ফিড চেক করাটাও কিছু মানুষের নিত্যদিনের স্বভাব। আপনি যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তবে লজ্জা পাবার কিছু নেই, কেননা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ ব্যবহারকারী টয়লেটে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে। তবে, আপনি যদি সত্যিই তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তবে আপনার অবশ্যই জানা উচিৎ - আপনি একজন স্মার্টফোন আসক্ত।



৩। প্রায় সব কিছুর জন্যেই স্মার্টফোনের উপর ভরসা করা
ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে বসে আছেন। এখন কোন একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের মধ্যে দ্বিমত চলছে। আগে যদি এরকম হতো তবে সেই বিষটি সম্পর্কে প্রায় সবার আলাদা আলাদা মতামত পাওয়া যেত কিন্তু এখন দেখা যায় কোন প্রশ্ন উঠলেই মাথা না খাঁটিয়ে স্মার্টফোনের সাহায্য নিয়ে সেই ডিসকাশনটি শেষ করে দেয়া।

আবার ধরুন, আগে কেউ যদি নতুন কোন স্থানে যেত তবে যাবার আগে লোকেশন খুব ভালোভাবে জেনে বুঝে যেত যেন কোন কারণেই কোন প্রকার সমস্যা না হয় বা হারিয়ে না যায়। কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোন ম্যাপ থাকার কারণে কেউ কোথাও যাবার আগে খুব একটা খোঁজ খবর নেয় না, স্মার্টফোন নিয়েই বেরিয়ে পরে।

পূর্বে ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগের মধ্যে ক্যালকুলেটর পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোনের কল্যাণে ক্যালকুলেটরের দেখা শুধু পরীক্ষার হলেই মেলে। তাও সেটা পরীক্ষার হলে স্মার্টফোন ব্যবহার না করা যাবার কারণে। যেদিন পরীক্ষার হলেও স্মার্টফোন ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে সেদিন থেকে সম্ভবত ক্যালকুলেটর হয়ে যাবে যাদুঘরের রাখার বস্তু! স্মার্টফোন অবশ্য অনেক রকম ক্যালকুলেটরের সুবিধাই দিয়ে থাকে, নরমাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাওয়ারের সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর পর্যন্ত আছে স্মার্টফোনে।

আরেকটি বিষয়, পড়াশোনা রিলেটেডই। আগে পরীক্ষার হলে যাবার সময় ছাত্রছাত্রীদের হাতে দেখা যেত বই। কিন্তু বর্তমানে লক্ষ্য করলে দেখবেন সবার হাতে দেখা যায় স্মার্টফোনের! আর সেই স্মার্টফোনগুলোতেই থাকে প্রয়োজনীয় ই-বুক, পিডিএফ কিম্বা মাইক্রোসফট অফিস ফাইল সমূহ।

উপরের সবগুলো বিষয়ই ভালো, কিন্তু মূল ব্যাপারটা হচ্ছে নির্ভরশীলতা। আমি তিন চারটি পয়েন্ট বললাম যেগুলো লেখার সময় আমার মাথায় এসেছে, আপনি আপনার কথা চিন্তা করলেই দেখতে পারবেন আপনার তালিকায় আছে আরও অনেক কিছুই। আর সত্যিই যদি আপনি আপনার প্রায় সব কাজেই কোন না কোন ভাবে স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন তবে আপনি একজন স্মার্টফোন আসক্ত মানুষ।



৪। প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত স্মার্টফোনে ক্যাপচার করা
বর্তমানে সবার হাতে স্মার্টফোন আছে, এবং স্মার্টফোন মানেই কিন্তু মোটামুটি থেকে শক্তিশালী একটি ক্যামেরা ইউনিট থাকা। যাই হোক, এখন আমরা প্রায় সব কিছুই আমাদের শখের স্মার্টফোনটিতে বন্দী করে রাখতে চাই। রাস্তায় ঘুরতে থাকা ছোট্ট কুকুরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ভেজা কাক, মেঘলা দিনের আকাশ থেকে শুরু করে রৌদ্রজ্জ্বল দিন - এমন কি না ক্যাপচার করিনা আমরা? আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন আটকে যাচ্ছে এই স্মার্টফোনের ফ্রন্ট এবং রেয়ার ক্যামেরায়। ব্যাপারটা যে খারাপ তা কিন্তু নয়, তবে অবশ্যই আমাদের জীবন থেকে কিছু ম্যাজিক মোমেন্ট আমরা হারিয়ে ফেলছি।

আমরা সব কিছুরই ছবি তুলতে চাই, আর সেই ছবি তোলার সময়ই- হয়তো ফোকাস বা ফ্রেম ঠিক করার সময়, আমরা যে কত শত এক্সপ্রেশন মিস করি তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? একটি এক্সপ্রেশনই কিন্তু আমাদের মন ভরাতে সক্ষম, কিন্তু ডিজিটাইলেজশনের যুগে ডিজিটাল ভাবে আমাদের ম্যাজিক মোমেন্ট গুলো বন্দী করতে গিয়ে আমরা অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলছি যা আমরা জানছিও না...! আবার ধরুন, আগে যখন ছবি তোলাটা এতটা সহজ ছিলোনা তখন আমাদের কাছে ছবির ভ্যালুই ছিল অন্য রকম! কিন্তু বর্তমানে, সেটা আর নেই...। যাই হোক, আবারও আমি ভালো মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছি যা আমাদের আজকের টপিক নয়। তো, যদি আপনিও এরকম প্রতিটি মুহূর্ত স্মার্টফোনের রঙিন স্ক্রিনে আটকে রাখতে পছন্দ করেন তবে আপনিও একজন স্মার্টফোন আসক্ত মানুষ। আর আপনিও অনেক কিছুই ধরে রাখতে পারলেও হারাচ্ছেনও অনেক কিছুই।



৫। আপনি বিছানাতেও আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেন
এখনকার তরুণ সমাজ ঘুমাতে যায়ই কিছুটা দেরি করে। আর তখনও তাদের হাতে থাকে স্মার্টফোন। আপনি ইন্টারনেটে একটু সার্চ করলেই জানতে পারবেন যে ঘুমের আগে এই স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটগুলোর ব্যবহার আমাদের ঘুমের উপর কতটা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। নরওয়েতে করা একটি গবেষণা অনুযায়ী ঘুমের আগে স্মার্টফোন ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর ঘুমের বিপরীতে কাজ করে থাকে। আর আপনিও এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।