মানুষ ৫৫ বছর বয়সে পৌঁছতেই মানসিক ক্ষমতায় দুর্বল হতে থাকে। ভুলতে থাকে অনেক কিছু। ৬৫ তে গিয়ে সেটা রূপ নেয় আলঝাইমার রোগে। তবে বয়সভেদে এমনটা হলেও কমবয়সী মানুষের ভেতরেও থাকে নানারকম অদ্ভুত, আজগুবী আর বোকামি করে ফেলার প্রবণতা। অনেকটা অনিচ্ছাবশতই দৈনন্দিন জীবনে নানারকম বোকামি করে থাকি আমরা। ভুলে যাই অনেক কিছু। এই যেমন মাথায় চশমাটা রেখে পুরো ঘরে খুঁজে বেড়াই সেটা! কিন্তু এটা স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও প্রতিরোধযোগ্য। দি নিউ ইয়র্ক টাইমসে ওয়েইল করনেল মেডিকেল কলেজের ক্লিনিকাল সাইকিয়াট্রির প্রফেসর রিচার্ড ফ্রাইডম্যানের লেখা অনুসারে বর্তমান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিছু উপায় রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা নিজেদের মস্তিষ্ককে চটপটে করে তুলতে পারবে। চলুন আর দেরি না করে জেনে নিই উপায়গুলো।
১. বুদ্ধির খেলা
প্রতিদিন খবরের কাগজে কত-শত বুদ্ধির খেলাই তো দেওয়া থাকে। এছাড়াও রয়েছে কেবল এই বিষয়ের ওপর লেখা বই আর ম্যাগাজিন। সেগুলোর চর্চা করুন নিয়মিত। এতে করে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে আপনার মস্তিষ্ক। তবে ফ্রাইডম্যানের কথানুসারে একটি ব্রিটিশ গবেষনায় দেখা যায় যে, এসব বুদ্ধিবৃত্তিক খেলায় নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মানুষের মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বুদ্ধির সেরকম উন্নতি হয়না। ( বিজনেস ইনসাইডার)
২. নিজেকে বিশ্বাস করা
বিজনেস ইনসাইডারের মতে, কম বয়সীদের ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতাকে উন্নত করার ব্যাপারে বিশ্বাস করানোটাই তাদের ভেতরে এমন একটি ভাব তৈরি করে যে যে কোন বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষাতেই ভালো করে তারা। আর তাই নিজের ওপর এমনটা বিশ্বাস আনাটাই তাদের মস্তিষ্ককে অনেকটাই সামনে এগিয়ে নিতে আর ভালো কাজ করতে উত্সাহিত করতে পারে।
৩. শরীর ও মননচর্চা
শরীর আর মনের চর্চা, অর্থাৎ ব্যায়াম আর যোগব্যায়াম হতে পারে মস্তিষ্ককে আরো বেশি সক্ষম করে তোলার বেশ ভালো একটা উপায়। যোগব্যায়াম অনেক আগে থেকেই মানুষের জীবনে জড়িয়ে গিয়েছে। এটি মানুষের শারিরীক নানা সমস্যা দূর করে, মনকে শান্ত হতে সাহায্য করে তা ঠিক। তবে যোগব্যায়াম চর্চাকারীদের এফএমআরআই স্ক্যান করে দেখা যায় যে যোগব্যায়াম মানুষের মস্তিষ্কের গঠনকেও প্রভাবিত করে। তার মনযোগ, স্মৃতিশক্তি আর কর্মক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে ( হাউ স্টাফ ওয়ার্কস )। আর শরীর চর্চার কথা বলতে গিয়ে মেরকোলা.কম জানায়- শরীরচর্চা স্নায়ুকোষগুলোকে বাড়িয়ে, তাদের যোগাযোগ আরো শক্তিশালী করে এবং সেগুলোকে ধ্বংস হওয়া থেকে সুরক্ষা দিয়ে আপনার মস্তিষ্ককে একটা সর্বোচ্চ ক্ষমতার পর্যায়ে পোঁছে দেয়। এছাড়াও শরীরচর্চা মস্তিষ্কের স্নায়ু রক্ষাকারী উপাদান উত্পাদন করে, মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়, মস্তিষ্কের নানারকম প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
৪. ব্যাকটেরিয়া
২০১০ সালের জুন মাসে সাগা কলেজের গবেষকেরা জানান যে নোংরার ভেতরে থাকা ইদুরদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে পাওয়া গিয়েছে যারা ইদুরদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আর সেটা সম্ভব মানুষের ক্ষেত্রেও। তবে এ জন্যে ময়লার ভেতরে থাকতে হবে না আপনাকে। বাগান পরিষ্কার কিংবা ঐ ব্যাকটেরিয়াগুলোকে শরীরে নিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেও এটি সম্ভব।
৫. খাবার ও ঘুম
ঘুম মানুষের মানসিক উন্নতি দীর্ঘস্থাযীভাবে না করলেও কিছুটা সময়ের জন্যে করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষনায় বলা হয় ঘুমোবার পরে মানুষ নিজেদের মস্তিষ্কের ভেতরের যোগাযোগকে আরো ৩৩ শতাংশ বেশি কাজে লাগাতে পারে ( মারকোলা )। এছাড়াও মস্তিষ্ককে ঠিকঠাক কাজ চালাতে হলে গ্লুকোজকে শক্তিতে পরিণত করে নিতে হয়। তবে গ্লুকোজ মাঝে মাঝে নিজ থেকে কম উত্পাদিত হয় মস্তিষ্কের ভেতরে। সেক্ষেত্রে নারকেল তেল বেশ ভালো টনিক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও দেখা গিয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ওমেগা৩ স্নেহ হতে পারে আপনার মস্তিষ্ককে আরো বেশি কর্মক্ষম করার উপায়!
৬. গান ও সুসম্পর্ক
গান আপনার মস্তিষ্ককে অনেকটা শান্ত রাখতে পারে। এছাড়াও হার্ভার্ডের এক প্রফেসরের গবেষনায় পাওয়া যায় যে ভালো সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা মানুষের মস্তিষ্কও ভালো আর দ্রুত কাজ করে ( বিজনেস ইনসাইডার )। মানসিক স্বাস্থ্যকেও অনেক বেশি সুস্থ রাখে আমাদের সুসম্পর্কগুলো।