মুস্তাফিজুর রহমান যিনি উইকেট পেলে একসাথে গর্জে উঠে কোটি প্রানের হুংকার।মাত্র কয়েকটা ম্যাচ খেলে তিনি রেকর্ড করে ফেলেছিলেন যা আজ পর্যন্ত কেউ করে দেখাতে পারেনি ক্রিকেট বিশ্বের নামি দামি খেলোয়াড়। স্বপ্নের চেয়েও অসম্ভব সুন্দর গতিতে এগিয়ে চলছেন বাংলাদেশী পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কী, টি২০ আর কী ওয়ানডে- এই দুই ফরম্যাটে স্বপ্নের অভিষেকের পর ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার আসর, টেস্টেও স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। চট্টগ্রাম টেস্টে হাশিম আমলাকে দিয়ে উইকেট শিকারের খাতা খুলেছিলেন তিনি। এক ওভারে ৪ বলে তিন উইকেট নিয়ে রীতিমত বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে রীতিমত ইতিহাসই সৃষ্টি করেছেন তিনি। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে এবং টেস্ট অভিষেকে ম্যাচ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। এবার সেই মুস্তাফিজ দাঁড়িয়ে অনন্য এক ইতিহাসের সামনে। যে রেকর্ডটিও আর কারও সামনে নেই।
আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাসটা মোটামুটি ১৫০ বছরের পুরনো। আর ওয়ানডের বয়স তো সেই ১৯৭১ সাল থেকে- মাত্র ৪৫ বছরের। টি-২০’র ইতিহাস আরও কম। ভালো করে এক দশকও পার হয়নি। ক্রিকেটের আসল ফরম্যাট হিসেব করলে টেস্ট এবং ওয়ানডে। এই দুই ফরম্যাটের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত হিসেব করলে মাত্র ৪০ জন ক্রিকেটার তাদের অভিষেক টেস্টে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন। ওয়ানডেতে এই সংখ্যাটা ৬১ জন। সেখানে একই সঙ্গে ওয়ানডে এবং টেস্ট- দুটোর অভিষেকেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন শুধুমাত্র একজন। তিনি মুস্তাফিজুর রহমান।
এবার তার সামনে যে নতুন ইতিহাস সৃষ্টির হাতছানি, সেটা হলো ওয়ানডে এবং টেস্ট- দুই ফরম্যাটের অভিষেক সিরিজেই সিরিজ সেরা হওয়ার অনবদ্য সুযোগ। ওয়ানডে এবং টেস্ট- এই দুই ফরম্যাটে যেমন অভিষেকে কেউ এক সাথে ম্যাচ সেরা হতে পারেননি, এখনও পর্যন্ত টেস্ট এবং ওয়ানডে- দুই ফরম্যাটেরই অভিষেক সিরিজে সেরা হতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে মুস্তাফিজের সামনে। চট্টগ্রাম টেস্টের মত ঢাকা টেস্টেও যদি তিনি অসাধারণ কিছু করে দেখাতে পারেন, তাহলে ক্রিকেটের ইতিহাসে অনন্য এক নজিরই গড়ে ফেলবেন ২০ বছর বয়সী এই বাংলাদেশি তরুণ।
চট্টগ্রাম টেস্টে সুযোগ পেয়েই অসাধারণভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে বোলিং করে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছেন খুবই কম। ২১ রান দিলেও কোনো উইকেট পাননি। অর্থাৎ, ১ টেস্ট শেষে মুস্তাফিজের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৫৮ রানে ৪ উইকেট। গড় ১৪.৫০। টেস্ট ক্রিকেটে যে কোনো বোলারের জন্যই ঈর্ষণীয়। চট্টগ্রাম টেস্টের ধারা যদি ঢাকায়ও বজায় রাখতে পারেন, তাহলে তো মুস্তাফিজময় একটি সিরিজই হয়ে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
শুধু ম্যান অব দ্য সিরিজের ইতিহাসই নয়, আরও একটি একক এবং অনন্য ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে মুস্তাফিজ। সেটা হলো, ঢাকা টেস্টেও যদি তিনি ম্যাচ সেরা হতে পারেন, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটের ১৩৮ বছরের ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকের প্রথম দুই ম্যাচেই ম্যাচ সেরা হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মুস্তাফিজের সামনে। একই সঙ্গে এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ২০১৫ সালে আইসিসির সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য দাবিদার হলেন মুস্তাফিজুর রহমান।