‘দেখতে টারজানের মতো, কিন্তু প্লেয়ার হিসাবে কিছুইনা, ছাই’—অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত এক ক্রিকেট-লেখক একবার লিখলেন শেন ওয়াটসনকে নিয়ে। ৬ বছরে ১২ বার ইনজুরিতে পড়েন যিনি, তাঁকে নিয়ে আর কী-ই বা লিখবেন! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন খুব কমই উঠেছে। কিন্তু ক্যারিয়ারজুড়ে মাঠে যতটা থেকেছেন, তার চেয়ে বেশি সময় মাঠে ফেরার লড়াইয়েই তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। কারণ, সেই নাছোড়বান্দা ইনজুরি।
স্ট্রেস ফ্র্যাকচার, হিপ কমপ্লেইন্টস, হ্যামস্ট্রিংয়ে টান, কাফ, কাঁধের হাড় নড়ে যাওয়া, ফুড পয়জনিং—আরও কত বিচিত্র সব ইনজুরি! অথচ শৈশব কৈশোরে ইনজুরির সঙ্গে এত সখ্য ছিল না। বরং নজর কেড়েছিলেন সব্যসাচী ক্রিকেটার হিসেবে। কুইন্সল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলেছেন ১৫ বছর বয়সেই। রাজ্য দলে সে সময় তারকা ক্রিকেটারদের ভিড়। জায়গা পাওয়া কঠিন দেখে ১৯ বছর বয়সে চলে গেলেন তাসমানিয়ায়। খানেও ইনজুরিতে পড়ে এক মৌসুম শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। তবে এ সময় ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি কাজ করতে পেরেছেন, যা পরে তাঁর কাজে লেগেছে। ওয়াটসনের প্রতিভা বুঝতে পেরে সাবেক অস্ট্রেলিয়া পেসার টেরি অল্ডারম্যান তাঁকে দিয়েছেন প্রচুর সময়। ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের
দলে ডাক পেয়ে যান তাঁর স্বপ্নের ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বে। তাঁকে দেখে স্টিভ বলেছিলেন, কিথ মিলার ও অ্যালান ডেভিডসনের পর সত্যিকারের জেনুইন অলরাউন্ডার পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ওই সফরে অবশ্য টেস্ট খেলা হয়নি, খেলেছেন ওয়ানডেতে। এর পর থেকেই তো ইনজুরির সঙ্গে যুদ্ধ। ২০০৪-০৫ মৌসুমে আবার ফিরেছেন নিজের রাজ্য কুইন্সল্যান্ডে। একের পর এক ইনজুরিতে যতটা না আহত হয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি মুষড়ে পড়েছেন সমালোচনায়। পরমুহূর্তেই আবার চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় উঠে দাঁড়িয়েছেন নিজেকে প্রমাণের জন্য। ওয়াটসনের সবচেয়ে বড় সম্পদ—শক্ত মানসিকতা। ইনজুরির বলয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, নিজের ট্রেনিং পদ্ধতি পাল্টেছেন, অ্যালকোহল ছেড়েছেন, কিন্তু ছাড়েননি স্বপ্ন দেখা। তাই তো সারাজীবন মিডল
অর্ডারে ব্যাটিং করেও তিন ধরনের ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়ার মূল ওপেনার এখন তিনি। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং মিলিয়ে অজিদের বড় ভরসা।
ইনজুরি? পুরোনো এই ‘বন্ধু’র সঙ্গে আড়ি তো অনেক দিন তার পর ও যেন বন্ধু তার পিছন ছাড়ছেনা !
ব্রেট লি দৃশ্যপটের অনেকটাই আড়ালে চলে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ‘হট’ স্পোর্টসম্যান মনে করা হয় এখন তাঁকেই। সেই ক্রিকেট-লেখকের কাছে গিয়ে এখন তিনি দাবি করতেই পারেন, ‘শুধু দেখতেই নয়, আমি এখন সত্যিকারের টারজান।