অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে ব্রেট লি এর আগমণ তখন যখন স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া পুরো ক্রিকেট বিশ্বের উপর ছড়ি ঘোরাতে আরম্ভ করেছে। ম্যাকগ্রা, ওয়ার্নদের সাথে শুরু থেকেই ত্রাস ছড়াতে শুরু করেন তখনকার তরুন ব্রেট লি। তখনকার আরেক তরুন পাকিস্তানী শোয়েব আখতারের গতির রাজ্যে হানা দিয়ে দুইজন মিলে গতির প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেন। তবে শোয়েব আখতারের মত অধারাবাহিক ছিলেন না লি। ম্যাকগ্রা, ওয়ার্ন, গিলেস্পিদের সাথে বল করেও নিজের প্রাথমিক দিনগুলোতে তার বোলিং এভারেজ ছিল বিশের নিচে।
সবচেয়ে জোরে বলের প্রতিযোগিতায় শোয়েব আখতারের সাথে না পারলেও এক ওভারে সব কয়টি বল ১৫০ কিমির উপরে করার অনন্য নজির গড়েন তিনি। জোরে বল করার জন্য বারবার ইনজুরিতে পড়েছেন কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ দিনটি পর্যন্ত গতির সাথে আপস করেন নি। পায়ের পাতায় প্রচন্ড ব্যাথা নিয়েই খেলেছেন শেষ দুইটি বছর। তিনশতাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে সাতশর উপরে উইকেট শিকার করা ব্রেট লি যেমন ছিলেন পেশাদার তেমনি খেলাটাও উপভোগ করতেন। তার হিন্দি ভাষা শেখার অন্যতম কারণ নাকি ভারতীয়রা তাকে কি বলে স্লেজ করে সেটা বোঝা এবং জবাব দেয়া। নাহলে নাকি স্লেজিংয়ের মজাটাই থাকে না।
টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তার চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছে শুধু শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং ডেনিস লিলি। তার সাথে যোগ করুন ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ার ছোট হয়ে যাওয়ায় মাত্র ৭৬ টেস্ট খেলতে পেরেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক টিটোয়েন্টির প্রথম হ্যাটট্রিকটিও তার। প্রতিপক্ষের নাম বাংলাদেশ। প্রথম টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এই হ্যাটট্রেক করেছিলেন তিনি। সাকিব, মাশরাফি এবং অলক কাপালিকে ফিরিয়ে দেয়া সেই ম্যাচটি ছিল তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীও সেরা বোলিং।
বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটাও মন্দ করতেন না। টেস্টের ৫ টি অর্ধশত রানের পাশে ওয়ানডের ৩ টি অর্ধশত রানের ইনিংস ও সেই সাক্ষ্য দেয়। তবে তার সবচেয়ে বিখ্যাত ইনিংস হয়ে থাকবে এজবাস্টনের ৭৫ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংসটি। দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন নেমেছিলেন তখন ও জয় থেকে ১০৭ রান পিছিয়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে প্রথমে ওয়ার্নের সাথে ৪৫ এবং পরে শেষ উইকেটে ক্যাসপ্রোভিচের সাথে শেষ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়ে জয় যখন প্রায় ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন তখন ক্যাসপ্রোভিচ হার্মিসনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেয়ায় ২ রানে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া। টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচে খেলা শেষের পর ফ্লিনটফের সাথে ব্রেট লির ছবি স্পোর্টসম্যানশিপের উদাহরণ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে আছে।
তবে শুধু খেলা নয়, ভক্তরা তাকে মনে রেখেছে আশা ভোসলের সাথে গলা মিলিয়ে গান গাওয়ার জন্যেও। অস্ট্রেলিয়া ভারতের তিক্ত সম্পর্কের সময়টিতেও তিনি ভারতে ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। হয়ত সোনালি চুল ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে তার বল করতে আসার দৃশ্য, তার বোলিং একশন, তার আত্মবিশ্বাসের সাথে সাফল্যলাভের পর ভুবনভুলানো হাসিই ছিল সেই জনপ্রিয়তার কারণ।