“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তাঁর নর”
কবি নজরুল এ কথা বলে গেছেন বহু বছর পূর্বেই। কিন্তু সামাজিক, পারিপার্শ্বিক অনেক কারণেই নারীরা আজও বিশ্বের অনেক জায়গাতেই নিগৃহীত। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তাও কিন্তু নয়। হেরে যাওয়ার মনোভাব ছুড়ে ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন সব বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে এমন নারীর সংখ্যাও কম নয়। আর তাঁরাই বর্তমানের নারীদের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারেন। “ফোর্বস” এর গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন অঙ্গনে সফল নারীদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী দশ ক্যারিয়ার লেসন জেনে নিন নিজেকে ক্যারিয়ারে আরো বেশি আত্মপ্রত্যয়ী, আরো বেশি সফল করে তোলার পথেঃ
১। ভোরে ঘুম থেকে উঠুন
স্টারবাকস এর প্রেসিডেন্ট মিশেল গ্লাস প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করতে যান। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন “ভোগ” এর বহুদিনের সম্পাদক অ্যানা উইনটোর’কে কাজ শুরু করার আগে প্রতিদিন ভোর ছটায় টেনিস কোর্টে দেখা যেতো। এসব সফল নারীরা দিন শুরু করতেন খুব ভোরেই।
২। মধ্যস্ততায় অংশ নিন সমসময়
এক গবেষণায় দেখা যায় যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় মধ্যস্ততা এবং এর মাধ্যমে সফলতা অর্জনে তুলনামুলকভাবে কম পারদর্শী। এই কারণে অনেকসময় নারী ও পুরুষের উপার্জনেও পার্থক্য দেখা যায়। এই পারদর্শিতা সাফল্যের পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই নিজেকে এইকাজে পারদর্শি করে তোলা ক্যারিয়ারের এক অন্যতম চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
৩। প্রতিনিধিত্ব করুন
হোটেল ব্র্যান্ড “ফোর সিজনস” এর সিইও কেটি টেইলর বলেন যে তিনি নিজে নেতৃত্ব কিংবা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছুটা খেয়ালী। তবুও তিনি তার কাজের জায়গায় চারপাশে প্রতিনিধিত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করেন পুরোদমে।
৪। পরামর্শদাতা বাছাই করুন এবং তাঁদের সর্বোচ্চ বের করে নিন নিজের মতো
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এর চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ বলেন, নিজের মতো করে কাজ শেখার জন্য মেন্টর বাছাই করে নিন। খুব সাধারণভাবে নেটওয়ার্কিং তৈরি করুন তাঁর সাথে। সম্পর্কটা সুন্দর ও হালকাভাবে বজায় রাখুন। এভাবে যখন সুযোগ আসবে, নিঃসন্দেহে তাঁরা আপনাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে, আপনার হয়ে সুপারিশ করবে।
৫। সবসময় অনুসন্ধিৎসু থাকুনঃ
কৌতুহলী থাকাটা নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখাতে, নতুন কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। “ডিজনি মিডিয়া নেটওয়ার্ক” এর কো-চেয়ার “ডিজনি-এবিসি টেলিভিশন গ্রুপ” এর প্রেসিডেন্ট এনি সোওয়েনি নিজেকে ‘কৌতুহল দ্বারা পরিচালিত’ বলে ব্যাখা করেন। তিনি আরো বলেন,
“সবচেয়ে করিৎকর্মা হতে হলে আপনি যা করতে পারেন তা হলো সবসময় প্রশ্ন করে যাওয়া”।
৬। শুনতে হবে সবার কথা
প্রত্যেকের কথা মন দিয়ে শুনতে চেষ্টা করুন। একেকজনের কাছ থেকে একেক রকমের তথ্য নিঃসন্দেহে জ্ঞান এবং কাজের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করবে। তাই বলার চাইতে শোনার ক্ষমতা ক্যারিয়ারে সফল হতে অনেকবড় ভূমিকা রাখে।
৭। ক্যারিয়ার গোল সেট করুন
“ক্যাম্পবেল’স সুপ” এর সিইও ডেনসি মরিসন তাঁর যুবা বয়সেই ঠিক করেন যে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কাজই করবেন। তিনি বলেন প্রথমেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেওয়া উচিৎ। তা হোক স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী।“আমি এখন কোথায় আছি?”, “আমি এখন কোথায় যাচ্ছি?” এবং “কেন যাচ্ছি” এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়াটাকে ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরেন তিনি।
৮। সাহসী হোন
“প্রথমে তোমাকে ঠিক করতে হবে যা তুমি কি করতে চাও, আর তারপর সাহস করে তার পেছনে লেগে পড়তে হবে”- “কিইকর্প” এর সিইও বেথ মুনি এমনটাই বলেন ক্যারিয়ার সম্পর্কে। ব্যর্থতা থাকতেই পারে, কিন্তু তাই বলে পিছিয়ে না পড়ে সাহস সঞ্চয় করতে হবে। একসময় সফলতা আসবেই।
৯। “না” শন্দটির সাথে মানিয়ে নিন
নিজেকে “না” শব্দটির সাথে মানিয়ে নিন। মাঝে মাঝে আপনাকে এটি শুনতে হতে পারে, আবার মাঝে মাঝে কাউকে হয়তো আপনার না বলতে হবে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আরথারিন কাজিন বলেন, “না শব্দটি উচ্চারণ নারীর জন্য অনেক কঠিন একটি শব্দ, একে অনুশীলণের মাধ্যমে সহজ করে নিতে হবে।
১০। অধ্যবসায়ী ও স্থির হোন
যেকোন সফলতার জন্যই অধ্যাবসায় অনেক বড় একটি বিষয়। নারীদের ক্যারিয়ারে এটি আরো বেশি প্রয়োজনীয়। তাই অধ্যাবসায় বজায় রেখে স্থির থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সাফল্য আসবেই।