রিচি বেনো কিংবা ‘ভয়েস অব ক্রিকেট’ যেটা বলবেন সেটাই চলবে। একটি তার পারিবারিক নাম, অপরটি তার অর্জিত। অস্ট্রেলিয়ান এই ক্রিকেট কিংবদন্তি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বপ্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ফরম্যাটে ২০০ উইকেট এবং ২০০০ রান করার কীর্তি গড়েন। অজিদের হয়ে খেলেছেন ৬৩ টি টেস্ট ম্যাচ! তার মধ্যে ২৮ টি ম্যাচেই অজিদের নেতৃত্ব দেন! মজার বিষয় হলো, বেনোর অধীনে অজিরা একটা টেস্ট সিরিজও হারেনি!
ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরে হয়েছেন ধারাভাষ্যকার। মাতিয়েছেন কণ্ঠ, বচনভঙ্গি আর অসাধারণ ক্রিকেটীয় জ্ঞান দিয়ে। কিন্তু এই লোকটি আর বেঁচে নেই। স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি আজ শুক্রবার অস্ট্রেলিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।
নিজের ক্যারিয়ারে বেনো বলে গেছেন অনেক মূল্যবান কথা, যেগুলো একজন ক্রিকেটার হিসেবেই নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সদ্যপ্রয়াত সাবেক এই ক্রিকেটারের বলে যাওয়া তেমনি কিছু উদ্ধৃতি নিয়ে আজকের আয়োজন।
১।ধারাভাষ্য দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা, বচনভঙ্গি তাকে সবার থেকে আলাদা করেছে। তাই ক্রিকেটের বাইরেও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা রেডিওতে অনেক উপস্থাপকই তাকে নকল করার চেষ্টা করতেন। এমনকি এমনও হয়েছে, রেডিওতে তাকে নকল করে কথা বলে বোঝানো হয়েছে, এটা রিচি বেনোই!! এসব নিয়ে সবসময়েই একটা উদ্বেগের মধ্যে থাকতেন। এ নিয়ে একবার বলেছিলেন,
‘আমার কাছে মনে হয়, আমি তখনই সবচেয়ে ভয় পাই যখন হঠাৎ কোন বানিজ্যিক রেডিওতে শুনতে পাই, কেউ আমার কণ্ঠ এবং বচনভঙ্গি হুবুহু নকল করে কোন পণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। আর বোঝাচ্ছে, রিচি বেনোই এটা বলছেন!’
২। অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সফল অধিনায়ক তিনি। দলের হয়ে খেলছেন ৬৩টি টেস্ট এবং অধিনায়কত্ব করেছেন ২৮টিতে। মজার কথা হলো, তার নেতৃত্বে একটি টেস্ট সিরিজও হারেনি অজিরা। তাই অধিনায়ক হিসেবে তিনি যে বেশ পোড়খাওয়া তাতে সন্দেহ নেই। অধিনায়কত্ব নিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন,
‘অধিনায়কত্ব হলো ৯০ভাগ ভাগ্য আর ১০ ভাগ দক্ষতা। তবে ঐ ১০ ভাগ না থাকলে আর অধিনায়কত্ব করতে যেওনা।’
৩। অধিনায়কত্ব নিয়ে তিনি আরেকবার বলেন,
‘একজন ভালো অধিনায়কের লক্ষণ হলো, ঠিক সময়ে টসে জেতা।’
৪। রিচি বেনো প্রায়ই মজা করতেন। কৌতুক করে একবার বললেন,
‘যখন আমার চুল অনেক বড় হয়ে যায়, কাটানোর মতো অবস্থা হয় তখন আমি কি করি জানো? আমি আমার বউয়ের হেয়ারড্রেসারের কাছে চলে যায়। এ জন্য আবার সে টাকাও নেয়!’
৫। রিচি বেনো তার সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন সাবেক অজি পেসার গেল ম্যাকগ্রাকে নিয়ে। সেবার ধারাভাষ্য দিচ্ছিলেন বেনো। ম্যাকগ্রা মাত্র দুই রানে আউট হয়ে গেলে তিনি বলে ওঠেন,
‘...এবং দুই রানে আউট হয়ে গেলেন ম্যাকগ্রা। মাত্র ৯৮ রানের জন্য তার সেঞ্চুরি হলো না।’
৬। টিভি রিপ্লে নিয়ে রিচি বেনো একবার বলেছিলেন,
‘স্লো-মোশন রিপ্লে এটা দেখায় না যে, গত দ্রুতগতিতে বলটি যায়!’
৭। নিজের দেশের স্যার জন ডন ব্র্যাডম্যান এবং ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। উভয়ের ব্যাটিং নিজের চোখে দেখেছেন বেনো। তার কাছে দুজনেই সেরা। এ নিয়ে একবার বলেছিলেন,
‘ব্র্যাডম্যানকে সহজের সেরা বলা চলে কিন্তু তারপরেই শচিন টেন্ডুলকার সেরা।’