মিচেল জনসন, সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহন করা অসি এই ফাস্ট বোলার হয়তো অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সাফল্য পাওয়া বোলারদের একজন নন। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনিই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলিং এ্যাটাকের সেরা স্ট্রাইক বোলার।
আধুনিক ফাস্ট বোলারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম দ্রুত গতির বোলার। তার ভয়ানক বাউন্সার এবং অফ স্টাম্পের বাইরের গুলির বেগের বলগুলো ছিলো অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের টেস্ট এবং ওয়ানডে দুইটিতেই অসিদের ৪র্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার। তবে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এটি একমাত্র মাপকাঠি নয়। অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে তিনি যে ম্যাচগুলো জিতিয়েছেন সেটিই তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ। গত আট বছরের টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে সবচেয়ে বেশিবার টেস্ট ক্রিকেটে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ পুরস্কার জিতেছেন। আর বিশ্ব ক্রিকেটে তার চেয়ে বেশিবার কেউ এই পুরস্কার জিততে পারেননি, তবে মোট ৯ বার ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার জিতে তার সাথে এই স্থানটি যৌথভাবে দখল করে আছেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন।
জনসন যে ম্যাচগুলোতে বেশি উইকেট পেয়েছেন তার বেশিরভাগ টেস্টেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। শুধু যে তিনি বেশি উইকেট শিকার করতেন তাই নয় তিনি সেগুলো নিয়েছেন বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যেও, ফলে অসিরা প্রতিপক্ষের দেয়া রান সহজে তাড়া করে জয় তুলে নিতে সক্ষম হতো। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা ৩৯টি টেস্ট জয়ে (যেখানে জনসন দলে খেলেছেন)জনসন মোট ১৯৮টি উইকেট শিকার করেন যার গড় ছিলো ২১.৭২। আর জনসনের খেলা যে টেস্টগুলোতে অস্ট্রেলিয়া হেরেছে সেখানে জনসনের উইকেট তোলার গড় ছিলো ৪০.৬৮।
জনসনের ৪২.২ স্ট্রাইক রেট চিত্তাকর্ষক। ম্যাচে তার সবসময় আগ্রাসী বোলিং করার মনোভাবের কারনে মাঝে মাঝে তিনি একটু বেশি রান খরচা করলেও উইকেট পাওয়া থেকে কখনোই তিনি বেশি দূরে থাকতেন না। ২০০০ সালের পর থেকে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন এবং ১০০-র বেশি উইকেট পেয়েছেন এমন ২৪ জন বোলারের মধ্যে শুধুমাত্র ডেল স্টেইন এবং মুরালিধরনের স্ট্রাইক রেট ছিলো জনসনের চেয়ে বেশি। আর অসি বোলারদের মধ্যে যারা ১০০-র বেশি উইকেট পেয়েছেন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র জনসনের আইডল ডেনিস লিলির স্ট্রাইক রেট ছিলো জনসনের চেয়ে বেশি।
২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারে স্বর্ণ যুগ চলছিলো বলা চলে। আর এই সময়টাতে তিনি স্পিন বা পেস যেকোন বোলারের চেয়ে ছিলেন বেশি সফল। এই সময়ে তার খেলা ১৯টি টেস্টে তিনি প্রতি ম্যাচে গড়ে ৫টি করে উইকেট শিকার করেছিলেন এবং এই সময়ে তিনি প্রতিটি উইকেটের জন্য গড়ে দিয়েছিলেন ২১ রান।
জনসনের আক্রমণাত্মক বোলিং ওয়ানডে ক্রিকেটে তেমন সহায়ক না হলেও তার উইকেট শিকার করার ক্ষমতা তাকে অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলেও বেশ উপকারি বোলার হিসেবে গড়ে তোলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০০৬ সালের পর থেকে যারা ৫০০ ওভারের বেশি বল করেছেন তাদের মধ্যে জনসনের ২৪.৯৯ গড়টি ছিলো ৬ নম্বর যা শুধুমাত্র ফাস্ট বোলারদের মধ্যে ছিলো ৩ নম্বরে। শুধুমাত্র মরনে মরকেল এবং নাথান ব্রাকেন গড়ের দিক থেকে তার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন এই সময়ে। আর ৩১.১ স্ট্রাইক রেট নিয়ে এসময়ে অজন্তা মেন্ডিস, মরনে মরকেল এবং ব্রেট লির পরেই ছিলো তার অবস্থান।
মিচেল জনসনের ক্যারিয়ারের আরো কিছু আকর্ষনীয় পরিসংখ্যান আছে। বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে জনসন টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ৪১২টি উইকেট নিয়ে এই তালিকায় প্রথমে রয়েছেন ওয়াসিম আকরাম আর ৩৫৫ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন চামিন্দা ভাস।
বিশ্বের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দুইবার আইসিসির প্লেয়ার অব দ্যা ইয়ার এ্যাওয়ার্ড জিতেছেন জনসন। তিনি ছাড়া এই গৌরব অর্জন করা আরেক ক্রিকেটার হলেন তার স্বদেশি রিকি পন্টিং, তিনিও তার ক্যারিয়ারে দুইবার এই পুরস্কারটি জেতেন।
২০১৩-১৪ এ্যাশেজ সিরিজে মোট ৩৭টি উইকেট নিয়ে তিনি এ্যাশেজের ইতিহাসে একই সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেন। এর আগে ১৯৮৯ সালে টেরি এ্যালডারম্যান এ্যাশেজের এক সিরিজে সর্বোচ্চ ৪১টি উইকেট শিকার করেছিলেন।
টেস্টে ৩১৩টি উইকেট শিকারের পাশাপাশি ২০৬৫ রানও সংগ্রহ করেছেন জনসন। অসিদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং বিশ্ব ক্রিকেটে ১৩তম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি টেস্ট ক্যারিয়ারে ৩০০-র বেশি উইকেট এবং ২০০০-র বেশি রান করার গৌরব অর্জন করেন।
২০০৮ সালে পার্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি মাত্র ৬১ রানের বিনিময়ে তুলে নেন ৮টি উইকেট যা টেস্ট ক্রিকেটে বাঁহাতি ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং ফিগার।
নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারে টেস্টের ৪র্থ ইনিংসে মোট ৮০টি উইকেট পেয়েছেন জনসন যা টেস্ট ক্রিকেটে কোন ফাস্ট বোলারের ৪র্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট। ১০৩টি উইকেট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।