চেয়েছিলেন সায়েন্স এর শিক্ষক হতে, কিন্তু হয়ে গেলেন ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক কোচ অ্যালন ব্রডার একদিন এক ব্যাটসম্যানের ধীরগতির প্র্যাকটিস করা নিয়ে রসিকতা করে বলেন, “৬ ঘন্টা ধরে খেলে যাচ্ছেন, কিন্তু আউট হচ্ছেন না।” এই কথার পর কোচকে আশ্চর্য করে দিয়ে ওই ব্যাটসম্যানটি ঠিকই ৬ ঘন্টা নেটে প্র্যাকটিস করলেন, অথচ একবার ও আউট হলেন না।
কে এই ব্যাটসম্যান ? প্রশ্ন জাগতেই পারে। তিনি মিঃ ক্রিকেট খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার সোনালী যুগের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাইক হাসি। পুরো নাম মাইকেল এডওয়ার্ড কিলেন হাসি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার। বামহাতি ব্যাটসম্যানরূপে তার সবিশেষ খ্যাতি রয়েছে। তুলনামূলকভাবে মাইক হাসি বেশ দেরীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে অস্ট্রেলিয়া দলের পক্ষ হয়ে অংশগ্রহণ করেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় যথাক্রমে ২৮ ও ৩০ বছর বয়সে। টেস্টে অংশগ্রহণের পূর্বেই তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৫,৩১৩ রান করে ফেলেন। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বেশ সফলকাম হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেট রেটিংয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে মাইক হাসি বিবাহিত। তিনি অ্যামি কে বিয়ে করেন ও তাদের সংসারে চার সন্তান রয়েছে। বাবা ছিলেন সাবেক অ্যাথলেটিক্স কোচ। ছোট ভাই ডেভিড হাসি পেশাদারী ক্রিকেটের সাথে জড়িত। ভিক্টোরিয়া, নটিংহ্যামশায়্যার, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এবং অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দলেরও সদস্য মাইক হাসি। বাবার সমর্থনের কারণে হাসি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের একনিষ্ঠ সমর্থক।
খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে মাইক হাসি ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন। কিন্তু অ্যালান বর্ডারের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শে বামহাতে ব্যাটিং করে সফলতা লাভ করেন। আইএনজি কাপে চমকপ্রদ ক্রীড়ানৈপুণ্যের পর ২০০৪-০৫ মৌসুমে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে হাসি’র আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ সফলতা লাভ করেছেন। জুন, ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫২.১৬ রান গড়ে টেস্টের ব্যাটিং গড় রয়েছে তার। মাঝে মাঝে মিডিয়াম পেস বোলিং করে থাকেন। সাধারণতঃ পেস বোলারদেরকে বিশ্রাম দিয়ে তিনি বোলিং করে থাকেন। ২৮ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে বক্সিং ডে টেস্টের ৩য় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার পল হ্যারিসকে মিচেল জনসনের হাতে ক্যাচ দেয়ার মাধ্যমে তিনি টেস্টে তার একমাত্র উইকেটটি লাভ করেছিলেন। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও তিনি দুইটি উইকেট পেয়েছিলেন।
৩ নভেম্বর, ২০০৫ সালে ব্রিসবেনের গাব্বায় পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় ব্যাটসম্যান জাস্টিন ল্যাঙ্গারের পরিবর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে অভিষিক্ত হন। ১৮ এপ্রিল, ২০০৬ সালে এক পঞ্জিকা মৌসুমে সবচেয়ে দ্রুততম হাজার রানের কোঠা অতিক্রম করেন। এ মাইলফলক অতিক্রমণে তিনি মাত্র ১৬৬ দিন ব্যয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি এলজি আইসিসি ক্রিকেট রেটিং খুব দ্রুত শীর্ষ দশে স্থান পান। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজ সিরিজে ১০৫.২৫ গড়ে রান করেছিলেন। ঐ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। এ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হাসি নিজস্ব ৫ম শতক অর্জনের মাত্র ৯ রান পূর্বে ৯১ রানে ম্যাথু হগার্ডের বলে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৮ ওভারে ১৬৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলে শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার দু’টি উইকেটের পতন ঘটে। ড্যামিয়েন মার্টিনের পরিবর্তে চার নম্বরে উত্তরণ ঘটিয়ে রিকি পন্টিং এবং তিনি শক্ত জুটি গড়েন। ৪৯ রানে পন্টিং আউট হলেও হাসি ৬১ রানে অপরাজিত থেকে জয়সূচক রানটি করেন। ঐ সময় তার সহযোদ্ধা ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক, যিনি ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
২০১২ সালের মেলবোর্নে আয়োজিত বক্সিং ডে টেস্ট শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাইক হাসি। সিডনী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ৩ জানুয়ারি, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত শ্রীলংকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেষ্ট ম্যাচ খেলেন মাইকেল হাসি।
‘মাইকেল হাসি’ ওয়ানডে ক্রিকেটে এক রুদ্রমূর্তির নাম। যাকে মিস্টার ক্রিকেট উপাধিতে ভূষিত করে ক্রিকেট বিশ্ব। পারফরমেন্স এ কতটুকু পূর্ণতা থাকলে একজন ক্রিকেটার থেকে মিঃ ক্রিকেট হওয়া যায়, তা বুঝে নিবেন। যখনই টপ অর্ডার ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়তো, তখনই মরুভূমিতে আটকে যাওয়া কোনো তৃষ্ণার্থ ব্যাক্তির তৃপ্তি ঘুচানোর মত অবতীর্ণ হতেন মাইকেল হাসি।
অস্ট্রেলিয়া, তথা বিশ্বের সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মাইকেল হাসি। এখনও অস্ট্রেলিয়া তার মত একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এর অনুপস্থিতি অনুভব করে।